Breaking News
Home / Breaking News / ফরিদগঞ্জের রূপসা বাজার ব্যবসায়ী কমিটি গঠনে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ, ক্ষোভ

ফরিদগঞ্জের রূপসা বাজার ব্যবসায়ী কমিটি গঠনে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ, ক্ষোভ

আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ফরিদগঞ্জ: ফরিদগঞ্জে বাজার ব্যবসায়ী কমিটি গঠনে অনিয়ম ও স্বেচ্ছারিতার অভিযোগ উঠেছে। গঠনতন্ত্র, ব্যবসায়ী, অতীত ঐতিহ্য সব কিছুই উপেক্ষা করা হয়েছে। বাজারের বাইরে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে বসে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছে। ব্যক্তির পছন্দ, পদের অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতা হয়েছে- অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। সমস্ত অভিযোগের তীর সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এস. এম. কাউছার উল আলম কামরুল এর দিকে। ১৯-এ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে সাত ঘটিকায় ফেসবুকে ছবি ও তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ও ঘোষণা দিয়েছেন সংািশ্লষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান। এর আগে ১৫ই সেপ্টেম্বর অন্য আর একটি কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এতে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন উপজেলার রূপসা (উঃ) ইউনিয়নের রূপসা বাজার ব্যবসায়ীগণ। ঝড় উঠেছে ফেসবুকে।

সংশ্লিষ্ট রূপসা বাজার ব্যবসায়ীগণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর হতে সেখানে কমিটির মাধ্যমে ব্যবসায়ীগণ নিজেদের ছোট/বড় সমস্যা সমাধান করে এসেছেন। চলার পথে তারা গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করেছেন। প্রথমে সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি হলেও গত প্রায় দেড় যুগ যাবত নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি হয়ে আসছে। তাতে নিরাপত্তা প্রদানসহ উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা ছিল। ১৯-এ সেপ্টেম্বর রাতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এস. এম. কাউছার উল আলম কামরুল এর ফেসবুক আইডি থেকে চেয়ারম্যান এর প্যাডের পাতায় পুর্ণাঙ্গ কমিটির একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে, নির্বাচন বিহীন ও একক কর্তৃত্বে কমিটি ঘোষণা দেয়ায় ব্যবসায়ীগণের মধ্যে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ হয়েছে। তারা ঘোষিত কমিটি মেনে নেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন। ব্যবসায়ীগণ জানিয়েছেন, এর আগে ১৫ই সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যানের ফেসবুক আইডি থেকে অপর আর একটি কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। পরে তা মুছে ফেলা হয়। ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোঃ হানিফুর রহমান মাসুদ এর নাম ছিল।

রূপসা বাজারের ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীগণ বলেছেন, কমিটি হয়েছে। কোনো ব্যবসায়ী জানেন না। কোনো সভা হয়নি। সাধারণ ব্যবসায়ী, পূর্বববর্তী আহবায়ক ও নির্বাচিত কমিটির কাউকে আহবান করা হয়নি। নির্বাচন ছাড়া আচমকা একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে ফেসবুকে। স্যবসায়ীগণ প্রশ্ন রেখে বলেছেন, নির্বাচন ছাড়া একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় কিভাবে। এতে, নিন্দার ঝড় উঠেছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে ক্ষোভ ও নিন্দার প্রকাশ পেয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, ১৯-এ সেপ্টেম্বর রাতে ঘোষিত কমিটির সভাপতি পদে মোঃ আজিম হোসেন, সিনিয়র সহসভাপতি পদে মোঃ আকবর হোসেন ফারুক খান, সহসভাপতি পদে মোঃ মাহাবুবুর রহমান গাজী ও মোঃ সেলিম খান (সুমন পাটওয়ারী), সাধারণ সম্পাদক পদে এস এম সোহেল রানা, সহ সাধারণ সম্পাদক পদে মোঃ আবদুস ছাত্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মোঃ ফরহাদ হোসেন মুন্সী, কোষাধ্যক্ষ পদে শ্রীবাস দেবনাথ, দপ্তর সম্পাদক পদে মোঃ সরওয়ার গাজী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে আবুল বাসার টিটু পাটওয়ারি, সদস্য পদে যথাক্রমে মোঃ শরীফ উল আলম, মোঃ ফরহাদ হোসেন শিপন, মোঃ আনিসুর রহমান, মোঃ আজাদ মিয়া ও তারিকুল ইসলাম।

নতুন কমিটির বিষয়ে সাবেক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেছেন, তার (চেয়ারম্যান) মর্জি মতো অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পকেট কমিটি করেছেন। ব্যবসায়ী কুদ্দুস শেখ ও নাঈম বলেছেন, কমিটি হইছে শুনছি, জানি না (বিস্তারিত), রাত্রে কমিটি হইছে শুনছি, সকালে ফেসবুকে দেখছি। রফিক বলেছেন, কমিটি হইছে শুনছি, দোকানে কমিটির তালিকা দিয়া গেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ১০ বছর বাজারে বাবাসহ ব্যবসা করেছি। ব্যবসায় মার খেয়ে এখন দোকানে চাকরি করি।

