Breaking News
Home / Breaking News / দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

শিরোনামঃ- #স্মৃতি
✑ বরুণ কুমার দে
তাংঃ- ১৬/১০/২২

হারানো কিছু স্মৃতি,
কিছু প্রিয় মুখ।
ভাবতে গিয়ে সব,
কেঁপে ওঠে বুক।
কিছু কিছু আশা,
কিছু কল্পনা।
স্মৃতির অতলে হারানো
কিছু প্রিয় ঠিকানা।
চেনা কিছু ছবি,
প্রিয় কিছু কবিতা।
কিছু কিছু পাওয়া,
বাকি অপূর্ণতা।
চেনা চেনা সুর,
প্রিয় কিছু গান।
প্রেমিকার কাছে,
শুধু অভিমান।
কিছু চেনা ফুল,
ছিলো নানা ভুল।
যা কিছু পাওয়া,
সব ভুলের মাশুল।
কিছু কিছু মুহূর্ত,
ছিলো যে প্রথম।
শৈশব হারাবে,
এটাই তো নিয়ম।
সাজানো কিছু গল্প,
কিছু রূঢ় বাস্তব।
অলীক কিছু চরিত্র,
মেকি অনুভব।
কিছু কিছু অংক,
মেলানো মুশকিল।
কিছু কিছু মেলে,
বাকি সব অমিল।
মনের স্মৃতিপটে,
কিছু ছবি রঙিন।
কিছু অবহেলা,
ধূসরে মলিন।
কিছু নিরবতা,
চোখের পাতায়।
কিছু কিছু গল্প,
আমার কবিতায়।
কিছু ঘটনার ইতি,
হয়না কো স্থায়ী।
শৈশবের দিনগুলি,
ছিলো পরিযায়ী।
কিছু চেনা গন্ধ,
বড্ড মনে পড়ে।
কল্পনার আকাশে,
স্মৃতির পাতা ওড়ে।
হারানো সে দিন,
খুঁজি নতুন করে।
জানো কি তোমরা,
কেমনে পাবো ফিরে?

——————————————-

বার্তা

সেদিন সন্ধ্য বেলায় সমুদ্র আর জ্যোৎস্না
বয়ে নিয়ে এসেছিল যে বার্তা!
যা কেউ জানেনা,জানে না পাড়া পড়শী
সবটাই তো গোপন ছিল গাঢ় অন্ধকার রাতের মতো! র্মমমূলে৷
যে দিন ভীষন ভূকম্পনে সমুদ্রচ্ছাস আছড়ে পড়ে
সে দিন হারিয়ে যাবে সকল গোপন বার্তা
ব্যাভিচারি ভেবে! দখল দারির মনেরকোঠায়
জ্যোৎস্না রাতের বাসর ঘরে সব কিছু যে
রঙীন সুতোয় বাঁধা৷
বসন্ত আর শীতের মাঝে
শুধুই গোপন মনের গোপন বার্তা৷

অপেক্ষায় শুধু অপেক্ষায় তোমার র্মমমূলে হারিয়ে যাওয়া ভাটিয়ালে !

সুব্রত সেন

১৬/১০/২২

——————————————-

শুধু জানলে না তুমি ~~~~~~~
~~~~ ~~ কামরুল ইসলাম

এতো ব্যস্ততার মাঝে ও তোমাকে মনে রেখেছি . . .
সময় অসময়ে নিয়েছি খবর . . .
ক্লান্ত প্রশান্ত দেহে আনুভব করেছি . . .
তোমার নিরব উপস্থিতি . . .
বারান্দায়, চায়ের কাপে . . .
শুনেছি তোমার কাকনের ঝংকার . . .
বর্ষার বাদল ক্ষণে সুবাসিত হয়েছি . .
তোমার ভেজা চুলের গন্ধে . . .
প্রতিনিয়ত নিঃসঙ্গতায় পুষে রেখেছি , তোমায় . . .
মনের গোপন গহীনে . . . .

শুধু জানলে না তুমি . . .
কতটা বেসে ছিলাম ভাল . . . . . . !

——————————————–

কলমে-নবীন
/
”শব্দদূষনের প্রতিবাদ”
/
নব্য সভ্যতার রাজধানীতে যানবাহনের কারনে
শব্দদুষন কেমন তা বলা বাহূল্য।
কারনের চেয়ে অকারনে গাড়ীর হর্ণ বাজানো হয় ।
শব্দ বা পরিবেশ দুষন নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই।
/
তবে সচেতন একজন ব্যক্তি মৃত্যুকে পকেটে নিয়ে,
তার দুই সন্তানের হাতে শব্দদূষনের
প্রতিবাদের ঝান্ডা নিয়ে,
পথের মাঝখানে বসে প্রশাসনের চোখে
আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছেন!
