Breaking News
Home / Breaking News / দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

কবিতা–আজকাল হাল বড়ই বেহাল
কলমে— বিকাশ সাহা,
“২১-১২_২২”
***********************
বোমবাগড়ের রাজা মশাই
বসেছে আজ গদিতে
দেশ শাসনের নামে শুধু
টাকা ভাসায় নদীতে

দেশের সেবায় নিমজ্জিত
চিন্তা করেন অপার
লেখা পড়ার পাট চুকিয়ে
করেন মদের ব্যাপার

আলু পেঁয়াজ শাক সজী
এসব আকাশ ছোঁয়া
গাঁজায় বসে দম দেন রোজ
উড়িয়ে শুধু ধোঁয়া

শিক্ষা দীক্ষা চুলোয় যাক সব
হবে কি এসব দিয়ে ??
কালো অক্ষর মোষের সমান
জীবন চলে কি এসব নিয়ে??

গুন্ডামি হোক নষ্টামি হোক
শিল্প যাক সব ভেস্তে
রাজা বলেন আমার ভাঁড়াউরে
টাকা ভরুক আস্তে আস্তে।।

মন্ত্রী আমলা ঘাড় নেড়ে যায়
রাজার কথা মত
দেশ টা সব চুলোয় যাক
জলে ডোবার মত।।

দেশে এখন অরাজকতা
গন্ডগোল আর অশান্তি
তেলা মাথায় তেল দিয়ে যায়
মন্ত্রী অমলা আর শান্ত্রী

গরীব মানুষ হয় যে গরীব
রাজার নেই যে কোন ভাবনা
বলেন উনি ঘুগনি বেচো
না করে আর কান্না !
——————————————–

নতুন সকাল
ডোনা সরকার সমাদ্দার
21/12/2022

আজ নিজেকে খুব ঝরঝরে লাগছে
কঠিন শীতের চাদর ধীরে ধীরে সরে
নতুন সূর্য উঁকি মারছে আকাশে।
নিজেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে চলেছি।
যে সব শ্বাপদ হায়নার দল আঁচড়াচ্ছিল
আজ তারা কোণঠাসা।

মনের মণিকোঠায় অদ্ভুত এক তৃপ্তি।
আজ আরশি হাসছে নির্মল হাসি
আমার ছবি সামনে রেখে।
অদ্ভুত এক কথা বলল আমার কানে কানে
‘ বন্ধুর পথে হেঁটেছো বহুকাল
এখন একটু জিরিয়ে নাও।
নতুন সকাল প্রত‍্যাশার সকাল।
যা পেতে তোমাকে দেখতে হয়েছে
অনেক প্রতারিত রাত’।
——————————————–
বিষয় — ছোট গল্প
শিরোনাম — মাতৃছায়া
কলমে — ইতি ঘোষ
বড়ো বউ বড়ো বউ কোথায় তুমি ? সারাদিন কি এমন রাজ কাজে ব্যাস্ত থাকো ? বার বার বলেছি আমি যখন কাজে বেরোব সব দিক খেয়াল রাখবে । মিনতি হাতের কাজ ফেলে স্বামীর চিৎকার শুনে দৌড়তে দৌড়তে এসে ভয়ে ভয়ে বলে কি হয়েছে বেরোবার সময় মাথা গরম করছ কেন ? আর বেরোনো , সাধে কি আর মাথা গরম করি ? এই সক্কাল বেলা কাজে বেরোবার সময় এই অপয়া টাকে কে বারান্দায় বসিয়ে রেখেছে ? বার বার তোমাকে বলেছি আমি যখন কাজে বেরোব এর মুখ যেন দেখতে না পাই । আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল সব মাটি হয়ে গেল । ইচ্ছে করে এটা করা হয় বুঝেছ ? ছোট বউ দরজার পাশ থেকে ভয়ে ভয়ে বলে ঘরেই তো ছিলো কখন বেরিয়ে এসেছে —- কথাটা শেষ হবার আগেই নিশিকান্ত কঠিন গলায় বলে ওঠে সে কথা এখন বললে তো শুনবো না ছোট বউমা । আমি আগেই বলেছিলাম এই আপদ কে ভালোয় ভালোয় বিদায় করো , সে কথা তখন তোমরা শুনেছ ? মেজো ভাই রমাকান্ত তড়িঘড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বাজখাঁই গলায় বলে ওঠে এরা শুনবে না দাদা শুনবে না। ভালো কথা শোনার পাত্র এরা নয় । বড় বউ ঝামেলা বন্ধ করার জন্যে রুষ্ট ভাবে বলে এখন থামো না মেজো ঠাকুরপো । দেখো বৌদি সকাল বেলা তাদের নাম করতে চাই না কিন্তু যে দিন ওটাকে ঘর থেকে হির হির করে টানতে টানতে নিয়ে যাবে সেদিন এই পরিবারের মান সম্মান কোথায় থাকবে ভেবে দেখেছো ? এই কিছু দিন আগে আমি কাজে বেরোনোর সময় দেখি বারান্দায় মাদুর পেতে মুখে একটা রুমাল চাপা দিয়ে শুইয়ে রেখেছে । মুখে রুমাল দেওয়া না দেওয়া সমান কথা । মুখে রুমাল থাকে ? সুধাকান্ত মাথা নীচু করে বলে ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই আমি মুখে রুমাল চাপা দিয়েছিলাম । রমাকান্ত ছোটো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলে সে দিনের যে সব কাজ আমার বরবাদ হয়ে গেল তার কি হবে সেটা বল ? শীলা মাথা নীচু করে দরজার পাশে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে । মেজো বউ শোভা এসে শীলার কাঁধে হাত রেখে বলে এদের কিছু বলে লাভ নেই রে , এরা মায়ের মন বুঝবে না । টিপু কে নিয়ে ঘরে চলে যা ছোটো । শীলা কোনো রকমে টিপুকে নিয়ে ঘরে ঢুকে বুকে চেপে ধরে ঝর ঝর কেঁদে ফেলে । সুধাকান্ত ঘরে এসে রাগে ফেটে পড়ে । কঠিন গলায় স্ত্রীকে বলে নাও এখন বোঝো ? তখনই বলেছিলাম পাঁচ জনের সংসারে একে রাখা যাবে না । তখন শুনলে না আমার কথা । আমি জানতাম এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে । আজই আমি ওদের খবর দেবো , ওরা যেনো এসে নিয়ে যায়। নিত্য এই অশান্তি আমার সহ্য হচ্ছে না। আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো । রাগ করে স্বামীকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে শীলা ভেবে পায় না এখন সে কি করবে । টিপু কে বুকে জড়িয়ে ধরে ভাবে সন্তান যেমনই হোক তবু তো সে মা । কোন প্রাণে নিজের সন্তানকে ওদের হাতে তুলে দেবে ? শীলা জানে ওরা জানতে পারলে তার কোল থেকে টিপুকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে পরে লোকের বাড়ি নাচ গান করাবে । না , মা হয়ে সে কিছুতেই এটা হতে দেবে না । এটা গ্রাম বলে মানুষের মনে এতো কুসংস্কার , একটা নিরপরাধ শিশুকেও এরা মেনে নিতে পারছে । এই অস্বাভাবিক শিশুকে জন্ম দিয়ে প্রতিনিয়ত আমাকে এতো গঞ্জনা শুনতে হচ্ছে কিন্তু তাই বলে মা হয়ে কিছুতেই আমি আমার সন্তানকে বিসর্জন দিতে পারবো না ।

