Breaking News
Home / Breaking News / দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক দৈনিক শব্দনগরের আজকের সেরা ছয় সাহিত্য

এক অসহায় মায়ের চিঠি….
রুণা ব্যানার্জি মিত্র
০৮|০৫|২২

শেষ চিঠি ..

বাবী,
জানি না এই চিঠি তুই কবে পাবি বা পেলেও তোর সময় হবে কি না পড়ার।এখন সময় না হলে রেখে দিস বাবা, কোন এক কোণে,হয়তো সময় পড়ার সময় করে দেবে একদিন।
কত দিন তোকে দেখিনি বাবা!!ph করাও কবেই বন্ধ করে দিয়েছিস।ভাবিস না এ আমার অভিযোগ।তুই ভালো থাকলেই আমার শান্তি আমিও ভালো থাকবো।
মাঝে মাঝে এখানে সবাই কাগজে যখন তোর ছবি দেখিয়ে বলে, “ঠাকুমা, তোমার ছেলের ছবি বেড়িয়েছে কত বড়ো বড়ো লোকেদের সাথে।”বুকটা ভরে যায় আমার জানিস।মনে পড়ে যায় তোর ছোট বেলার সব স্মৃতি।কত দিন তোর জন্ম দিনে পায়েস করে দিইনি।আমার হাতের শুক্ত ছারা কোথাও খেতিস না শুক্ত। তোকে যখন সাইকেলে করে School দিয়ে আসতাম তখন তুই শুধু বলতিস”মা,আমি যখন তোমার মতো বড়ো হবো তুমি তখন আমার মতো ছোট্ট হয়ে যাবে আর আমি ও তোমায় সাইকেল করে School দিয়ে আসবো।আমার ছুটির কত্ত আগে ছেলে ধরার ভয়ে যেমন তুমি দাঁড়িয়ে থাকো,তোমার ছুটির আগেও আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবো মা না হলে তোমায় ছেলে ধরা ধরে নিয়ে যাবে।তাহলে কে আমায় খাইয়ে দেবে?আমার সাথে খেলবে?আমার ঘোড়া হয়ে পিঠে করে সারা ঘর ছুটবে?”আজ সত্যি তুই অনেক বড়ো হয়ে গেছিস রে…তুই তোর কথা রেখেছিস বাবা!!সাইকেল না বড়ো গাড়ি করে রেখে গেছিস বৃদ্ধা আশ্রমের এই School. তবে ঐ একবার।আর আসিসনি।হয়তো সময় হয়নি তোর….
আজ বড়ো বেশি সব কথা মনে পড়ছে তোকে নিয়ে।ঘুম থেকে উঠে আমায় না দেখতে পেলে কত কেঁদেছিস কত বড়ো বয়সেও।”হ্যাঁ রে বাবা,আজ আর চোখ মন কিছুই কাঁদে না বল মার জন্য”?সত্যি তোর বড়ো হওয়ার সাথে সাথে আমি অনেকটাই ছোট হয়ে গেছি রে…
আমার ছুটির ঘন্টা অনেকদিন বেজেছে।বসে আছি তোর আনতে আসার অপেক্ষায়।মাথায় আমার আজ আকাশ ভাংছে বাবী।দুচোখ ভরে কালো মেঘের ঘনঘটা।নিশ্বাসে দম বন্ধ করা গুমোট।বৃষ্টি নামবে হয়তো জীবন জুড়ে ।School এবার বন্ধ হবে আমার।থাকার অনুমতি নেই আর।তাই একাই ফেরার পথে পা বাড়িয়ে দিলাম।
ভালো থাকিস বাবা।খুব ভালো থাকিস।সাবধানে থাকিস।আজকাল তোর অনেক পরিশ্রম রোগা হয়ে গেছিস অনেক।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস।গাড়ি সাবধানে চালাস।তুই বৌমা নাতনিকে আমার বুক ভরা ভালোবাসা আর্শীবাদ দিস।কিছুই করে যেতে পারলাম না তোদের জন্য।ক্ষমা করিস।
আজ তোর কাজের সময় থেকে একটু সময় আমায় ধার দিস।অনেক ক্ষতি হবে জানি।তবুও এ দয়া টুকু তুই না করলে আমার মুক্তি নেই বাবা!!
আমি সারা জীবন স্বাধীন ভাবে চললেও তোকে না বলে কখন কোথাও যাইনি।তুই ফিরেই ডেকে বলবি”মা,খিদে পেয়েছে খেতে দাও”।তাই…
তাই আজও বলে গেলাম সময় যদি পাস তো সাড়া দিস।তিন ঘন্টা সময় আছে Death certificate দিতে।সবার্থপরের মতো তোকে একা রেখে গেলাম।সাবধানে থাকিস।
আসছি বাবা…..

