শ্যামল ব্যানার্জী
গদ্য কবিতা — ভোলা মাঝি।
গঙ্গার জল একদম স্থির।
জোয়ার আসবে একটু পরেই,
হাল ধরে ভোলা মাঝি বড় চুপচাপ
এমনটা সে থাকেনা কোনো দিন –
আজ নিরবতায় নির্বাক কিছুটা উদাসীন।
ভোলা আমার চেনা খুব আপন একটা মানুষ,
শুধু ভোলা কেন, ওরাও তো নাম- দুখী, লছমন মাঝি আমার খুব কাছের মানুষ।
সেই দশ বছর বয়সে একদিন
বিহার থেকে এসেছিলো বাবার হাত ধরে,
সেই তখনই দাঁড় বাওয়া নৌকায়,
শক্ত হাতে হাল ধরা রপ্ত করে নেয়।
আজ মাঝবয়েসী ভোলা , হাজার লোকের
গঙ্গা পারাপারের খেয়া ঘাটের কান্ডারী।
কিন্তু, ভোলার মনের খবর ক জনা নেয়।
আমি জানি, ভোলা কেন উদাসীন
কেন, একলা থাকে আজকাল —
মনে যে জ্বলছে ওর তুষের আগুন
ধিক ধিক করে,
হাল ফিল বিক্ষুব্ধ.. বিক্ষোভে
ফেঁটে পরতে চায় চারপাশে
জ্বালিয়ে দিতে চায়, সৌখিন বিলাসী নীতি কথা।
অগ্নি বলয়ে নিজেকে ঢেকে রাখে উত্তরহীন।
ভোলা সেদিন একটা কথাই জানতে চেয়েছিল-
শিক্ষিত বিবেকের কাছে,
চোদ্দ বছরের মেয়েটা আমার কি দোষ করেছিল?
আপনারা কেউ বাঁচাতে পারলেন না সব জেনে.. চোখের সামনে দেখে।
কেন স্কুল থেকে ফিরতে পারলোনা মেয়েটা?
আপনাদেরই চোখের সামনে দিয়ে তুলে নিয়ে গেলো…
বেজন্মা কতগুলো নর পশু।
কেন এমনটা হয়, কে বলে দেবে।
এক নির্ভয়া, দামিনী, সুজেট বারাসাত আরও আরও, আজ
ভোলার মেয়েও চলে গেছে ওদের নামের তালিকাতে।
ভোলা, তোমার মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি আমরা,
এই শিক্ষিত ঘুন ধরা সমাজের কাছে নেই কোনো জবাব।
যদি পারো আমাদের ক্ষমা করে দিও।
জানি, প্রতি দিন নৌকা ভিড়িয়ে, পারের দিকে চেয়ে থাকো
যদি সে একবার ভুল করে আসে।