Breaking News
Home / Breaking News / কলামিস্ট রিটন মোস্তফার ছোট গল্প ” নিশি হুঙ্কার “

কলামিস্ট রিটন মোস্তফার ছোট গল্প ” নিশি হুঙ্কার “

” নিশি হুঙ্কার ”
– রিটন মোস্তফা

মাঝে মধ্যে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে ব্যালকনিতে গিয়ে বসে থাকি। রাতের নীরবতায় দেখতে থাকি তিন তলা থেকে যতদূর দেখা যায়। গত ক’বছর ধরে এই অভ্যাস হয়েছে। ঐ বসাতেই কোন কোনোদিন রাত শেষ হয়ে যায়।

এরকম এক মাঝ রাতে হঠাৎই ঘুমে ভেঙে গেলো। আবার ঘুমানোর চেষ্টা করেও যখন ঘুমাতে পারলাম না তখন ব্যালকনিতে গিয়ে সেই চেয়ারটাই বসলাম। আশেপাশে দেখতে লাগলাম। একটা মৃদু বাতাসে বসে থাকতে ভালোই লাগছিলো।

গোলি রাস্তার ওপারেই খুব সুন্দর আরও একটা বাড়ি। ঐ বাড়ির সামনে তিনটা কুকুর কবে থেকে যেন স্বেচ্ছায় পাহারা দেয়। পরিচিতদের মাঝ রাতে দেখলেও কিছু বলেনা। শুধু লেজ নাড়তে থাকে। তবে রাতে সন্দেহ জনক কাউকে দেখলেই তারা তাদের কাজ শুরু করে দেয়। কাজটা হলো ঐ পর্যন্তই, সন্দেহজনক মানুষটিকে ঘিরে ঘেউ ঘেউ করতে থাকা।

হঠাৎ লক্ষ্য করলাম কুকুর গুলো একটা হাল্কাপাতলা মানুষকে ঘিরে ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করে দিয়েছে। লোকটা তাতে মোটেও ভয় পেয়েছে বলে মনে হলো না। বরং কুকুর গুলোর সাথে যেন মজা নিতে লাগলো মাঝ রাতে। লোকটা হাসতে হাসতে বললো- “তোদের দৌড় কতদূর আমার জানা আছে, ঐ ঘেউ ঘেউ করা পর্যন্তই। এখন ইট পাটকেল নীচে থেকে তোলার ভঙ্গি করলেই তো ওটা দেখেই পালাবি, তুলতেও হবে না।”

এই কথা শেষ করেই তিনি তাই করলেন। কিছু একটা মাটি থেকে তোলার ভঙ্গি করে শরীরটাকে ভাঁজ করে যেই ঝুকলেন, ওমনি কুকুর গুলো লেজ তুলে দে- দৌড়। অথচ লোকটা মাটি থেকে কিছুই তোলেননি। এবার আবার সে কুকুর গুলোর চলে যাওয়া রাস্তার দিকে তাকিয়ে বললো- বলেছিলাম না, তোদের দৌড় আমার জানা আছে। এখন দূরে গিয়ে ঘেউ ঘেউ করছিস কেন? কাছে আয়, দেখ আবার ঐরকম করবো, তোরা আবারও পালাবি।”

লোকটার অভিজ্ঞতাটা যে যথেষ্ট এটা ওর আচরণেই বুঝলাম। যদিও স্পষ্ট ওর মুখটা আমি দেখতে পাচ্ছি না, কিন্ত আমি নিশ্চিত যে এরা সেই ধরণের লোক, যারা নীচতলার বারান্দায় বাড়ির লোকজনের ভেজা কাপড় শুকাতে দিয়ে সেটা ভুলে রাতে ফেলে রাখলে যারা ভ্যানিশ করতে ওস্তাদ, ও তাদের একজন। এবং ওরা এই সমস্ত পরিস্থিতির মোকাবেলা প্রায় করে বলেই অভিজ্ঞ হয়েছে। লোকটা কেন যেন এখনও ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে আর চারিদিকে দেখছে। কিন্ত কুকুর গুলো ভয়ে আর কাছে এলো না।

এবার আমার মাথায় ভুত চাপলো, দেখিনা কি প্রতিক্রিয়া হয়। পাশেই রাখা পানির বোতল থেকে এক ঢোক পানি নিয়ে গলাটা ভিজিয়ে নিলাম, তারপর হাঁক ছাড়লাম, শুধু দুটো কথা বলেছি- “কে ওখানে? কে রে?”

আমি কোথায় থেকে ঐ হাঁকটা ছেড়েছি সেটা দেখার মত সেই সময়টাও চোরটা আর নিলো না। আতঙ্কিত হয়ে ধরা পরার ভয়ে জীবন হাতে নিয়ে দে দৌড়—–।

ওর দৌড় দেখে এবার কুকুর গুলোও যা বোঝার বুঝে গেলো। তারাও চোরটার পিছনে পিছনে হুঙ্কার দিতে দিতে ছুটলো। বুঝতে পারলাম কুকুর গুলো এবার অসম্মানের প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বে। লোকটাও এত জোরে দৌড়াতে লাগলো যে গোলি রাস্তার শেষ ল্যাম্প পোস্টের আলো পেরিয়ে যেতে তার খুব বেশি সময় লাগেনি। তার পিছে পিছে কুকুর গুলোও।

বুঝলাম, কুকুর এবং মানুষের উপস্থিতি, ভুমিকা এবং প্রতিবাদের মধ্যে পার্থক্য কী।

ভোর হতে বাকি নেই, দূর থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে এলো। আমি নির্লিপ্ত ভাবে চেয়ারটাতে বসেই থাকলাম।

– পরের গল্প,
“প্লুটোর গ্রহত্ব ও পুরুষের পুরুষত্ব”

ভালো থাকুন সবাই।

Powered by themekiller.com