ইতি
তোর মা

——————————————–
কবিতা – – বার্ধক্যের বারানসী
শ্যামল ব্যানার্জী
০৮/০৫ /২০২২

বার্ধক্যের বারানসী দেখো, আজ
বিবর্নতায় সাদা থান প’ড়ে আছে,
নীল আসমান রাখেনি কোথাও জমিনে তার
নীল রঙ,
সবুজ কিংবা লাল.. সব ধূসর সাদা।
বার্ধক্যের আস্তিনে কষ্টের অভিশাপ,
নির্জন সমুদ্র খোলা দ্বীপ যেন বুক পেতে আছে,
মদমত্ত যৌবনের আস্ফালন নিরুত্তাপ,
একঘর আসবাব পরিত্যক্ত থাকে
আর…
দিনগুলো ভাষাহীন নির্বাক।
ক্লান্ত অন্ড প্রসব করে যেতে যেতে
বিধবার অম্বাবুচি কিংবা অন্য উপবাসে
দিন কাটে অসহায়ের মতো,
প্রাণহীন নির্ঝরের জলছবি
আমরা কোথায় আছি,
পৃথিবী ক্রমশ ছোটো হয়ে গেছে
গোষ্ঠীর মতো বিভক্ত অঞ্চলে
সারা ইউরোপ থেকে পুরো এশিয়ায়।
শান্তিহীন দুশ্চিন্তার নগরিতে
আমি থাকি, তুমিও থাকো
তবু, মনে হয়, পরিচয়হীন এক পরিচয় নিয়ে বেঁচে আছি।
এ এক মুখোস রাজ, মৃত্যুর প্রহেলিকা
যেন ছেয়ে আছে দিগন্ত জুড়ে,
কোথায় প্রেমের কথা,
কোথায় বা স্বান্তনার অনুভূতি
এখন শুধুই একলা চলা।
তুমি ওপারে থাকো.. আমি এপারের ঠিকানা বিহীন,
মাঝখানে লক্ষ্মণ রেখা,
জানি কেউ ভালো নেই
যদি কাল কথা হয়,
বলে যাবো অনেক না বলা অসমাপ্ত বলা।

——————————————–

~সনেট ~

চিত্রা নদী
07.05.22

কখনো তুমি নিষ্ঠুর ক্রোধী স্রোতস্বিনি,
ভাসিয়ে নাও বসন্তের পল্লব দল,
কেঁপে কেঁপে উঠে সবুজের সমারোহ,
ঘোলাটে হয়ে আসে প্রিয়ার কালো চোখ,
হাতড়ে পায়না জীবনের জলছবি,
ঝিমানো এসে যায় কাকাতুয়ার ঠোঁটে,
উড়ে যায় পরিযায়ী স্বপ্নের বলাকা,
ভ্যাবাচেকা খায় বুননের আদি পাখা।

কখনো তুমিই মায়া~বুক ভরা পলি,
ঢেলে দাও ভরে দাও জীবনের গলি,
তোমার পালক-পরশে রাজ্যের ঘুম,
প্রতি পরতে চলে অদ্ভুত নাট্যপালা,
আকাশে বাতাসে বসে মধুকুঞ্জ মেলা,
চারিদিকে পড়ে যায় নবান্নের ধুম।

মহিউদ্দিন আহমেদ
নারায়ণগঞ্জ,বাংলাদেশ

উৎসর্গঃ~ অমর শিল্পী
এস এম সুলতান ।
© স্বপ্ন

——————————————–

শিরোনাম : অশ্রুভরা শ্রদ্ধাঞ্জলী
কলমে : সুরজিৎ পাল
তারিখ : ৮.৫.২০২২

মা তুমি যেমনই হও, তুমি তো আমারই মা,
রাগ, অভিমান, মায়া মমতায় গড়া যেন বিমুর্ত প্রতিমা,
তোমারই কোলে তোমারই ছায়াতলে,
লালিত আমার ছোট্ট বেলা।
তোমার স্নেহ স্পর্শে , তোমারই দুগ্ধের, তোমার মায়া খেলা,
চিনতে পারি সব কিছু, নেই কোন অবহেলা।
মা যে দিন দিলে পাড়ি, মনে হয় ছিল মোর সাথে আড়ি।
বেদনা মথিত খবরের সাথে দৃষ্টি তে তোমার মুখখানি।
এ সেই মুখ বিশ্বের মায়েদের মতো সুন্দর সেই মুখ,
মৃত্যুই পারে ভোলাতে তোমার মমতাময়ী রূপ।
আজ মাতৃ দিবসের সন্ধ্যা লগ্নে,
ভাবিক ভাবনায় সিক্ত নয়নে লাগে শ্রাবণ।
কেমনে ভুলি মার পরলোক গমন।
অশ্রু শ্রদ্ধাঞ্জলী তে পদযুগল আজীবন সিদ্ধ,
আমার মার হৃদয় থাক চির ঋদ্ধ।

——————————————–

বিশ্বকবি স্মরণে
মজিবুর রহমান
০৮.০৫.২০২২

পঁচিশে বৈশাখ এই সুন্দর ভুবনে তুমি করেছিলে অবতরণ;
তোমার আভায় দীপ্ত হয়েছিল সেদিন ধরণীর সুবিশাল অঙ্গন।
সহস্র নক্ষত্রের আলো দিয়ে সাজালে তুমি সংস্কৃতির জগৎ;
পূর্ব থেকে পশ্চিম তোমার আলোতেই হলো উজ্জ্বল আলবত।

