Breaking News
Home / Breaking News / দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

হৃদয়ে রক্ত ঝরা
জাহীদ হোসেন
(তারিখঃ ১৮/১০/২০২২)

আমার কাছে বাবা মানে চাঁদের গল্প বলা
আমার কাছে বাবা মানে হাত ধরে পথ চলা,
আমার কাছে বাবা মানে ঘাম ঝরা এক দুপুর
হাড়কাঁপা শীতের সকাল, কাঙ্খিত রোদ্দুর।

আমার কাছে বাবা মানে নিরাপদ আশ্রয়
শাসন বারণ নিয়ম-নীতির বিমূর্ত সময়,
গল্প কবিতা ইতিহাসের সেই সাহসী পাতা
সুকান্ত আর নজরুলের বিদ্রোহের কবিতা।

আমার কাছে বাবা মানে বিপ্লবী এক সুর
বাবার কাঁধে ভর করে পার হওয়া সমুদ্দুর,
বাবা মানে বটবৃক্ষ, সুনিশ্চিত এক ছায়া
শত যাতনা চেপে রাখা হাসিমাখা এক মায়া।

আমার কাছে বাবা মানে বিরতিহীন দ্রুতযান
জীবনটা উৎসর্গ করা সীমাহীন সংগ্রাম,
ঝড় তুফানে আশ্রয় নেয়া নির্ভর এক ছাতা
বাবা মানে ঈদের খুশি, নতুন রঙিন জামা।

আমার কাছে বাবা মানে ঝলমলে ধ্রুব তারা
দুঃখের সাগর পাড়ি দেয়া নাবিক আত্মহারা,
সুখসাগরে ভাসিয়ে আমায় তুমিই পথহারা
আমার কাছে বাবা মানে হৃদয়ে রক্তঝরা।

——————————————–
শিরোনামঃ-বরফ গলা নদী
কলমেঃ-অজিত কুমার সিংহ
তারিখঃ-১৮/১০/২২ ইং।

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে
আমার গায়ের তাপমাত্রা
গেছে বেড়ে।
কিন্তু হৃদয়ে হিমশীতল
বরফ জমেছে।
গেলাম আগুনের কাছে।
শরীর যাচ্ছে পুড়ে।
কিন্তু বরফ গলছে না।

গেলাম নারীর কাছে।
নারীর স্পর্শে বরফ
গলতে শুরু হয়েছে।

বরফ গলা হিমশীতল
পানি নদী হয়ে সাগরের
মোহনায় মিলিত হয়েছে।

—————————————-++++

মাটির প্রদীপ হও
মনোজ কুমার রথ (শ্রীমান অকুলীন)
( ৩১ আশ্বিণ,১৪২৯; 18-10-2022)
———————————————————————-

কথা ছিল কোজাগরীর চাঁদ হবে,
রূপায় রূপায় ভরে দেবে আমার পৃথিবী…
নিদেনপক্ষে মাটির প্রদীপ হয়ে এসো;
সলতে পাকিয়ে রেখেছি সে-ই কবেই,
মজুত রেখেছি এক মণ বিশুদ্ধ ঘি…

কে কে রং পাল্টেচ্ছে,
কে বা রয়ে গেছে আজও অপরিবর্তিত…
কিই বা এসে যায় তাতে?
আমরা যেন রয়ে যাই একইরকম যুগ যুগান্তে,
আমাপা প্রেম মজুতের ঘরে শষ্যদানার মতো;
পরজন্মে পাখি হলে,
খুটে খুটে খাবো এ’জন্মে জমিয়ে রাখবো যত…
গোপনীয় পুরাতন সব ক্ষত,
পুরোপুরি সেরে যাবে তখন দেখে নিও।

ওড়াওড়ি করে ওই কপোত কপোতি,
হংসমিথুন ভেসে বেড়ায় সন্নিকট নদীটির চরে,
দূর্বা পেতেছে কোল শিশিরের লাগি…