/
প্রতিবাদ ছোট্ট হলেও সার্বিক বিবেচনায়
তা বিশাল ও শুভ সূচনা।
এই প্রতিবাদের লিখনী,
সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের
নীতি নির্ধারনী বিবেচনায়,
শব্দদুষনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা হউক।
তা আপামর জনসাধারনের চাওয়া।

——————————————–

গল্পঃ- সংস্কার
কলমেঃ- তপন কুমার রায়
তারিখঃ-১৬/১০/২২

সাবু মাসি সান্ধ্য আহ্নিকে বসে এক মনে মালা জপতে জপতে ঠিক যখন রাধাকৃষ্ণের ছবিটায় মন স্থির করতে চেষ্টা করছিলেন, তখনই বাইরে থেকে তুমুল চিৎকারের আওয়াজ ভেসে এলো। সাবু মাসি তার এই সান্ধ্য অহ্নিকের সময় কোন ব্যাঘাত সহ্য করতে পারেন না। দিনের মধ্যে এই একটুকু সময়ই তো তার ভগবানকে ডাকা।নরকের দোরগোড়ায় সারাদিন পাহারায় বসে থেকে এই টুকুই তো পূণ্য। তাতেও ব্যাঘাত! সাবু মাসি হাঁক দেন–“এই কে আছিস মাগীগুনোকে একটু চুপ মারতে বল্। আমি আন্নিকে বসিচি”। বলে আবার বাইরের শব্দকে অগ্রাহ্য করে আহ্নিকে মন নিবেশ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাইরে চিৎকার উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। তিনি বুঝে যান, আজ আর তার আহ্নিক সারা হবে না। কি হচ্ছেটা কি,আর তো না দেখলেই নয়। জপমালাটাকে মাথায় ঠেকিয়ে প্রণাম করে ঠাকুরের বেদীতে যত্ন করে রেখে দিয়ে, উঠতে চেষ্টা করেন।
এই বয়সে, এই পৃথুলা থলথলে চেহারা নিয়ে ওঠাই কি অত সোজা!হাঁটুতে আর জোর বলে ও তো কিছু নেই। একতো মেঝের ওপর কম্বল আসনে বাবুমোরা হয়ে বসাই খুব কষ্টের।তাও খাটের পায়াটা ধরে কোন ক্রমে বসে যদি বা পড়েন নিজে নিজে, উঠতে পারেন না কিছুতেই। তাই রাসু আর কেষ্টাকে রাখা আছে। ওরাই দুহাত ধরে তুলে দাঁড় করিয়ে দেয় তাকে।একটু ধরলে, তারপর হাঁটতে টা পারেন নিজে নিজে।
বাসন্তীর ঘরের সামনে চেঁচামেচিটা চলছে। একটা পাকাচুল আধবুড়ো লোক বাসন্তীর ঘরে ঢুকবেই, আর বাসন্তীও তাকে ঘরে ঢুকতে দেবে না। সুভাষরা কেউ লোকটাকে থামাতে পারছে না কেন? তা হলে আর ওদেরকে পয়সা দিয়ে রাখা কিসের জন্য? ছেঁমড়িগুলোও ওদের ঘিরে ধরে মজা দেখছে আর হা হা হি হি করছে। সব মিলিয়ে আওয়াজে কান পাতা দায়।রাসু কোথা থেকে একটা বাঁশ এনে ছুটে গিয়ে লোকটার মাথায় এক ঘা বসিয়ে দিল। “বাবা গো মরে গেলুম গো” বলে মাথাটা ধরে কাটা কলাগাছের মত ধড়াস করে মেঝেতে পড়ে গেলো লোকটা।মাথা দিয়ে গল গল করে রক্ত বেড়চ্ছে। তাই দেখে বাসন্তী আবার উল্টে রাসুকে গালাগাল দিতে আরম্ভ করে। বাসন্তী ছুটে গিয়ে লোকটার মাথাটা একটা গামছা দিয়ে চেপে ধরে মাথাটা কোলে নিয়ে বসে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে। ভরা বিজনেস টাইমে এ সব কি অশান্তি, এ্যাঁ। খদ্দের পাতি এখন কি আর এদিক মারাবে?
