আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটনঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মুহূর্তে বাংলা কথাসাহিত্যে যে কয়েক জন লেখকের হাতে বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয়েছিলো তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন “মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়”।
বিহারের দুমকা নামের একটি শহরে ১৯০৮ সালের আজকের দিনে অর্থাৎ ১৯ মে জন্মগ্রহণ করেন মানিক বন্দোপাধ্যায়। বাবা হরিহর বন্দোপাধ্যায় এবং মা নীরদাসুন্দরী দেবী। চৌদ্দজন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম। সাহিত্যের পথে যাত্রাটা ছিল বেশ আত্মবিশ্বাসী। সাফল্যের খবর যেন জেনেই এসেছিলেন, এ পথে তাকে চলতে হবে আজীবন। প্রথম ছাপা গল্প ‘অতসী মামী’ও এই আত্মবিশ্বাসেরই ফসল। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অনার্সে পড়ার সময় এক বন্ধুর সাথে অনেকটা চ্যালেঞ্জ ধরেই যেন লিখেছিলেন গল্পটি। ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল সেটি।
প্রথমদিকে ভালো ফলাফল থাকলেও পরে আর পড়াশোনায় মন ছিল না। সে তো অনেকেরই থাকে না। কিন্তু মন নেই বলে দুম করে ছেড়ে দেবার মতো সাহস অনেকেই দেখান না। বাংলা সাহিত্যকে যিনি নিজের ধ্যান-জ্ঞান করে নিয়েছেন, তার পক্ষে আর বিজ্ঞানের হিসেব সইলো না। দাদাকে সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছিলেন তার প্রচণ্ড দৃঢ় ও বিশ্বাসী বক্তব্য, “দেখে নেবেন, লেখার মাধ্যমেই আমি বাংলার লেখকদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীতে স্থান করে নেব। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রের সমপর্যায়ে আমারও নাম ঘোষিত হবে।”
দাদা সুধাংশুকুমার বন্দোপাধ্যায় রীতিমতো বিজ্ঞানের পূজারী, ছোটভাইয়ের এহেন স্পর্ধা তাকে স্বভাবতই রাগিয়ে তুললো। টাকা দেওয়াও বন্ধ করে দিলেন। এদিকে সাহিত্যের সাথে সাথে যোগ হয়েছিল বাম-রাজনীতি। ১৯৪৪ সালে ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সাহিত্যেও এর প্রভাব লক্ষ্যণীয়।
পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাসটি লিখতে প্রায় ৪/৫ বছর সময় নিয়েছিলেন। এটি তার অন্যতম এক ‘মাস্টারপিস’। পুতুলনাচের ইতিকথা ও পদ্মানদীর মাঝি অনেকগুলো ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার মৃত্যুর পরে প্রকাশ পায় মাঝির ছেলে (একমাত্র কিশোর উপন্যাস), শান্তিলতা (উপন্যাস), মানিক বন্দোপাধ্যায়ের কবিতা (একমাত্র কবিতা সংকলন), লেখকের কথা (প্রবন্ধ সংকলন), অপ্রকাশিত মানিক বন্দোপাধ্যায় (ডায়েরি ও চিঠিপত্রের সংকলন)।