ভাগাভাগি করে খাবো এক থালা ভাত,
জোছনা মেখে নিয়ে
এক’শ গ্রাম মুড়ি আর বাদামের সাথে,
দশটার পর চারটে রুটির যে যতটা পারি;
ভারি সুখের হবে জানো!
শান্তি করবে বিরাজ কুঁড়ে ঘরের কোণায় কোণায়।

গোনা যায় না সোহাগ,
পরিমাপ করা যায় না প্রেম,
বলা যায় না… এই এত্তখানি ভালবাসি তোমায়!
তবু বলি…
এক প্রশান্ত প্রেম দেবো,
এক মহাদেশ সোহাগ দেবো,
ভালবাসা দেবো পুরোই একটি আকাশ সমান!!

প্রমাণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই,
শুধু প্রতিশ্রুতি দাও সুন্দরবনের পরিশুদ্ধ মধুরই মতো…
মাটির প্রদীপ হবে তুমি;
বেলিফুলের হার দেবো,
ডালিমফুলের দুল দেবো,
সোনালপোকার টিপ পরাবো
সব্যসাচীর গান্ডীবের মতো ভ্রু দু’টির মধ্যিখানে ওই…

কই?
কোজাগরীর চাঁদ হতে বলছি না তো আর;
মাটির প্রদীপ হও,
সলতে পাকানো আছে… জীবন।

*** ***
ম.কু.র.

——————————————-
প্রতিদিনের কবিতা
বিষয়— উন্মুক্ত
শিরোনাম– আবার এসো মা ফিরে
সৃজনে— নবগোপাল চৌধুরী
তারিখ—18/10/2022

কবিতা—# আবার এসো মা ফিরে #

আবার এসো মা ফিরে
অবক্ষয়ের অতলপঙ্কে পৃথিবী রয়েছে ঘিরে।
মানবতা আজ সমূলে নষ্ট, ভ্রষ্ট শাসক কূল ,
শিক্ষা– স্বাস্থ্য– সাহিত্য আজ ক্রমশঃ যে নির্মূল;
দানবতা আজ ছড়িয়েছে শাখা বিশ্বের আঙিনায়
দাপিয়ে বেড়ায় সবলেরা যত, দুর্বল অসহায় ।
অহমিকা নিয়ে অস্ত্র যুদ্ধে মেতে আছে সারা বিশ্ব,
সর্বহারারা এ পৃথিবী জুড়ে হচ্ছে ক্রমশ নিঃস্ব;
কালো-সাদা আর জাতি দাঙ্গায় পৃথিবীটা আজ দীর্ণ
জ্ঞান- বিজ্ঞান পারেনিকো হতে মহানতা উত্তীর্ণ ।

আনো মা সাম্য বৈষম্যের করো চিরতরে শেষ
ঘোচাতে বিভেদ যত ভেদাভেদ কর মানবতা উন্মেষ
প্রকৃতিকে তুমি ফুলে- ফলে ভরো ক্ষেতকে শষ্য পূর্ণ
ধ্বংস রুখতে পৃথিবীকে করে তোলো প্রদূষণ শূন্য।

সমস্যা আছে দুঃখ রয়েছে প্রতিটি হৃদয়ে রুদ্ধ
ভালো ও মন্দে চলছে সদাই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ ।
আদর্শ নিয়ে যুদ্ধ করছে আজও সৎ পান্ডব ,
আবার এসো মা শত্রু নিধনে করো মাগো তাণ্ডব ।