সাবিত্রীর এই সব কান্ড কারবার দেখে সব কেমন গুলিয়ে যায়। বয়স হয়েছে।আগেকার সেই দাপট কি আর আছে সাবিত্রির? এখন এই বয়সে আর কোন ঝামেলা ভালো লাগে না তার।ঝুটঝামেলা হলে হাত-পা যেন কাঁপতে থাকে। লোকটা মরে টরে গেলে আবার পুলিশ কেস।আর তা হলে আবার সেই টানাটানি ছুটোছুটি। বেজম্মা রাসুটারও কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই, একটা চিমড়ে মাতালকে দুটো চড় চাপড় মারলেই কাজ হয়, তা নয় মাথা ফটিয়ে এমন কান্ড করলো, লাও এখন ঠেলা সামলাও তুমি। কাছে গিয়ে লোকটার মুখটা দেখে কেমন যেন চেনা চেনা লাগে সাবিত্রীর । আরে, এতো সেই রাম হারামির বাচ্ছা টা, সেই সরোজ না! যে বাসন্তীকে বহু বছর আগে এই বেশ্যাখানায় বেচে দিয়ে গিয়েছিল।

কুলতলিতে বাড়ী ছিল বাসন্তীদের। বসন্তপূর্ণিমায় জন্ম বলে ঠাকুরমা নাম রেখেছিলেন বাসন্তী। পূর্ণিমার চাঁদের মতই দিনে দিনে সুন্দরী হয়ে উঠেছিল বাসন্তী। তাদের পয়সা ওলা বাড়ী। জমি ভেরী মিলিয়ে অনেক সম্পত্তি। তার ওপর তার বাবা বিষ্টু সর্দারের সাতখানা সাগরে যাওয়া মাছধরা ট্রলার। মাছবাজারে একটা বড় আড়ত। মানুষের পয়সা থাকলে কদর বাড়ে, গন্যিমান্যি হয়।বিষ্টুর ও এ অঞ্চলে৷ দারুন খাতির। সরকারী অফিসার বা নেতা মন্ত্রী এ অঞ্চলে এলে তার বাড়ীতেই অভ্যর্থনার ভার পড়ে। সেই বিষ্টু সর্দারের একমাত্র মেয়ে হল বাসন্তী।বাসন্তীর লেখাপড়ায় খুব মন দেখে কুলতলি হাইস্কুলের নতুন মাস্টার সরোজ হালদারের কাছে প্রাইভেট পড়তে দিয়েছিল বিষ্টু সর্দার । সরোজ বাবু কোন ভোরে উঠে, রোজ কোলকাতা থেকে আসতেন স্কুলে। স্কুল শেষে টিউশন সেরে আবার ফিরে যেতেন রাতের দিকে। সরোজবাবুর স্ত্রী ও বারাসাতের দিকে কোন এক স্কুলের টীচার। সরোজবাবুর কাছে পড়ে বাসন্তীর চোখেপড়ার মতো লেখা পড়ায় উন্নতি হতে লাগলো। বাসন্তীর কথাবার্তা, এমন কি আচার ব্যবহারেও বেশ শহুরে স্মার্ট ফ্লেভার এসে গেলো। চলন বলন ই বেশ পাল্টে গেল। বাসন্তীর বাড়ীর লোকজন মায় তার বাবা বিষ্টু সর্দার ও খুব খুশী।
. মাস্টার মশাইয়ের রোজকার ভোরবেলা বেরিয়ে কোলকাতা থেকে যাতাযাতে কষ্টের কথা ভেবে অন্যান্য মাস্টারমশাইরা সরোজবাবুকে কুলতলিতেই একটা ঘরভাড়া নিয়ে স্কুল করতে বলেছিলেন। শনিবার স্কুল করে বাড়ী চলে যাবেন-, আবার সোমবার ফিরে স্কুল করবেন না হয়। সরোজবাবুর কথাটা বেশ মনে ধরছিল। স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে, স্ত্রী ও ঘরভাড়া নিয়ে থাকারই পক্ষে বলেছিলেন। এভাবে রোজ যাতায়াত করে সরোজের শরীরও তো ভাঙছে।তাই ওখানে থেকে স্কুল করে সপ্তাহ শেষে বাড়ী এলেই ভালো হবে।
একদিন পড়ানো শেষে সরোজবাবু বাসন্তীর বাবাকে বললেন -” এদিকে একটা ভাড়াঘর খুঁজে দিতে পারেন সর্দার মশাই? তা হলে আর রোজ কোলকাতা থেকে যাতায়াত করতে হয় না”। বিষ্টুবাবু বললেন—” এর জন্য এত ভাবছেন কেন? আমার বাড়ীতেই তো কত গুলো ঘর পড়ে রয়েছে।বারমহলে বৈঠকখানার পাশের ঘরটায় তো খাট, আলনা, আলমারী সবই আছে।আপনি একবার দেখে নিন আপনার চলবে কিনা। আর আপনি আমার বাড়ীতেই না হয় দুবেলা একটু ভাত মাছ, যেদিন যেমন যা জোটে, আমাদের সাথে খেয়ে নেবেন।আপনাদের আশীর্বাদে ভগবান ওইটুকু ক্ষমতা আমাকে দিয়েছেন”।
