Breaking News
Home / Breaking News / সংলাপের অভ্যন্তরে হাস্যরসে প্রাণবন্ত ‘ভাবগম্ভীর’ পরিবেশ

সংলাপের অভ্যন্তরে হাস্যরসে প্রাণবন্ত ‘ভাবগম্ভীর’ পরিবেশ

ডেক্স রিপোর্ট ঃ
আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপে বেশ খোলামেলা আলোচনাই হয়েছে দুই জোটের নেতাদের মধ্যে। সেখানে পরস্পরের বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণাত্মক বক্তব্যও ছিল না। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বভাবসুলভ রসিকতা ও ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে নানা টিপ্পনীও বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সরস বক্তব্য সংলাপের পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে তোলে। যদিও সংলাপ শেষে আলোচনায় ‘সমঝোতা’র বিষয়ে কোনো পক্ষই ইতিবাচক কোনো অগ্রগতির আশ্বাস দিতে পারেনি।
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দল ও ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে দ্বিতীয় দফার এই সংলাপ হয়েছে। সেখানে ১৪ দলের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমসংখ্যক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। দুই পক্ষের সাত নেতার সঙ্গে কথা বলে সংলাপের বিস্তারিত জানা গেছে।
‘নির্বাচনকালীন সরকার’ প্রসঙ্গ: কয়েকজন নেতা জানান, ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবিত ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’-এর রূপরেখা তুলে ধরার পর এ নিয়ে কথা বলেন দু’পক্ষের নেতারা। আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম এ দাবির অসারতা তুলে ধরে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যে অনির্বাচিত সরকারের দাবি তুলেছে, সেটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক; আদালতের রায়ের সঙ্গেও মেলে না। ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলায় আপিল বিভাগ তার রায়ে বলেছেন, অনির্বাচিত সরকার সংবিধানের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ওই রায়ের শেষ অংশে গিয়ে বলা হয়েছে, সংসদ চাইলে আরও দুটি টার্ম তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা রাখতে পারে। এটা রায়ের কোনো অংশ নয়, পর্যবেক্ষণ। তাই সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের বাইরে গিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা যাবে না। এ ছাড়া আইনে বলা আছে ‘যদি সংসদ চায়’। কিন্তু এখানে তো সংসদ চায় না। ফলে নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আনার আইনগত ও সাংবিধানিক কোনো ভিত্তি নেই।
তিনি বলেন, কথার কথা, ধরা যাক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো এবং ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটা নির্বাচন দিল। এখন এক্স, ওয়াই, জেড কেউ একজন যদি হাইকোর্টে রিট করে বলেন, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেআইনি ছিল। কাজেই ওই নির্বাচনে গঠিত সরকারও বেআইনি। তাহলে আরও আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হবে। নির্বাচিত সরকারও অবৈধ হয়ে যাবে। যেমন পাকিস্তানে সরকার অবৈধ ঘোষিত হয়েছিল, ভারতে ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচন বাতিল হয়েছিল। বাংলাদেশেও সেটাই হয়ে যাবে।
এ ক্ষেত্রে আদালত থেকে সংবিধানের সপ্তম, অষ্টম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণার বিষয় তুলে ধরে রেজাউল করিম বলেন, আমরা যদি এখানে সমঝোতার ভিত্তিতেও নির্বাচন করি, সেটাও আদালত অবৈধ ঘোষণা করবে। তখন জাতি আবারও অন্ধকারে পড়ে যাবে।
ড. কামাল হোসেনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট বলেছিল, সংবিধানের ভেতরে থেকেই নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্মুলা দেওয়া যাবে। কিন্তু তারা দেখাক, সংবিধানের কোন ধারা কিংবা কোথায় একজন প্রধান উপদেষ্টা ও ১০ জন উপদেষ্টাকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলা আছে। তারা আজ যে ফর্মুলা দিয়েছেন, সেটি তো সংবিধানের মধ্যে পড়ে না।
জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, সরকার পক্ষ এভাবে টেকনিক্যাল সমস্যা তুললে আলোচনা এগোবে না। টেকনিক্যালি সবকিছুতে সংবিধান টেনে আনলে সমঝোতার পথ থাকে না।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমঝোতার ভিত্তিতে এটার সমাধান কোথায়? এই পর্যায়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা কোনো সমাধান দিতে না পারায় আলোচনা আর অগ্রসর হয়নি।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে ঐক্যফ্রন্টের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী গঠিত নিরপেক্ষ সার্চ কমিটির মাধ্যমে বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এখন কমিশন পুনর্গঠন করতে হলে, সেটাও রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। এখানে সরকারের কিছু করার নেই।
খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির জবাবে আওয়ামী লীগ নেতারা জানতে চান, সংবিধানে কোথায় আছে, সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্বাহী বিভাগ খালাস দিতে পারবে? ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘অন্তত এতটুকু হোক, আমরা আপিল করলে যেন জামিনে আপত্তি দেওয়া না হয়।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালত তার নিজস্ব গতিতে চলবে। খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনে মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন যদি বাধা দেয়, তাহলে এক বিষয়, যদি বাধা না দেয় তাহলে আরেক বিষয়। এখানে সরকারের কিছু করণীয় নেই। এরপরও যদি কিছু করণীয় থাকে, সেটা সরকার দেখবে।
গায়েবি মামলা প্রসঙ্গ : সংলাপের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এক হাজার ৪৬টি ‘গায়েবি মামলা’ তথা রাজনৈতিক মামলা হয়েছে দাবি করে এ-সংক্রান্ত একটি তালিকা জমা দেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দাবি করেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, তার অধিকাংশ অসত্য, গায়েবি ও ভুয়া মামলা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তদন্ত ও যাচাই-বাছাই শেষে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিএনপির তালিকা আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এগুলো যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেন।
এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ‘গায়েবি মামলা’র তালিকা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।
বিনা কারণে হয়রানি ও গ্রেফতার নয় : ঐক্যফ্রন্টের বেশিরভাগ নেতার আরেকটা দাবি ছিল, বিনা কারণে আর যেন বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার কিংবা হয়রানি না

Powered by themekiller.com