আবার এসো মা ছন্দে
শুভ কাশের হিল্লোল নিয়ে ঝরা শিউলির গন্ধে ।

# সমাপ্ত #

—————————————+++++

রাঙাবধূর হাসি
মেশকাতুন নাহার
১৮/১০/২০২২
মালঝাঁপ পয়ার ৪+৪+৪+২

বধূ সাজে মাঝে মাঝে
মুখটি লাজে ভরে,
দেখি তাঁরে বারেবারে
হৃদয় দ্বারে ধরে।

দিঘল চুলে বেলি ফুলে
হেলে দুলে চলে,
রাঙা বেশে ভালোবেসে
মিষ্টি হেসে বলে।

রূপে ভরা অঙ্গ গড়া
অগ্নিঝরা মূর্তি,
কর্ম ছেড়ে আসি তেড়ে
যায় যে বেড়ে ফুর্তি।

মিঠা স্বরে হাতে ধরে
প্রণয় করে বলে,
চলো দূরে আসি ঘুরে
ঐ ফুরফুরে জলে।

স্বপ্ন ঘেরা ছোট্ট ডেরা
বধূ সেরা সাধন,
তেড়েমেরে গেলে ছেড়ে
যাবে হেরে বাঁধন।

——————————————-

গল্প: বঙ্কুবাবুর হাইড প্রোফাইল!
কলমে: তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য।
তারিখ: 18/10/2022