সেই থেকে সরোজবাবুর বাসন্তীদের বাড়ীতেই থাকা খাওয়া।এদিকে বাসন্তীর বাড়ন্ত শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনোজগতে ও একটা পরিবর্তন এসেছে। সব ছাত্রীরই মনে বোধহয় তার মাস্টারমশাই সম্বন্ধে একটা ইনফ্যাচুয়েশন জন্মায়।সেটা প্রথম শ্রদ্ধা থেকে এলেও পরে একটা ভালোলাগা- ভালোবাসা জন্মায়।অন্তত একটা ‘কাফ-লাভ’ গড়ে ওঠে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে টুকরো কথায় বার্তায় একটা মোহময় ভালোলাগা গড়ে ওঠে ই। আর এই ভালোবাসাটা পরস্পরের বুঝতে সময় লাগে না। বাড়ীর সকলেও যে একটু আধটু আভাস পায় না তা নয়। কিন্তু অল্প বয়সের উচ্ছ্বাস ভেবে কেউ তেমন আমল দেয় না।বাসন্তীর মাস্টারমশাইয়ের যত্নআত্তি, খাবার নিয়ে যাওয়ার তাড়া, বা মাস্টার মশাইয়ের জন্য উলের সোয়েটার বুনে দেওয়া দেখে গুরুজনরা হেসেছেন। কিন্তু বাসন্তীর উঠতি যৌবনের মনের কোনে কতটা বিদ্যুৎ ঠিক সঞ্চার হয়ে ছিল কেউ খোঁজ রাখেনি। একদিন হঠাৎ ই সন্ধ্যেবেলা লোডশেডিং এর সময় সরোজবাবুর ওপর বৃষ্টি হয়ে অঝোরে ঝরে পড়েছিল বাসন্তীর সেই সজল ভালোবাসা। সরোজবাবুর আগের থেকে কিছুটা আন্দাজ থাকলেও বৃষ্টির প্রাবল্য সম্বন্ধে কোন ধারনা ছিল না। ভেসে গিয়েছিলেন মাস্টারমশাই।বলা ভালো অভিজ্ঞ মাস্টারমশাই ও খানিক হাবুডুবু খেয়েছিলেন সেদিন ।
বাঁধের লকগেট একবার খুলে গেলে, জলপ্রবাহ ক্রমশঃ বাড়তে থাকে।প্রেমও সেরকম একবার দুজনের কাছে পরিস্কার হয়ে গেলে, সে ক্রমশ বাড়তে থাকে, গতিপায়- পথ খোঁজে । আর প্রেম যত বাড়তে থাকে, যে প্রেমিক-প্রেমিকা যতই গোপন রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করুক, তাদের আচার- আচরণে তা প্রকাশ ঘটবেই। ফুল ফুটলে গন্ধ যেমন আপনি ছড়ায় চারিদিকে, কাউকে চেষ্টা করে ছড়াতে হয় না। সকলেই এমনি বুঝে যায়। ভালবাসার সৌরভ ও কারো দৃষ্টি এড়ায় না, অন্তত চারপাশের কাছের লোকেদের।।
সরোজ- বাসন্তীর প্রেমেও তার অন্যথা হয় নি।বিষ্টুবাবুর বাড়ীতে এনিয়ে ফিস ফিস হলেও, কি করা যায় তা তারা ভেবে পাচ্ছিলেন না।বিষ্টু বাবু স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে সরোজমাস্টারকে এখান থেকে ট্রান্সফার করে দেওয়ার কথা ভাবলেন একবার,না হলে তিনি ভেরী অঞ্চলের লোক, সরোজকে পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেবেন দরকার পড়লে। এই নিয়ে কথা উঠলেই পাড়া প্রতিবেশীর মধ্যে যে ছি ছিৎকার পড়বে তা অনিবার্য। বাড়ীরও না আবার একটা লজ্জা, একটা বদনাম হয়ে দাঁড়ায়! বিষ্টু সর্দারের একটানাম আছে এ অঞ্চলে। গ্রামের দিকে, লোকলজ্জার ভায়ে প্রথমে সবাই চাপা দেওয়ার চেষ্টার মধ্যেই যায়। এ কথা যেন পাঁচ কান না হয়, কোথাও না ছড়ায়। বাসন্তীকে পরোক্ষভাবে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছিল তার পরিবার। তারা সামলাবার চেষ্টা করলে কি হবে। ঘটনা কোন দিক দিয়ে যে কি ঘটবে তা ঈশ্বর ই জানেন।