নিলম ডিফারেন্ট কালেকশন এর মালিক আবদুল কাদের মিলন পাটওয়ারী বলেছেন, রূপসা কয়েক শত বছরের পুরনো বাজার। বাজারের কমিটি গঠন হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। ব্যবসয়ীদের সাথে আলাপ করলে একই কথা বলবে। আগের ধারাবাহিকতায় নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি হলে সঠিক হতো। নির্বাচিত কমিটি স্ট্রং হয়। কমিটমেন্ট থাকে। এখন ব্যবসায়ীরা ওদের কথা মানবে না। তোমরা কিসের ক্ষমতায় কথা বলছো- এমন প্রশ্নের উত্তর ওরা দিতে পারবে না। কমিটি করার পর চিঠি পাঠালো। এর মানে ব্যবসায়ীরা জানেই না একটি কমিটি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা অজ্ঞ, মুর্খ না। পুর্ণাঙ্গ কমিটি হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। এটা হাস্যকর কমিটি।

কমিটির সাবেক সভাপতি হাজী জুয়েল বলেছেন, চেয়ারম্যান বাজারে যে সভা ডেকেছিলেন, সেখানে শতকরা ৯০ জন ব্যবসায়ী ছিল না। সেখানে কমিটির বিষয়ে কোন আলাপ হয়নি। উনি বাজারের বাইরে গিয়ে ইউপি কার্যালয়ে বসে কমিটি করেছেন। কমিটি করার কোন এখতিয়ার উনি রাখেন না।
নাজিম উদ্দিন পাটওয়ারী, ডিলার (৩০ বছর কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন) বলেছেন, আমরা একটি সংবিধান তৈয়ার কইরছি। সেইখানে উল্লেখ ছিল নির্বাচন ছাড়া কমিটি হওয়ার নিয়ম নাই। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ওই কমিটি বিলুপ্ত হবে। তিন মাসের জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক কমিটি হবে। ওই কমিটি নির্বাচন আয়োজন করবেতাদের কেউ প্রার্থী হতে পারবে না। ইউএনও সাহেবকে লিখিতভাবে জানাবে। উনি প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ করবেন। আমি উনাকে বলেছিলাম কয়েকজন অভিজ্ঞ লোক দ্বারা একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করেন, যারা জানে, শুনে, বুঝে। উনি আমার কথা কথা শুনেন নাই। এটা তো ব্যবসায়ীদের কমিটি হয় নাই।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মিলন চৌধুরী বলেছেন, কিছুদিন আগে বাজারে একটি মতবিনিময় সভা হয়েছে। কিভাবে বাজারের উন্নয়ন ও অটোরিক্সার সমস্যা দূর করা যায়- ওই সভায় এমন কথা হয়েছে। আমি সভায় ছিলাম ও বক্তব্য রেখেছি। সেখানে নতুন কমিটি করার জন্য চেয়ারম্যানকে কোন ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। নির্বাচন ছাড়া পুর্ণাঙ্গ কমিটি হয় না ভাই। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ করে এইটা টিকবে না।
বাজার সংশ্লিষ্ট এলাকার কবির হোসেন বলেছেন, এই কমিটি ছয় মাসের জন্য গঠন করেছেন এবং এরা নির্বাচন আয়োজন করবেন বলে চেয়ারম্যান দাবী করেছেন। এটাই যদি হয়ও, মনে রাখতে হবে এই কমিটির কেউ পরবর্তীতে নির্বাচন করতে পারবেন না।

সংশ্লিষ্ট ইউপির চেয়ারম্যান এস. এম. কাউছার উল আলম কামরুল ইউপি কার্যালয়ে বসে বলেছেন, নির্বাচন হলেই ভালো। গঠণতন্ত্র নেই। সর্বশেষ আহবায়ক কমিটির কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করে নাই। পাহারাদাররা আমার সাথে যোগাযোগ করে। ব্যবসায়ীদের চাপ ছিল কমিটির ব্যপারে। ২রা সেপ্টেম্বর বিকালে কমিটির বিষয়ে বাজারে সভা ডেকেছি। মিলন চৌধুরীসহ ব্যবসায়ীরা ছিল। সভায় কমিটি করার জন্য আমাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়। আমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তালিকা নিয়েছি। সেই তালিকা দেখে বাছাই করে ১৫ জনকে ডেকে কমিটি করেছি। ইউএনওকে জানিয়েছি। কেউ কমিটি না মানলে আমার কিছু যাবে আসবে না। আমার কাছে মনে হয়েছে এরা পারবে। আগের কমিটির ওরা তো কিছুই পারে নাই। হিসাব নিকাশও নাই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ইউপি কার্যালয়ে বসে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়। তিনি রিসিভ করেননি।

কমিটি গঠন ও নিয়মবিধি জানার জন্য মুঠোফোনে আলাপ হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক চাঁদপুর সরকারী কলেজে অধ্যক্ষ অধ্যাপক অসিত বরণ দাস এর সঙ্গে। তিনি বলেছেন, তাদের (রূপসা বাজার ব্যবসায়ী কমিটি) কমিটি গঠনের নিয়ম কি তা আমার জানা নেই। তবে, ব্যবসায়ীগণ কমিটি করতে চাইলে তারা ব্যবসায়ীদের সভা ডেকে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে নিয়মবিধি জেনে ও বুঝে কমিটি গঠন করতে পারেন। এ জন্য একটি গঠনতন্ত্র থাকা আবশ্যক। যদি না থাকে তবে, ব্যবসায়ীগণ তিন মাসের জন্য একটি অন্তবর্তী ও দক্ষ কমিটি গঠন করতে পারেন। ওই কমিটি গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করাসহ যাবতীয় কার্য্য সম্পাদন করে ব্যবসায়ীদের দ্বারা অনুমোদন করবেন। অতঃপর, আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করবেন। অন্তর্বর্তী কমিটির কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া পুর্ণাঙ্গ কমিটি হতে পারে না। তারা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা, আয়-ব্যয় করবেন কিভাবে।

Powered by themekiller.com