গাইলে তুমি শুধু মানবতার গান ধরণীর কোণে কোণে;
সভ্যতা সংস্কৃতির আকাশে বাজালে বীণা অকৃপণে।
সংকীর্ণতার বুকে আঘাত হেনে গাইলে শুধু সাম্যের গান;
তোমার গানের জোয়ারে ভেসে মানুষ পেলো নবপথ নবপ্রাণ ।

জাত ধর্মের বেড়া ডিঙিয়ে সাম্যের পতাকা করলে উত্তোলন;
একাত্মতার সেতু গড়তেই কাটালে তুমি সারাটা জীবন।
তোমার কবিতায় খুঁজে পেলাম মানবাত্মার অন্তরের কথা;
বিভেদের বুকে আঘাত হেনে বললে,”সবই মিথ্যে অযথা”

তোমার কবিতা গানে খুঁজে পাই বাংলা মায়ের আসল রূপ লাবণ্য;
পাই বঙ্গমাতার সবুজ শ্যামল ভূমি,নদ নদী, সবুজাভ অরণ্য।
তোমার কবিতায় শুনতে পাই নানা পাখির সুমধুর কুহুতান;
দেখি বসন্তের নববধূর রূপ,শুনি একান্তে বসে ঝর্নার গান।

বৈষম্যের বুকে হানলে আঘাত নিপেনের দুর্বল হাত দুটি ধরে;
ঘোর আষাঢ়ের বর্ষায় রাখাল বালকে দিলে আদর মমতা বুক ভরে।
গরু ছাগল মোষের দুঃখেও হলে তুমি দুঃখী আষাঢ় কবিতায়;
মানবিকতার আসরে বাজালে ঐক্যের বাঁশী আপন চেতনা মহিমায়।

কৃত্রিম অশান্তির এই অশুভক্ষণে বারেবারে তোমায় করি স্মরণ;
মর্ত্যে এসো আবার কবি,জ্বালাও মনুষ্যত্বের দীপ জুড়ে সারা ভুবন।
অহেতুক হিংসা বিদ্বেষ করো দূর ত্বরায় অবনী অঙ্গনে এসে;
ভ্রাতৃত্বের বীজ করো বপন, মানবকুলের ঐক্যতানে মেশে।

(পূবারুণ, মালদা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
রচনাকাল:- ০৮.০৫.২০২২)

——————————————–

মাতৃদিবসে স্বর্গতা মাকে লেখা এক দেহপসারিনীর চিঠি।

দীপঙ্কর দত্ত

মা আমি তোমার সেই খুকিটি আর নেই,
ছুটে যাব কারো কাছে একটা লজেন্সের লোভে।
তোমার খুকি এখন মৌটুসী,
সকলের চোখে সুন্দরী রূপসী,
এখন আমি যুবতী সোমত্ত,
বুঝে গেছি শরীরের মাহাত্ম্য,
যতদিন আছে এই রূপ,
ততদিনই জ্বলবে ধূপ,
তারপর তো শুধু কাঠি।
আর কি বা ছিল এ শরীরটা ছাড়া,
যাতে নিজ পায়ে দাঁড়াতাম খাঁড়া।
আজ আমি নিজেকে বেচি প্রতি রাতে,
কমপক্ষে পনেরো হাজারে,
শরীর বেচা কেনার বাজারে,
তার নিচে কখনো নামি না,
মা তোমার মেয়ে এত সস্তার না।
খদ্দেরের সে কি লাইন,
পাহাড়ের বুকে যেন সারি সারি পাইন,
কে আসেনা আমার এখানে,
সমাজের বড় বড় ধনী মানুষ যে যেখানে,
ধার চলে না এখানে,
নগদের কারবার,
থুথু দিয়ে গুনে নিই নোট সবাকার।
এখন আমার নিজস্ব বাড়ি, গাড়ি,
ব্যাঙ্কে জমিয়েছি টাকা কাঁড়ি কাঁড়ি,
এখন আমার আলমারি ভর্তি শাড়ি,
মন চাইলেই এধার ওধার দিই পাড়ি,
এখন আমার লকার ভর্তি গয়না,
কিছু কেনা কিছু আবার ভালবাসার পাওনা,
এখানে ফাউ ভালবাসার ছড়াছড়ি,
সারারাত ধরে খায় গড়াগড়ি।
রূপ ধরে রাখাটাই সারমর্ম,
রূপচর্চা তাই এখানে প্রধান কর্ম।
একটা কথা তোমায় দিতে পারি,
কাউকে আমি ঠকাইনি,
বিকিয়েছি দেহ টাই শুধু,
ভালবাসা টা বিকোই নি,
ভালবাসা শুকিয়ে কাঠ,
মনটা এখন ধুধু মাঠ।
ভেবোনা মা আমার জন্যে,
এখন রাজা বিনে
রাণী তোমার কণ্যে।
যেখানেই থাক ভাল থেক মা।

ইতি
তোমার খুকি

——————————————–

Powered by themekiller.com