কথায় আছে ‘স্বামী পরকীয়া করলে স্ত্রী সবার আগে জানবে, আর স্ত্রী পরকীয়া করলে পাড়ার লোক আগে জানবে’ । এক্ষেত্রে ও একদিন সরোজ বাবুর স্ত্রী কোন ভাবে খবর পেয়ে হোক বা সরোজের আচার ব্যাবহার থেকে কিছু বুঝে হোক, হঠাৎ করে কুলতলি স্কুলে এসে হাজির হয়ে গেলেন। তিনি স্কুলে সরোজবাবুর সাথে তুমুল ঝগড়াঝাটি করার পর, বিষ্টুবাবুর বাড়ী গিয়ে তাদের যতপরনাস্তি অপমান করলেন।তাঁর চেঁচামেচির কাছে বিষ্টু সর্দারের পরিবার মাথা নীচু করে সব হজম করলেন। গাঁয়ে সর্দার বাড়ীর মানসম্মান বলে আর কিছু রইল না।আচমকাই সব কেমন যেন পরিস্থিতি টা পাল্টে গেল । তাদের বলার কিছু নেই,কিন্তু সব রাগ গিয়ে জমা হতে থাকল বাসন্তীর ওপর। বাসন্তীকে তো তার বাবা একেবারে সাপ ঠাঙানো ঠাঙালো।কিন্তু অত মার খেয়েও বাসন্তী একটুও দমে না, তার জেদ যায় না। তারপর,তার বাড়ী আর কোন উপায় না দেখে, বাসন্তীর বাড়ী থেকে বেরনো বন্ধ করেদিলেন একেবারে। কোন বন্ধু – টন্ধুরও তাদের বাড়ীতে আসা বন্ধ করে দিলেন।তাকে তার ঘরে একরকম ঘরবন্দীই করে রাখা হলো।
হাইস্কুলের মাস্টারের এ হেন আচরনে স্কুলের যত গার্ডিয়ান একসাথে এসে একদিন স্কুলে প্রতিবাদ জানাতে লাগলো— “সরোজ মাস্টারকে তাড়িয়ে দিতে হবে, দিতে হবে”। হেড মাস্টার অফিস ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন– “শুনুন,সরকারী মাস্টারকে তাড়ানোর ক্ষমতা আমার নেই। আপনারা যা পারেন করুন। তার কাজ আমরা কেউ সমর্থন করি না। আপনারা তার জন্য পুলিশ বা ইন্সপেক্টর অব স্কুলের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। তাদের ক্ষমতা আছে।”
এই কথা শুনে একদল ছেলে ছোকরা সরোজ মাস্টারকে টেনে এনে বেধরক মারধোর করে থানায় নিয়ে গেল।বিষ্টু সর্দারের বাড়ীর কেস বলে, থানা কেসটা নিয়েও নিল।
সবার হস্তক্ষেপে সরোজ মাস্টারের চাকরিটা চলে গেল।ওদিকে তার স্ত্রী কোর্টে ডিভোর্স এর মামলা করেছে।সরোজ মাস্টার আর ওটা চ্যালেঞ্জ করতে চায় নি।তাই ডিভোর্স টা সহজেই হয়ে গেলো। রিটায়ারমেন্টের টাকা আংশিক পেলেন সরোজবাবু। কুড়ি বছর চাকরি হওয়ার জন্য একটা পেনশনও রইলো।তবে তার জন্য কাঠখড়ও কম পোড়াতে হয় নি সরোজবাবুকে। তবে এই টাকায় তার কোনক্রমে খেয়ে পড়ে চলে যাবে।
চাকরি থেকে বিতাড়িত, শারীরিক ভাবে নিগৃহীত হয়ে, বিয়ে ভেঙে, সংসার খুইয়েও সরোজ বাবুর গোঁ গেল না। বাসন্তীকে ভালোবেসে তিনি এক নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েছিলেন, তা তিনি সব হারিয়েও ভুলতে পারছেন না। আবার এই বাসন্তীর জন্যই তার সাজানো জীবন ছারখার হয়ে গেল,তিনি পথে বসলেন। তার এই আজ পথে বসার কারণ ও তিনি ভুলতে পারছেন না। ভালোবাসার সাথে সাথে একটা প্রতিশোধ স্পৃহা তার মনের কোনে রয়েই গেল। ভালোবাসাটা হয়ত শরীরী মোহ মাত্র।তাও তার তীব্র আকর্ষনের জন্য তিনি আর কুলতলি অঞ্চল ছাড়তে পারলেন না। বাজারের কোন দোকানে বা হোটেলে একটু আধটু খেয়ে নেন আর বাজারের আটচালাতে পড়ে থাকেন।এই ভাবে দিন চালাতে চালাতে বাসন্তীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ওদিকে বাসন্তীও মাস্টারমশায়ের দুর্দশার খবর পাচ্ছিল একটু আধটু এর ওর মুখে আর মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছিল।সরোজের আজকের এই দূঃখ-দুর্দশা তো তাকেই ভালোবেসে। সেও চেষ্টা করছিল কোন ভাবে সরোজ মাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করার। কিন্তু কংসের লৌহকারাগারে বন্দী সে, কিভাবে যোগাযোগ করবে। তার যেমন ঘর থেকে বেরনো বারণ, বন্ধু বান্ধবদের ও বাড়ীতে আসা বারণ।এখন উপায় কি?
