ইলা ইয়াসমিনঃ আলোচনার বিষয়বস্তু হিসাবে পৃথিবীতে নারীর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না। হেযবুত তওহীদের সকল কার্যক্রমে নারী ও পুরুষের অংশীদরিত্ব থাকে। কোনো কাজে মেয়েরা বেশি অংশগ্রহণ করে, কোনো কাজে পুরুষরা। কোনো কোনো কাজে উভয়ের শ্রম মেধা শক্তি মিলেমিশে যায়। তবু আমাদের কথিত আলেম সমাজের চোখে হেযবুত তওহীদের নারীরাই প্রধান অপপ্রচারের ‘বস্তু’। কারণ তাদের চোখে নারীরা তেঁতুল বা রসগোল্লা। আমরা তাদের এসব সমালোচনার তোয়াক্কা না করে কাজ করে যাচ্ছি, কারণ আমরা জানি আমরা কী করছি, কেন করছি। ধর্ম নারীদেরকে কোনো বহিরাঙ্গনের কাজে অংশ নিতে বারণ করে না, বারণ করে দেশাচার। এই দেশাচার শাস্ত্রসমর্থিত না হলেও মানুষ এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহসী হয় না।
আমরা কিছু মানুষ হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুযযামানের অনুপ্রেরণায় এই দেশাচার বা প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নারীদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছি। না, ধর্মকে লঙ্ঘন করে নয়, বরং ধর্মের প্রকৃত বিধানের আনুগত্য করেই এ কাজটি আমরা করে যাচ্ছি। এর ফলে ঐ শাস্ত্রকানাদের মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মুখোসটাও প্রকটিত হয়ে উঠছে অবলা বানিয়ে রাখা নারীদের চোখে। রসুলাল্লাহর সময় মেয়েদের যে অবস্থান ছিল সেটাই যে ইসলামের নির্ধারিত ও কাম্য অবস্থান এ সত্যকে কেউ অস্বীকার করতে পারবেন কি? রসুলাল্লাহ কি নারীদেরকে পর্দাপ্রথার নামে গৃহবন্দী করেছিলেন? তিনি কি তাদের আপাদমস্তক আবৃত বোরকা পরিয়েছিলেন? তিনি কি নারীদেরকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীদের সম্পৃক্ততাকে নিরুৎসাহিত বা নিষিদ্ধ করেছিলেন? এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর হলো – না, করেন নি। রসুলাল্লাহর সময় নারীরা কি মসজিদে যেতে পারতেন? একত্রে সালাত আদায় করতে পারতেন? তারা কি সকল সামাজিক ও সামরিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারতেন? তারা কি শালীনতার সঙ্গে পুরুষ সাহাবীদের সঙ্গে একত্রে আলোচনা-সভায়, পরামর্শ-সভায় নিজেদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারতেন? তারা কি গান গাইতে পারতেন, বাদ্য বাজাতে পারতেন? এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর হলো – হ্যাঁ, তারা পারতেন। তাহলে আমাদের নারীরা মুসলিম দাবিদার হয়েও কেন রসুলাল্লাহর রেখে যাওয়া আদর্শের চর্চা করতে পারবেন না? কেন আজ তাদেরকে কথিত আলেমদের বানোয়াট ধর্মের চর্চা করতে হবে, যে বানোয়াট ধর্ম আজকে দেশাচার-লোকাচারের রূপ নিয়ে প্রকৃত ধর্মকে গলাটিপে হত্যা করছে?গত ৬ নভেম্বর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হলো হেযবুত তওহীদের নারী সম্মেলন। সেখানে এই পরিস্থিতি ও এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে শিক্ষা দরকার তাই বিস্তারিত বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি। উদ্বোধন শব্দটির মানে কেবল ফিতা কাটা নয়। উদ্বোধন শব্দটি অনেক বড় অর্থ প্রকাশ করে। উদ্বোধন আমার কাছে জাগরণ, আমার মনে হয় এর সঠিক ইংরেজি হলো রেনেসাঁ। হ্যাঁ, হেযবুত তওহীদের নারীদের দ্বারা একটি নতুন সভ্যতার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। কু-সংস্কার ও কু-প্রথায় বিদ্ধ নারী কখনও উন্নত জাতি প্রসব করতে পারে না। আমাদের নারীরা বিকৃত ফতোয়া ও পশ্চিমা প্রগতির নামে যাবতীয় কু-সংস্কার, অপসংস্কৃতি ও ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে কথিত ধর্মব্যবসায়ীদের লালিত মিথ্যা ধর্মকে আঁস্তাকূড়ে নিক্ষেপ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইনশাল্লাহ।