শীলা বোঝে সুধাকান্ত টিপুকে খুব ভালোবাসে কিন্তু বাড়ির লোকের অমানুষিক ব্যাবহারে ওর মন বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে । সত্যিই যদি খবর দিতে যায় ? শীলা মনস্থির করে ফেলে যা করতে হবে তাকে আজ রাতের মধ্যেই করতে হবে । শীলার মনে পড়ে গেল একবার একটা খবরের কাগজে পড়েছিল যে এখন আর নপুংসক হয়ে জন্মালেই বাড়ি বাড়ি নেচে গেয়ে বেড়াতে হয় না । সরকার থেকে ওদের জন্যে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । অনেক কথা শুনতে হয় এমন সন্তান জন্ম দেবার জন্যে। রাগে দুঃখে শীলা প্রতিজ্ঞা করে আমি আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিজেই গড়ে তুলবো । পর দিন সকালে বাড়িতে হৈ চৈ পড়ে গেলো । কাউকে না বলে ছোট বউ টিপুকে নিয়ে বাড়ি থেকে কোথায় চলে গেছে । অনেক অনুসন্ধান করেও ছোটো বউ এর কোনো খোঁজ পাওয়া গেলো না। কুড়ি বছর হয়ে গেল শীলা এক মফস্বল এর আশ্রমে রান্নার কাজ করে । এই আশ্রমের মাতাজী তাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে আশ্রয় দিয়েছিলেন । শীলা মাতাজীর প্রতি কৃতজ্ঞতা বশত আশ্রমের রান্নার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল । তার দুঃখের কথা , তার অপাংক্তেয় মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলার প্রবল ইচ্ছা আর জেদ দেখে মাতাজী শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছিলেন । তিনি কথা দিয়েছিলেন শীলার ইচ্ছাকে তিনি পূর্ণ মর্যাদা দেবেন । মাতাজী তার কথা রেখেছেন । বহু ঝড় ঝঞ্ঝা অতিক্রম করে সমাজে তার অচ্ছুত মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করতে পেরেছে মাতাজির সহায়তায় । তার বৃহন্নলা মেয়ে আজ লেখাপড়া শিখে সরকারী চাকরী করছে । তাদের মত যে সব মানুষ যাদের প্রতি সমাজ মুখ ঘুরিয়ে থাকে তাদের জন্যে সে অবিরত কাজ করে চলেছে । আজ মা মেয়ে দুজনে একটা সুন্দর জগৎ গড়ে তুলেছে ।
——————————————–
সুতোয় বাঁধা জীবন
মোঃ আপন ভূঁইয়া
২১/১২/২০২২
…………………………….

