Breaking News
Home / Breaking News / দুঃখজয়ী কবি সানোয়ার হোসেন এর গল্প ” স্বপ্নবাজ মফিজ”

দুঃখজয়ী কবি সানোয়ার হোসেন এর গল্প ” স্বপ্নবাজ মফিজ”

ধারাবাহিক গল্প: স্বপ্নবাজ মফিজ
সানোয়ার হোসেন

আজ স্বপ্ন বাজ মফিজের বাসর রাত
সাজানো ঘরে লাল শাড়ি পরে বসে আছে পূর্ণিমার চাঁদের মত সুন্দর এক নারী।
মফিজ বিয়ের পোশাক পড়ে তার ঘরের দরজা খুলতেই শাড়ি পড়া মানুষ দেখে চমকে উঠলো,

বললো; একি!! তুমি কে??

আমি কে মানে? আমি তোমার বউ..! প্রথমে ইতস্তত করলেও কথাটা বলতে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো মফিজের বউ (নুরী)

মফিজ: আমার বউ তো আমার ঘরে কেনো?

নুরী: তাহলে কোথায় যাবো??

মফিজ: আমি জানি নাকি?? যাও আমি ঘুমাবো। আইজ আমার অনেক স্বপ্ন দেখতে হবে। তুমি অন্য ঘরে যাও। বলেই ধাম করে খাটের উপর শুয়ে পড়লো মফিজ।

নুরী: আরে আজব তো..! বলে আর কিছুই বলতে পাড়লো না নুরী, মনে মনে ভাবলো, বাবা আমাকে কোন পাগলের সাথে বিয়ে দিলো?? কিছুক্ষণ পর নুরী মফিজের দিকে মায়াবী চোখে একটু তাকিয়ে দেখল
মফিজের চোখ দুটো বন্ধ, বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। কি করার, বিয়ের প্রথম রাত প্রতিটা নারীর জীবনে অমূল্য, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে পুরোটাই বৃথা গেলো, না জানি ভাগ্যে কি আছে, শেষমেষ নুরী বেদনা ভরা একটা দির্ঘ্য শ্বাস ফেলে অন্য দিক হয়ে শুয়ে পড়লো।

শুয়ে পড়ার কিছু সময় পর নুরী লক্ষ্য করলো, মফিজ হাসছে। মাঝে মাঝে খাটের উপর উঠে বসে হাসছে, এমন ভাবে হাসছে যেনো কুটি কুটি হয়ে পড়ছে মফিজ।
নুরী তা দেখে প্রথমে চমকে উঠলেও মফিজের হাসি দেখে নিজেও হাসি থামাতে পারলো না। নুরী হাসি মাখা মুখে বললো , একি!! কি হয়েছে তোমার? হাসছো কেনো? বলে মফিজের গায়ে হাত দিয়ে ঝাকুনি দিতেই মফিজ স্তব্ধ হয়ে শুয়ে থাকলো।
নুরী আবার শুয়ে শুয়ে ভাবলো সে কি সত্যি সত্যিই স্বপ্ন দেখছে..!!
শোয়ার আগে তো বললো, আইজ অনেক স্বপ্ন দেখতে হবে। নাহ্ তাই কি হয়। মানুষ স্বপ্ন দেখতে চাইলেই কি স্বপ্ন দেখতে পারে। এই ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো নুরী।

ক্ষণিক পরে মফিজ স্বপ্নে দেখছে, গ্রামের ছোট বাচ্চাদের সাথে বট গাছের নিচে খেলা খেলছে। খেলতে খেলতে মফিজের মনে হলো গাছে লম্বা শিকড় একটু ঝামেলা করছে। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো শিকড় কেটে দেবে। যেনো খেলায় অসুবিধে না হয়। কিন্তু এই মুহূর্ত কেটে ফেলার মতো কোনো হাতিয়ার নেই। তাই সে ভাবলো খেলার সব সাথী মিলে টেনে ছিঁড়ে ফেলবে।
তারপর মফিজ সবাইকে বললো নে টান দে, এরপর হৈ রে….. বলে সব ছেলেরা মিলে টান দিলো, কিন্ত কাজ কোনো হচ্ছে না।
মফিজের মনে হলো আরো শক্তি দিয়ে টান দিতে হবে। তাই মফিজ বুদ্ধি করলো, সে গাছে উঠে গাছের সাথে পা বাঁধিয়ে টান দেবে। যাতে একটু বেশি শক্তি দেওয়া যায়। এরপর মফিজ গাছে উঠে গাছের সাথে পা বাঁধিয়ে লম্বা শিকড় ধরে আবার হৈ রে.. বলে দিলো টান।
এমন সময় ও মাগো… বলে চিৎকার করে উঠলো নুরী।
নুরীর চিৎকারে আতংকে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে মফিজ দেখলো, নুরীর পিঠে পা বাঁধিয়ে দুই হাতে চুল টেনে ধরে আছে মফিজ। আর নুরী চিৎকার করছে।
দেখে ভয়ে আতংকে মফিজ ছেড়ে দিলো নুরীর চুল। ছেড়ে দিয়েই নুরীর উপর চৌড়া হয়ে মফিজ বললো। তোমাকে না বলেছি অন্য ঘরে যাও। তুমি আমার খাটে শুইছো কেন??
এদিকে নুরীর চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে মফিজের মা বাবা বেড়িয়ে এসে মফিজের ঘরের দরজায় বলে উঠলো, বৌমা কি হয়েছে? কি করলো পাগলটা?
নুরী কাঁদো কাঁদো হয়ে দরজা খুলে দিল। তার পর নুরী বললো আপনার ছেলে আমার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে মা, আমি এই ঘরে আর থাকবো না। কিন্তু মফিজ তার তীব্র প্রতিবাদ জানালো।
বললো আমার কি দোষ? স্বপ্নে আমি ঐ জসিম করিমে সাথে নদীর ধারে বট গাছের শিকড় ছিঁড়তে টানছিলাম।
কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখি ওর চুল ধরে টানছি।
ওকে তো আগেই বলেছি আমার অনেক স্বপ্ন দেখতে হবে। তা ছাড়া ওই কেন আমার সাথে শোবে কউ মা?

আরে পাগল ও তোর বউ তোর সাথে ঘুমাবে না কার সাথে ঘুমাবে?
বৌমা তুমি কিছু মনে করো না। ও একটু এমনই। ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। একটা এক্সিডেন্ট করে মানসিক ভাবে ভালো অসুস্থ সে।
যাও মা, একটু মেনে নাও।
যাও ঘুমিয়ে পড়। নুরী চুপচাপ কান্নায় ভেজা চোখে আবার শুয়ে পড়লো।
মফিজ ঘরের দরজা লাগিয়ে দে। আর খবরদার স্বপ্ন দেখবি না কইলাম বলে শাসন করে চলে গেলো মফিজের মা।
মফিজ দরজার খিড়কি বন্ধ করে বিরক্ত হয়ে বললো ধুর ছাই আমার কত সুন্দর স্বপ্ন মাটি করে দিলো।
এই তুমি অন্য ঘরে ঘুমাইতে পারতে না……

(কেমন লাগলো আপনাদের কাছে। অবশ্যই জানাবেন। কৃতজ্ঞ থাকবো)

Powered by themekiller.com