মানুষের চাওয়া আন্তরিক হলে, ঈশ্বর ও বুঝি একটা উপায় করে দেয়। কোন অভাবিত কর্ণার থেকে কিভাবে যে পথ বেরোয় তা ভেবেও পাওয়া যায় না। বাসন্তীও কল্পনা করতে পারে নি। তার বাবার অতি বিশ্বস্ত কাজের লোক, শীলাপিসি তাকে সরোজ মাস্টারের চিঠি এনে দেবে। আসলে শীলাপিসিই তাকে তার জন্ম থেকে এত বড় করেছে। তাই বোধহয় বাসন্তীর কষ্ট দেখে জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করে নি।
‘ সরোজমাসশাই বাসন্তীকে ভালো বেসেই এখান পড়ে আছেন। তিনি বাসন্তীকে ছাড়া বাঁচবেন না। বাসন্তিকে বিয়ে করতে চান তিনি।অল্প টাকাতেও তাঁরা সুখী জীবনই কাটাবেন। কোলকাতা গেলে তিনি মোটা টাকার টিউশন জুটিয়ে নেবেন।কোন চিন্তা নেই, বাসন্তীর জীবনের দায়িত্ব তার।শুধু বাসন্তী কোন উপায়ে বেরিয়ে আসুক। তারপর সরোজ মাস্টার বুঝে নেবেন।’
এমন ভালোবাসার আকুল আহ্বানে অষ্টাদশী বাসন্তি কি ভাবে নিজেকে ঠিক রাখে? তার মনেও যে ভালোবাসার ঢেউ আছাড়ি-পিছাড়ি খায়। সে ও তো মিলিত হতে চায় তার ভালোবাসার মানুষের সাথে,তার দয়িতের সাথে।দিনরাত উপায় ভাবে, কিভাবে বাড়ীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে সরোজবাবুর কাছে পৌঁছানো যায়। একটাই সুবিধা ছিল, শীলাপিসি তাদের চিঠি দেওয়া নেওয়ার কাজটা করে দিত। কোন কিছুর বিনিময়ে নয়, একান্ত বাসন্তীতে ভালোবেসে।
একদিন রাতে হঠাৎ ই সুযোগটা এসে গেল। রাতের দিকে বিষ্টু সর্দারের হঠাৎ বুকের যন্ত্রণা শুরু হলো। কর্মচারীদের হাঁকডাকে সকল প্রতিবেশী ছুটে এলো। স্থানীয় ডাক্তারকেও কে যেন ডেকে এনেছে। ডাক্তার বাবু দেখে শুনে বললেন —“কার্ডিয়াক ই মনে হচ্ছে। তবে এখানে এনার চিকিৎসা সম্ভব নয়। আই সি ইউ বা অন্যান্য সুবিধা নেই এখানে, সর্দারবাবুকে কোলকাতার কোন ভালো হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এ্যাম্বুলেন্স ডাকুন, আমি সঙ্গে যাচ্ছি। আপনারা কে কে যাবেন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন।” সবার সঙ্গে বাসন্তিও কাঁদতে শুরু করছিল। মা টাকা কড়ি একটা ব্যাগে ভরে নিলেন যতটা সম্ভব। কত লাগবে কিনা কিছুই তো ধারনা নেই। বাসন্তীর মামার বাড়ী সুন্দরবনের একটু ভিতর দিকে,তাই তাদের আসতে সময় লাগবে। বাড়ী ভীরে ভীরাক্কার, গ্রামের সব লোক এসে জমা হয়েছে।মা ডাক্তারবাবুকে ভরসা করে ছোটকাকুকে নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সে বেরিয়ে গেলেন। পাড়ার প্রায় সব লোক হারিকেন হাতে বেরিয়ে এসেছিল বিষ্টু সরদারের হাসপাতাল যাওয়া দেখতে।
ওদের নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সটা অযথা জোরে আওয়াজ করতে করতে স্পীডে চলে গেলো। গ্রামের লোকও বিষ্টুর মঙ্গল কামনা করতে করতে যে যার বাড়ী ফিরে গেল। সবার মধ্যে একটা গুঞ্জন চলছে – “বড়ো ভালো মানুষ এই বিষ্টু।গ্রামের দোল দুর্গোৎসব থেকে মানুষের দূঃখ কষ্ট সবে তেই সে জড়িয়ে থাকে। এখন ভালোয় ভালোয় যেন ঘরের ছেলে ঘরে ফেরে”।
এই ফাঁকে বাসন্তী অন্ধকার আর বাড়ীর লোকের শোকগ্রস্ততার আড়ালে কখন সটকে পড়েছিল কেউ দেখেনি। না, সে দিন বাসন্তীর কাছে তার প্রেম এতটাই প্রায়রিটি ছিল যে, তার বাবার এই অবস্থায় কি হবে, না হবে মাথায় আসেনি একবারও। তাকে সরোজের কাছে পৌঁছাতে ই হবে। বাবাকে সে নিশ্চয় ভালোবাসে, তবে তার জন্য পরে খবর নেওয়ার অনেক সময় পাবে। এখন সরোজের কাছে পৌঁছানোই তার একমাত্র লক্ষ্য। অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে নিজেকে আড়াল করে সে বাজারে পৌঁছালো।
