Breaking News
Home / Breaking News / ভোলার বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও

ভোলার বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও

মো কামরুল হোসেন সুমন,জেলা প্রতিনিধিঃ
ভোলার বাজার থেকে ফের উধাও হয়ে গেছে সয়াবিন তেল। গত শনিবার থেকে জেলা সদরের অধিকাংশ মুদির দোকানে এ ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও পাওয়া গেলেও দাম আকাশচুম্বি। এমন অভিযোগ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও হয়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন না। অনেক ক্রেতা আবার বাধ্য হয়ে বেশী দামে সয়াবিন তেল কিনছেন। এতে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ভোলা শহরের কালিবাড়ি রোড এলাকার বাসিন্দা নাজিউর রহমান ডিগ্রী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এম ফারুকুর রহমান অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি গত শনিবার পবিত্র রমজানের প্রথম দিনে সদর রোডের বেশ কয়েকটি মুদি দোকানে সয়াবিন তেল খুঁজে পাইনি। অন্তত ৪-৫ টি দোকান ঘুরে মাত্র একটি দোকানে মেঘনা নামক এক কম্পানির ৫ লিটার বোতলের সয়াবিন তেল পেলেও দাম নিয়েছেন ৭৮০ টাকা। তিনি আরও বলেন, গরুর মাংসের কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ৬৫০ টাকা দরে। তাও আবার সেই মাংসের সঙ্গে আজেবাজে জিনিস মিশিয়ে দিচ্ছে। মাংস বাজারেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাংস বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন এ ক্রেতা। রমজন মাসের শুরুতেই ভোলার বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা অবস্থা ক্রেতাদের।
এ ক্রেতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার সকালে ভোলা সদর উপজেলার সদর রোড, নতুন বাজার ও যুগিরঘোল এলাকার কয়েকটি দোকানে ঘুরেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে। বাজারের অধিকাংশ দোকানেই সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। যে সব দোকানে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে সে সব দোকানীরা ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৭৬০ টাকা থেকে ৭৯৫ টাকায় বিক্রি করছেন।
বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়ে শহরের মা স্টোরের সত্বাধিকারী আঃ সাত্তার বলেন, আমাদের দোকানের সয়াবিন তেল শনিবার শেষ হয়ে গেছে। বাজারে কোথাও এখন সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে সোমবার সকালে যুগিরঘোল এলাকা থেকে ৭৬০ টাকা দরে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ক্রয় করে কালীকির্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনির সাজওয়াল বলেন, আমরা আজ অনেকটাই অসহায়-হতাশ। আমরা যারা সরকারি চাকরিজীবী তাদের আয়ের সাথে ব্যয় যেন কোনভাবেই মিলাতে পারছি না। আজ ৫ লিটারের সয়াবিন তেল কিনতে হয়েছে ৭৬০ টাকায়। নিত্যপণ্য কিনতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
এ বিষয়ে যুগিরঘোল এলাকার মুদি দোকানী নান্টু বিশ্বাস বলেন, সয়াবিন তেলের দাম আবার বেড়েছে। সোমবার ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করেছি ৭৬০ টাকা দরে। তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক দিন আগে ভোলার মোকাম থেকে সয়াবিন তেল কিনে এনেছি।
তবে, এখন ভোলার অধিকাংশ বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও আমার চেয়েও বেশী দামে বিক্রি করছেন। আমরা গায়ের দামে বিক্রি করছি। মুদি দোকানি মো. হানিফ বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম বাড়ায় কোনো কোম্পানি সয়াবিন তেল দিচ্ছে না। ফলে আমরা বিক্রিও করতে পারছি না।’ শুধু যে তেলের দাম বাড়ছে তা নয়। মাংস ও ডিমসহ সব পণ্যের দাম বাড়তি বলে জানান এ দোকানি।
এ বিষয়ে ভোলা কাঁচাবাজার ও আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির সয়াবিন তেলের ডিলারদের তেল ভোলায় আসছেনা। তাই সয়াবিন তেলের সাময়িক সংকট দেখা দিয়েছে। কিন্তু সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও হয়নি।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভোলা জেলা শাখার সভাপতি মোবাশ্বির উল্যাহ চৌধুরী বলেন, ‘অতি মুনাফার আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রতি বছর রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে পণ্যের কৃত্রিম সংকট দেখা দেয়। আসলে কোনো সংকট নেই।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আকিব ওসমান জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা কৃষি বিপণন অফিস ও পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সয়াবিন তেল অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার অপরাধে ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুজিত হাওলাদার সোমবার সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, সয়াবিন তেলের কোন সংকট নেই। স্থানীয় কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী এটা করতে পারে। তিনি আরও বলেন, বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভোলায় প্রতিদিনই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানালেন এডিসি।
উল্লেখ্য, এর আগেও একবার ভোলার বাজার থেকে ভোজ্য এ তেলটি উধাও হয়ে যায়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে এক ব্যবসায়ীর গেডাউন থেকে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল জব্দ করে। সিলগালা করা হয় ওই গোডাউন।

Powered by themekiller.com