Breaking News
Home / Breaking News / দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

ফুটবল বেলা
আবু তা‌হের, ২৫।১১।২০২২

পাড়ার যত কচি কিশোর
জোট বেধেছে, এক হয়েছে
ক্ষুদ্র চাঁদায় বল কিনেছে
খেলবে খেলা ঠিক করেছে
বিশ্ব সেরা প্রিয় খেলা বল।

ঝুম বাদলে, ভর দুপুরে,
সাঝ গড়ালেও,
যাবে না কেউ,
তেপান্তরের মাঠ পাথারে,
খুব দাপিয়ে, মন মাতিয়ে,
কচি ঘাসের বিছানাতে
খুব গড়িয়ে, সব মাড়িয়ে
খেলবে তারা, পরবে সারা
দেখবে সবাই
কচি ডাটো’র পায়ে পায়ে
নাচছে ফুটবল।

টনি জনি মনি রনি
অরুণ বরুণ কিরণ সবুর
জামাল কামাল টিপু,
ওরা এগারো জন।

সাগর বাদল শান্ত সায়ন
হিমেল কমল তপু অয়ন
অপু নিপু শ্যামলের দল
পণ করেছে খেলা দিয়েই
রাঙাবে সব মন।

খেলা যখন শুরু হলো
কিশোরেরা উরু উরু,
উত্তেজনায়
দর্শকের বুক দুরু দরু।

ঐতো অপু দৌড়ে গেল
বরুণের বল কেঁড়ে নিল,
অরুণটাও সামনে এলো
কিরণটাও নিল তার পিছু,
একটু শুধু পায়ের যাদু
এ পা ও পা বলটা ঘুরে
বলটা পেল ফরওয়ার্ড নিপু।
সামনে শুধু গোলকিপার
কিকটা নিবে সে এবার।
উঠলো ধ্বনি হতাশার,
আহ! ইশশশ!
কোত্থেকে যে ছুটে এলো
বিপক্ষের ব্যাক টিপু।
হলো না গোল,
হলো না গোল; ইশশশ! মিস!

কিশোর বেলার ফুটবল খেলা
আজকের দিনে কই ?
আজকে কোথায় মুক্ত মাঠে
কিশোরের হৈচৈ ?
মাঠের সেই উত্তেজনা
আজকে আর নেই,
যান্ত্রিকতা নিয়েছে কেঁড়ে
স্বর্ণ যুগের খেই।
আজকে শুধু হাতের মুঠোয়
তরঙ্গ তোলে ঢেউ।
কিশোর এখন একলা একা
সঙ্গী নেই তার কেউ।

আজ চার দেয়ালের বদ্ধ খাঁচায়
বন্দি কিশোর বেলা,
আজ কিশোরের নেই আর সেই
উত্তেজনার খেলা,
নেই তার আর
সেই ফুটবল বেলা।

ইচ্ছে করে ফিরে যেতে
সেই অতীতের কোলে,
মনটা শুধু চায়,
সুখ অনিলের
একটু ছোঁয়া দিতে,
কিশোর করকমলে,
কিশোর কদম মূলে।

——————————————–

বিভাগ:কবিতা
শিরোনাম: সহজিয়া
কলমে: শ্যামল কুমার মিশ্র
২৫-১১-২০২২

রাত্রির নিশীথে ঘুম ভাইঙ্গা যায় মালতির
মরদটারে জড়াইয়া ধইরা কয়–
আমরা ফিইরা যাই চল আমাদের গ্রামে
এত ফ্লাড লাইটের মাঝে
আমাদের সহজিয়া গান কি কইরা আইব কও

উদাস হইয়া যায় মালতী
ঐ শুন গো কত্তা
মাদল ধামসা বাইজছে
চারিদিক দেখ কেমন ফর্সা হইয়া গ্যাছে
জ্যোৎস্না ছড়াইয়া পড়ছে
শিলাই পারে ছাতিম তলে
ওই দেখ..দ্যাবেন বিমল গীতা সুরেন
মরদগুলার চোখে যেন কিসের নেশা
ওরা গান কইরছে..সহজিয়া গান
গীতা সবিতা রুমি রিনি ওরা গানের তালে তালে নাইচছে
ওই জীবনটা বড় ভালো গ কত্তা
আমাগো ভাতের কষ্ট আছে ঘরের অভাব আছে
কিন্তু দিনশেষে আনন্দ ছ্যাল

তুমি রেতের বেলা
পাড়া নিঝুম হইলে
ছাতিম তলায় বইসতে
কত গান বাঁইধতে
বাঁশিতে সুর তুইলতে
সহজিয়া গানের সুর ছড়াইয়া পইড়লে
আমি আর ঘরে লইতে লারি
গাছকোমরে কাপড় জড়াইয়া
লাইচতে শুরু করতাম
তুমিও গাইতে গাইতে আমায় জড়াইয়া ধইরতে
চাঁদ এসে মুদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাইত

সব যেন আজ স্বপ্ন মনে হয়
বাবুরা আমাদের ইখানে আনল
এত আলোর মাঝে রাখল
ভাল খাবার বি দিল
কিন্তু গান হারাইয়া গেল
চাঁদ হারাইল, ছাতিম হারাইল
সহজিয়া চইলা গেল
আমাগো আঁধারিয়া হারাইয়া গেল

চুপ কইরা যায় মালতি
সুদাম ওর হাতটা ধরে
ধীরে ধীরে বুকের কাছে টাইনা লইয়া কয়–
তাই চল মালতি
আমরা আঁধারিয়া ফিইরা যাই
আবার গান বাঁইধব
ধামসার তালে তালে তুই নাইচবি
সহজিয়া গানে আমরা আবার ঘর বাঁইধব
তাই চলো গো…

——————————————–

শিরোনাম – অতৃপ্ত বাসনা
কলমে- বাসুদেব ঘোষ
২৫/১১/২০২২
সুখ নিতে নিতে মনের অসুখে
প্রদীপ শিখার মতো এ জীবন কাঁপে,
ছায়াতলে জমে থাকে অতৃপ্ত বাসনা।
একটি পূর্ণ হলে, ঠিক পরক্ষণে
টিকটিকি লেজের মতো
আবার গজিয়ে ওঠে আরেক কামনা।
কেন রে অবোধ মন!হোস অকারণ
আশা-তৃষ্ণা বুকে ধরে ব্যতিব্যস্ত তুই
যেমন হরিণ ছুটে মরীচিকা ভ্রমে।
উদ্ভিন্ন যৌবনা ধরা ছলা কলা ভরা
বলো,বিধির বিধান কে যায় এড়িয়ে!
মধু লোভে অলিকুল তবু ফুল চুমে।

——————————————–

শিরোনাম–ভোরের স্বপ্ন দেখি
কলমে–শম্পা চট্টোপাধ্যায়
২৫/১১/২০২২

আলোছায়া মিশে আছে স্বপ্ন-সিঁড়ির ভিতে।
বুকে জমা অভিমানী আষাঢ় আর এক শ্রাবণের দীর্ঘশ্বাস !
তবু আলোমাখা আলো ছুঁয়ে এগিয়ে চলে জীবন ধূসর গোধূলি বেলায়,
মধ‍্যখানে উদাসী বাউলের একতারায়
ভৈরবী মধুকরী বোল তোলে ইচ্ছে বাতাসে।
একমুঠো শৈশব রঙিন পাথরের খোঁজে সিলিং ঘেরা
ইচ্ছেদের ছাপা অক্ষরে।

নৈঃশব্দ্য অপেক্ষার ব‍্যক্ত নিশ্চুপ চলচ্চিত্র
বুদবুদ তোলা অবেগ লজ্জাবতীর মতো ঠোঁটের ডগায়।
অজুহাত খোঁজে অন‍্য এক অভ‍্যাসের হাত
আগুল ছুঁতে চাই বিশ্বাস !
সমস্ত বিষণ্নতা লুটিয়ে পড়ে অন্ধকারের বুকে
জীবন যুদ্ধে ব‍্যর্থ কৃষ্ণবর্ণ আখর সাজায় মন খারাপের তেরেঙ্গায়।

ভেতরে ভেতরে তার তীব্র রক্তক্ষরণ !
উদাস গোধূলি যাত্রা পথ !
মধ‍্যখানে পড়ে থাকে অনেক গল্পের পসরা,
কোনো এক পয়মন্ত বিকেলে ফেরারি ইচ্ছের নদী
ঢেউ তোলে অপরাজিত মনে।
দুই হাতে অন্ধকারের স্তূপ সরিয়ে হাঁটতে শুরু করি,
অন্ধকার আর কাল প্রবাহ পাশাপাশি অবস্থানে।
এ যেন ব‍্যথাতুর সুন্দর !
অভিশপ্ত অন্ধকারের গ্রীবায় দেখায় স্বপ্ন !
বুনো বিশ্বাসের মোহে কতকাল বসে আছে রাত
ভোর আসবে শীর্ণ পাতায়, উজ্জ্বল তরঙ্গে জাগবে আগমী দিন।

——————————————–

বাবা
লেখক আব্দুল্লাহ আল মামুন

বাবা হওয়া সহজ নয় ;
বাবাদের হতে হয় বটবৃক্ষের মতো,
ছায়া দিয়ে, মমতা দিয়ে আগলে রাখতে হয়;
হোক না যত ঝড় তুফান,
বাবাদের হতে হয় বৃষ্টির জলের মতো পবিত্র;
যার ছোঁয়ায় সন্তান হয় আনন্দিত।
বাবাদের হতে হয় জটিল কোন বইয়ের মতো,
যার সব জানি, জেনেও আরো জানার আছে বাকি;
বাবাদের হতে হয় বিশুদ্ধ বাতাসের মতো,
যার নিঃশ্বাসে জীবনে আসে বেঁচে থাকার আনন্দ।