বিষ্টু সর্দারের হার্ট এ্যাটাকের খবর ছড়িয়ে পড়তেই দোকানপাট ঝুপঝুপ করে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সব লোক চলে গেল বিষ্টু সর্দারের বাড়ী। সরোজ মাস্টার বটতলার আটচালায় উঠে বসল একটু। তার একবার যাওয়া উচিত কিনা বুঝে উঠতে পারে না। বিষ্টু র প্রতি তার কোন টান নেই।কিন্তু বিষ্টু তো বাসন্তীর বাবা। সরোজ ওদের বাড়ী গেলে তারা কিভাবে নেবে? আর, সব শুনে একবার না গেলেই বা বাসন্তী তাকে কি ভাবে নেবে? কেমন যেন গুলিয়ে যায়।
অন্ধকারে থাকতে থাকতে সরোজমাস্টারের চোখ বেশ তীক্ষ্ণ হয়ে গেছে। অন্ধকারে ও বেশ দেখতে পায় আজকাল। অন্ধকারের মধ্যেই দেখতে পেল বাসন্তী সামন্তদের দোকানের পাশে দেওয়াল ঘেসে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। খুঁজছে নিশ্চয় তাকে। সরোজ এক লাফে ছুটে গিয়ে বাসন্তীকে জড়িয়ে ধরে। আদরে আদরে ভরিয়ে দেয় বাসন্তীকে। বাসন্তী বলে—- “আমাদের এখুনি চলে যেতে হবে, এখুনি তার জন্য খোঁজাখুজি আরম্ভ হবে”।
—- আসছি দাঁড়াও। বলেই সরোজমাস্টার দৌঁড়ে তার আস্তানায় গিয়ে জামাপ্যান্টা পড়ে কাগজপত্র, টাকা-পয়সা নিয়ে বাসন্তির হাত ধরে মাঠ ভেঙে হাইওয়ের দিকে দৌঁড় মারলো। কপাল ভালো, কোলকাতার দিকের একটা ফাঁকা বাস পেয়ে উঠে পড়ল।মাঝ রাতে কোলকাতা পৌঁছে তারা কালীঘাটে একটা ঘুপচি হোটেলে রাতটা কাটিয়ে দিল। পরের দিন এক পান্ডাকে ধরে সরোজবাবু বাসন্তীকে মন্দিরে বিয়ে করে নিল। সে দিনটা কালীঘাটেরই একটা ঝুপড়ি হোটেলে কাটালো তারা।ওটাই তাদের বাসর সেদিন । তারপর, কটাদিন তাদের শরীরী মহোৎসব চলল। ঘর থেকে বেরোনো নেই, বাইরে খেয়ে আসা ছাড়া,সবসময়ই দুজনে দুজনায় মত্ত। কয়েকবার হোটেল পাল্টে পাল্টে মাস তিনেক কাটিয়ে দিল তারা। সরোজবাবুর পয়সায় টান পড়ে যেমনি তখনই এক হোটেল ছেড়ে পালিয়ে এসে অন্য হোটেলে ওঠে। বিশাল বাক্সপ্যাটরা সাথে না থাকায় তাদের লুকিয়ে পালাতে অসুবিধা হয় না। বাসন্তীর বাবার খবরের জন্য খুব মন খারাপ করত। সরোজমাস্টার তাদের ধরা পড়ে যাবার ভয় দেখালেই সে চুপ করে যেত। বাসন্তীর হাতের সোনার চুড়ি, কানের দুল দুখেপে বেচে কদিন চালিয়েছে। কিন্তু সে আর কদিন? সরোজবাবু বুঝতে পারছিলেন এভাবে চালানো তার পক্ষে অসম্ভব। পয়সা কোথা থেকে আসবে। একটা ভদ্রস্থ ফ্লাট ভাড়া নিয়ে সংসার চালানোর মতো ক্ষমতা তার নেই। বাসন্তীও মাঝে মাঝে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফেলছে। আর সত্যি বলতে কি বাসন্তির প্রতি শরীরী টানও তার কমতে শুরু করেছে। সে তো আর বিশ- পঁচিশের যুবক নয়। সাতচল্লিশ বছরের প্রৌঢ়। অনেক দেখেছে এজীবনে। হয়ত তাও চালিয়ে নিত,কিন্তু পয়সার অভাবের জন্য আজকাল বাসন্তীকে মাঝে মাঝে তার বোঝা ঠেকছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
সরোজমাস্টারের সোনাগাছিতে একসময় নিয়মিত যাতাযাত ছিল। সে সূত্রে সোনাগাছির সাবিত্রী মাসীকে সে চিনত। একদিন সাবি মাসির সাথে কথা বলে এসে, বাসন্তীকে নিয়ে এসে সোনাগাছিতে একটা ভাড়া ঘরে তুলল। বাসন্তিকে বোঝালো, এখানে কটা দিন কাটিয়েই তারা ভালো ঘর নিয়ে নেবে। বাসন্তির বয়সটা নেহাতই কম, আর হাজার হলেও গ্রামের মেয়ে। সকালে ঢুকেছে এই ঘরে তাই বিশেষ কিছু বোঝেনি। বাসন্তী কে দরজা বন্ধ করে রেস্ট নিতে বলে সরোজ মাস্টার নতুন বিছানার চাদর, মগ- বালতি কেনার নাম করে বেরিয়ে গেলো।বাসন্তী স্বামীর ওপর সরল বিশ্বাসে ঘরে বসে থেকে থেকে ঘুমিয়ে পড়েছিল।
ঘুম ভাঙলো সাবিত্রী মাসির ডাকে।চোখ রগড়ে বাসন্তী জিজ্ঞেস করেছিল—-” সরোজ ফেরে নি এখনো?”