নকশী কাঁথার সেলাইয়ের ফোঁড়ের মতো
গেঁথে আছি কোথাও-
সুতায় বাঁধা জীবনের মতো
কোথাও আটকে আছে ডানা।

পিছুটানের বন্ধনে আবদ্ধ,
আটকে আছি আঠার মতো
রূপ সাগরের মায়াজালে।
নেই কারো জানা!

হাতের নাগালে মধুমতী
ছুঁতে আছে মানা।
অভাগী চোখের জলে ভাসে!

খোলা- ডোর, জানালা,
উঁকি মারবার বারান্দা,
রঙ্গিলা ঘুড়িরা উড়ছে মুক্ত আকাশে
তবুও উড়তে আমার মানা।
——————————————–

কবিতা ——-

কেউ ছিলো প্রতীক্ষায়
আবদুল্লাহ আল মামুন আবিদ

রচনাকাল — ১৭ ই ডিসেম্বর ২০২২ খ্রীস্টব্দ —
সময়—— রাত ৯.৩০ ঘটিকা ।

জমে থাকা নরক আলো নেভাতে গিয়ে মুষড়ে পড়ি,
পাষাণ প্রাচীরে ফাঁদ পেতে আছে নিস্তব্ধতা!
সাহসের ওপর ভর করে কিছুটা সামনে এগিয়ে যায়
তেড়ে আসে প্রকম্পিত অজানা ভয় –।

দৃষ্টি জুড়ে গিরিখাতের ধোঁয়া!
বাঁচার আকুতি-আর্তচিৎকার কাঁপুনি দেয় শরীর জুড়ে
সরে আসি আবার ঠিক পুরনো কুটিরে —-।

হতবাক গলার স্বর অস্পষ্ট!
দক্ষিণের জানালা খোলা স্পষ্ট বুঝা যায় কেউ ছিলো এখানে —-!
ছোট্ট কুটিরের দেয়ালে কান্নার প্রলেপ।

ছিলাম না কিছুকাল এই মায়ার পরিচিত সংসারে,
বিছানা বালিশ তছনছ – মাটির প্রদীপ পড়ে আছে
তবে কি কেউ ছিলো এখানে আমার প্রতীক্ষায়?

দাঁড়িয়ে আছি স্মৃতির নির্মল নিষ্পাপ পাহাড় ধরে
দূর থেকে বেরিয়ে আসে আজানের ধ্বনি!
আয়ুর মোম ক্ষয়ে কখন সন্ধ্যা নেমেছে খেয়াল করিনি।

চতুর্দিকে পাহাড়ঘেরা অন্ধ রাত্রি কষ্টের ঘাস বুনে,
মাতম তুলছে বিচ্ছেদের অবর্ণনীয় স্রোতের ঢেউ
অনুভবের আকাশ ভেঙে নামে কষ্টের শ্লোক !
বাতাসে ভেসে আসে অনুভূতির পোড়া ভ্যাপসা গন্ধ।

দৃষ্টির আড়ালে মায়া ফড়িং এর ছুটে চলা,
বাতাসের ছন্দ মিশে গেছে মাতমের প্লাবনে —।
——————————————–
বি‌য়ে বাড়ি
আবু তাহের, ২২।১২।২০২২

চলে আ‌য়োজন- সাজ সাজ র‌ব,
আঙিনায় মুখ‌রিত স্বজ‌নেরা সব।
গ‌ল্পে মশগুল পুরুষ আর নারী,
শিশু কিশোরেরা মাতায় বাড়ি।
কাজের বাটোয়ারা মন আনন্দে,
অতিথি বরন চলে প্রীতি সানন্দে।

বাবার ব্যস্ততা গণিতের খাতায়,
মা‌য়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সাজ সজ্জায়।
ভাইয়ের তর্ক মুদি কারবারি,
বোনের দৃষ্টিতে শাড়ি আর চুড়ি।
খালা-খালু, মামা আর মামী,
ফুফা-ফুফু, চাচা আর চাচী,
দাদা-দাদী, নানা আর নানীর
হীরক মূল্যের উপদেশ বাণী,
আয়োজনে দেয় পূর্ণতা আনি।
অনাহুত কতকের উৎসুক দৃষ্টি,
দুধে চোনাতে করে অনাসৃষ্টি।
বরের দৃষ্টিতে মিষ্টি কুহক হাসি,
আপন কুঁটির হবে কনের খুশি।
বিদায় ক্ষণের সানাই সুর ধ্বনি,
বিষন্নক্ষণের স্বর, কণ্ঠ কাঁপানী।
এক ঘর নয়নে খুশি ঝলমল,
এক ঘর নয়নে জল ছলছল।
এক ঘর ছাড়ি আরেক ঘরে পাড়ি,
সুখ দুখ আবেশের বিয়ে বাড়ি।
———–

Powered by themekiller.com