বাবাদের কেমন হতে হয় ঠিক যেনো
বাবারাই জানে।

কোন এক কথাসাহিত্যিক বলেছিলেন,
‘‘পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে,
কিন্তু একজনও খারাপ বাবা নেই।”
আজ সেই বাবাদের তালিকায় আপনারও নাম এসে গেছে।

——————————————-

ছোট গল্প

একান্ত অনুভব
শ্যামল চন্দ্র ভাওয়াল
তা–২৫/১১/২২
রাত–৯ টা)

মা, পরপারে চলে গেছে প্রায় এক বছরের বেশি হলো।মাকে পুরাপুরি ভুলে গেছি- বুকে ব্যথা লাগে না, মনে কষ্ট লাগে না, চোখে অশ্রু ঝরে না।সময়ের নিয়মে সময় চলে যাচ্ছে। আমি আমার মতোই আছি। কেউ একজন আমাকে হৃদে গেঁথে রাখতো সবসময়। তাঁকে ই ভুলতে পেরেছি! শুধু মাঝে মাঝে- সেই মানুষটাকেই খুব অনুভব করি। দুঃখের সময়, কিংবা সুখের সময়।এখনো বিশ্বাস করতে পারি না,- মা নেই।

মা, থাকতে যা করতাম – দুএকদিন কথা না হলে মন আনচান করতো। আনমনে মোবাইল রিং দিতাম। অপর প্রান্ত থেকে সাড়া আসতো-
– বাবা কেমন আছোত?
এই ছোট একটি বাক্য, সারাদেহ মনে উষ্ণতার পরশ বয়ে যেতো। নিমিষেই বিলীন হতো, ক্লান্তি অবসন্নতা। কী সুধা! কী অমৃত! মায়ের এমন স্নেহময় শব্দ বলয়ে। তা লিখে বা বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।মুহুর্তে বৈষয়িক জীবনের ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা হাওয়া হয়ে যেতো। তাৎক্ষণাত মায়ের শব্দে স্নেহের বলয় তৈরি হতো।
এখন স্নেহের শব্দ বলয় ছাড়াই মাসের পর মাস, এমনকি বছর ও চলে যায়। কিন্তু এখনো মনে পড়ে, দুএকদিন পর পর অবচেতন মনে মোবাইল হাতে নেই, ঠিক তখনই মনে পড়ে-, মা নেই, হয়তো অশ্রু গড়ায় নয় সচেতন ভাবে মন ঘুরিয়ে নেই।

মায়ের অভাববোধ বুঝানোর মতো নয়।হয়তো কিছু খেতে মন চেয়েছে, মাকে মনে পড়ে, কিংবা শুয়ে গেছি শীতের রাত গায়ে কাঁথা নেই, কখন এসে কাঁথা গায়ে জড়িয়ে দিতো, অথবা মশারী সাঁটানো হয় নি,মা আপন মনে মশারি সাঁটিয়ে দিতো।আর-কি খাবো বা খেতে পছন্দ করি, মা আগেই জেনে যেতো।
রান্নায় যেনো হাতে জাদু আছে।হয়তো খাওয়াদাওয়া পর হাত মুছার গামছা বা তোয়ালে পাচ্ছি না! অসুবিধা নেই মায়ের আঁচল আছে তো, ঝটপট হাতমুখ আঁচলে মুছে নিতাম। কিন্তু কখনো মাকে বিরক্ত হতে দেখিনি, বড় বেলায়ও এমন করেছি।
স্নেহের প্রশয়ে তারতম্য চোখে পড়েনি।

মা, আমার জন্য বিশেষ ধরনের মাছের ভাজি করতো, আদা আর জিরা বেঁটে, (মাছের জল ভাজি)। স্বাদ যেনো মুখে লেগে আছে, আর রুটি সবজির এখনো খেতে ইচ্ছে করে।
জানি না, নিয়তির পরিহাস না-কি মিরাকল,
কিছু দিন আগে মায়ের মৃত্যু তিথি শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে সবাই বাড়ি গেলাম। ছোট বোন, আমাকে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের পর রুটি সবজিই খেতে দিলো। এটা কি মায়ের স্নেহের সূত্র না, কাকতাল আমি জানি না,। তবে রাতে এই কথা মনে করে অশ্রু সংবরন করতে পারি না। মনে হয়, মায়ের স্নেহের মৃত্যু হয় না, মাকে খুব অনুভব করি, কি সুখের সময়, কি দুখের সময়। মনে হয়, মায়েরা চিরদিন বাঁচে না, কেনো? আমার যে সারাজীবন একজন মায়ের খুব দরকার। খুব খুবই দরকার।

Powered by themekiller.com