—– সে আর ফিরবে না বাপু।ফেরার জন্য সে যায়নি।এটা বেশ্যাপাড়া। সে তোমাকে আমার কাছে বেচে দিয়ে গেছে। সাবিত্রী মাসি বলেছিল।
—— হতে পারে না। মিথ্যে কথা বলছেন আপনি। সে আমার স্বামী। আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছি। সরোজ আমাকে খুব ভালোবাসে।
—– তোমার বয়স খুবই অল্প মেয়ে। তাই বোঝেনি, এরা বিক্রি করে দেওয়ার জন্যই ভালোবাসে। ও সব ভালোবাসা টাসা ভুলে যাও। সকাল থেকে খাওনি কিছু। পেটে একটু কিছু দাও।
—– না। আমি কিচ্ছু খাবো না। আগে সরোজ আসুক। তারপর খাব।
—- ভুল করছো মা। তোমার সরোজ আর কোনদিনই তোমার কাছে আসবে না।
—– আসবে না? বাসন্তী কাঁদতে থাকে– কাঁদতে থাকে। সকলেই একটা সহানুভূতি পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখে তাকে বটে তবে এটা এখানকার নিত্য ঘটনা। যে যার ব্যবসার কাজে চলে যায়।

বাসন্তী মেঝেতে বসে সরোজের মাথাটা কোলে তুলে নেয়। মাথার পিছন দিয়ে তখনও রক্ত বেরুচ্ছে।বাসন্তী গামছাটা পাল্টে নেয়।রাসু পাড়ার সীতারাম ডাক্তারকে ডাকতে গেছে।বাসন্তীর মনে পড়ে যায়– এই লোকটার জন্যই আজ বাসন্তীর এই পতিতার জীবন। এই লোকটার বিশ্বাসঘাতকতায় তাকে সহ্য করতে হয়ে অসহনীয় শারীরিক নির্যাতন, অকথ্য অত্যাচার আর এখন সহ্য করতে হচ্ছে রোজকার বদনামী ইতর জীবন। তার জীবন ছারখার হয়ে গেছে।আর পাঁচটা মেয়ের মতো একটা ভরা সংসার পায়নি শুধু এই লোকটার জন্য। সীতারাম ডাক্তার এসে মাথার পিছনের দিকটার চুলগুলো কেটে পাঁচটা সেলাই করে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে গেলো।নাড়ী দেখে বললো কিছু হয়নি তেমন,খুব দুর্বল বলে অজ্ঞান হয়ে গেছে।একটু গরম দুধ খাইয়ে দাও এবেলা। কদিন ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করলেই ঠিক হয়ে যাবে।
বাসন্তী সকলের সাহায্য নিয়ে সরোজকে বিছানায় শুইয়ে দিল। যত অন্যায়ই করে থাকুক, সরোজই তো তার বিয়ে করা স্বামী। তার শাঁখা-সি্দুর। তার সংস্কার- তার ইহকাল।

——————————————–

“মাতৃভূমি ভূস্বর্গ”
—-রেশমা বেগম
১৬.১০.২০২২ ইং

জননী জন্মভূমি কথা কয় কোমল স্পর্শে
চিত্তের রাগ রাগিনী খেয়ায় দোলায় স্বরবর্ণে,
আকাশের মমতার চোখ স্বচ্ছতায় তাকিয়ে রয়
মাতৃভূমি ভূস্বর্গ,অভয় অরণ্য রক্তকণিকায় বয়।
তোমায় ভালোবাসি শুভ্র উষসীর শিশির বিন্দুতে
বাতাসের নহর,মাটির মোহরের ঘ্রাণ হৃদ-সিন্ধুতে,
পাকাধানের মাতাল গন্ধ চুরি করে সর্বস্বত্ব
অগ্রহায়নে ধান কাটার মন্ত্রে ফসলিরা জব্দ।
গ্রাম্য শ্যামলিমায় দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের আদিখ্যেতা
মাতৃভূমির অলিন্দে মরণ বাশরীতে করি সখ্যতা,
দূরে,বহুদূরে চলে যায় মুগ্ধ তৃষিত-আঁখি
তোমার চরণে “মাতৃভূমি” আমার নিজস্বতা রাখি।
বসুন্ধরায় অলংকৃত গাছ-গাছালির মৈত্রীর বন্ধন
পলকহীন মাধুর্য্য খুঁজে পায় রূপকারের অংকন,
মাতৃভূমি তোমার অগণিত দান করেছে পরিপুষ্ট
জাতি যেন অক্ষত রাখতে পারে তোমায় সন্তুষ্ট।

ঢাকা, বাংলাদেশ।

Powered by themekiller.com