কথায় বলে,”ভাঁড়ে মা ভবানী!”
বঙ্কিম বিহারী ঘোষ ওরফে বঙ্কুবাবু ওরফে বঙ্কুদার জন্যই যেন এই প্রবাদটি লেখা হয়েছে!অভাব যেন আর বঙ্কুদার পেছন ছাড়ছেই না।যদিও বড়োলোকী স্বভাবটা কিন্তু বঙ্কুদার বরাবরের। নিজের পোশাক আশাক যেকোনভাবে পরিপাটি রাখতেই হবে তাঁকে! পকেট যদিও প্রায়ই গড়ের মাঠ থাকে তবুও লেকচারে তিনি একদম শশী দত্ত!নিজে লুকিয়ে লুকিয়ে বিঁড়ি ফুঁকলেও সিগারেট অফার করার অতি দুঃসাহসও তিনি মাঝে মধ্যেই দেখান। এই জন্য সভ্যভব্য সমাজে তাঁর খাতির খুব একটা কম নয়। পৃথিবীর প্রায় সব খবর তাঁর হাতের মুঠোয়। রাজনীতির অ,আ,ক,খ থেকে ৎ পর্যন্ত সব কিছুই তাঁর একদম নখদর্পণে।কি জানেন না তিনি!ডাক্তারী, কবিরাজী, বিজ্ঞান চর্চা থেকে ভাবগম্ভীর ধর্ম আলোচনা সবেতেই তিনি একদম পটু!পকেটে গীতা কিছুটা বের করে রেখে বকধার্মিক সাধুর প্রবচন দেওয়া থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে রাজনীতির ঝড় তোলায় তিনি এক্কেবারেই সিদ্ধহস্ত!কথায় কথায় উল্টোপাল্টা জ্ঞানমার্কা উপদেশের কথা বলে,এটাকে তিনি কোন এক মহাপুরুষের বাণী বলে প্রায়শই চালিয়ে দেন আর মূর্খ সাগরেদরা “বাঃ বাঃ অপূর্ব! চমৎকার! অসাধারণ!” বলে তাঁকে ধন্য ধন্য করতে থাকে।
এ হেন বঙ্কুবাবুর এবার শখ হয়েছে তিনি বিখ্যাত কবি হবেন! বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ভাবছিলেন,অন্য কবির কবিতার ভুলভাল লাইন লেকচার দেওয়ার থেকে নিজের কবিতার লাইন দু’চার পিস গরমাগরম ঝেড়ে দিলে কাব্যকাণ্ডজ্ঞানহীনরা মোটেও ধরতে পারবে না আর হাততালিও পাওয়া যাবে বেশ! তাছাড়া এটায় একদম কোন ঝুঁকি নেই কারণ সবইতো নিজের লেখা,এক্কেবারে হোম মেড রেসিপি! ভুল হলেও কেউ ধরতেই পারবে না!
যেই ভাবা সেই কাজ। শুরু হয়ে গেল বঙ্কুদার স্বরচিত কবিতা লেখা। কবিতা শোনার জন্য ভীড় জমে গেল এবার! একদম অরিজিনাল জ্যান্ত কবি বলে কথা! চারিদিকে দেখার জন্য সাড়া পড়ে গেল একেবারে!পাড়ার অলিগলির পাতি লোক বঙ্কুবাবু একসময় হয়ে উঠলেন স্বনামধন্য অনলাইন ফেসবুক কবি। কিন্তু বাধ সাধলো নিজের পরিচয় আর প্রোফাইল পিকচারে। তিনি কখনই প্রোফাইল পিকচারে নিজের ছবি বা পরিচিতি দিতেন না। গোপন রেখেই চালিয়ে যেতেন এই অসাধ্য সাধন কর্মটি!
এর পেছনে কারণ ছিল অনেকগুলো।তার মধ্যে অন্যতম হলো,যেমন পাড়ার মুদির দোকানে তাঁর বহুদিনের পৈতৃক আমলের চলতে থাকা ধারের খাতা। একবারতো দোকানদার বাড়ি অবধি ধাওয়া করেছিল।সে দিন ঘরভর্তি আত্মীয়!সে কি অবস্থা! লোক দিয়ে ম্যানেজ করে চুপিচুপি সে যাত্রা কোনক্রমে লুকিয়ে পালিয়ে বেঁচেছিলেন তিনি।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে তাঁর ঐ নতুন অ্যাফেয়ার্সটা,যেটা অন্য একটা ফেসবুক আই ডি থেকে শুরু করে তিনি বেশ কিছুদিন ধরে হরদম চালিয়ে যাচ্ছেন। ওখানে তিনি নাম দিয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র চক্রবর্তী। মেয়েটা ব্রাহ্মণ পরিবারে,তাই এছাড়া বঙ্কুদার কোন উপায় নেই! স্বজাত আর চাকুরিজীবী ছাড়া রিয়া ব্যানার্জীর বাবা মেয়ের বিয়ে মোটেও দেবেন না। অগত্যা তৈরি করলেন ফেক প্রোফাইল! ছত্রিশ বছরের বঙ্কুদা হয়ে গেলেন ছাব্বিশ বছরের হ্যাণ্ডসাম ইয়ং বয়,মিষ্টার বঙ্কিমচন্দ্র চক্রবর্তী এবং পাড়ার বাউণ্ডুলে লোক থেকে ওয়েটফুল স্কুল টিচার!
আর এ দিকে চলতে থাকে অনলাইন ফেসবুক সাহিত্য সাধনা!প্রযত্নে হাইড প্রোফাইল! পিকচারে গাছপালা, ফুল, প্রজাপতি, কুকুর, বিড়াল অথবা লাস্যময়ী হাফ নেকেড নারী!
একদিন চেয়ারে বসে কবিতা লিখতে লিখতে হঠাৎ বঙ্কুদার মনে পড়ে গেল বেশ কয়েকদিন পূর্বে তার মা তাঁকে বলেছিলেন,” হ্যাঁ রে বঙ্কু, তোকে কবে থেকে একটা নতুন আয়না কিনে আনতে বলেছিলাম!তুই আনিস নি কেন রে?ওটায় তো আর একদম মুখ দেখাই যায় না রে!”
বঙ্কুদার মনে হলো সত্যিই এবার একটা নতুন আয়না আনতেই হবে। হঠাৎ আয়নাটার দিকে তাকিয়ে বঙ্কুদা একেবারে থ!চোখ আর ফেরাতে পারলেন না। তাকিয়ে থাকলেন অনেকক্ষণ। মনে মনে ভাবলেন,”সত্যিই তো নিজের মুখ আর একদম চেনাই যাচ্ছে না!”

Powered by themekiller.com