Breaking News
Home / Breaking News / রমজানের আগেই ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে নিত্য পণ্যের দাম

রমজানের আগেই ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে নিত্য পণ্যের দাম

মো কামরুল হোসেন সুমন,ভোলা প্রতিনিধিঃ
পবিত্র রমজানের আগেই উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার বাজারে অস্বাভাবিক বেড়েছে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, ছোলা, ডাবলি, চিনি ও সবজিসহ নিত্য পণ্যের দাম। গত এক সপ্তাহে কোন কোন পণ্যের দাম এক লাফে বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২৫ টাকা পর্যন্ত। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। গতকাল শুক্রবার ভোলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০ টাকা।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলার যুগীরঘোল এলাকার মুদি ব্যবসায়ী সৌরভ বলেন, বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এ কারণে এখন পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। মোঃ রুবেল হোসেন নামে এক ক্রেতা অনেকটা ক্ষুব্দ হয়ে বলেন, গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি কিনেছি ৩০ টাকা দরে। আর সেই পেঁয়াজ এখন ৫০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। এক লাফে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষেরা খুব কষ্টে আছি। কিন্তু আমাদের এ কষ্ট দেখার মতো কেউ নেই। বাজারে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
শুধু পেঁয়াজ নয়, বাজারে এখন প্রায় সব নিত্য পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় হতাশ সাধারণ ক্রেতারা। চাল, চাল, তেল, চিনি, ডাল ও ছোলা ক্রয় করতে যেন ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। সয়াবিন তেল যেন ভোলার বাজার থেকে হাওয়া হয়ে গেছে।
সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও হওয়ার বিষয়ে যুগীরঘোল এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মোঃ হানিফ বলেন, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার কারনে কোন কোম্পানি এখন সোয়াবিন তেল দিচ্ছে না। ফলে আমরা বিক্রিও করতে পারছিনা। তিনি আরও বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে মুরগী ডিমের হালি ৩৫ টাকায় বিক্রি করা হলেও এখন সেই ডিমের হালি বিক্রি করতে হচ্ছে ৩৮ টাকায়। যুগীরঘোল এলাকার বেশ কয়েকটি দোকানে খুঁজেও পাওয়া যায়নি ভৈজ্য এ তেল। এতে হতাশার পাশাপাশি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সাধারণ ক্রেতারা।
বাংলাবাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, এ বাজারে ৫০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় হতাশ এ বিক্রেতা। তিনি আরও বলেন, দুই দিনে দুই দফায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৫ টাকা বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে আমরা এক কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকায় ক্রয় করেছি। পাইকারি দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কি কারণে এখন পেঁয়াজের দাম বাড়লো এটার সঠিক কারণ আমাদেরও জানা নেই। তবে, পাইকারি বাজারে গিয়ে শোনা যাচ্ছে, বৃষ্টিতে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে, এ কারণে দাম বেড়েছে।
ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ১৫০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে পরাণগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কিছুটা কম। এ কারণে দাম বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণে সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে। সামনে মুরগির দাম আরও বাড়বে বলেও ধারণা করছেন এ বিক্রেতা।
রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৯০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-৩৬০ টাকায়। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৬৫০ টাকায়। তেলাপিয়া ও পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৯০ টাকায়। নলা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-২০০ টাকায়। চিংড়ি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০-১২০০ টাকায়। ফুলকপির কেজি ৫০ টাকা, টমেটোর কেজি ৩০ টাকা, শিমের কেজি ৩০ টাকা, শালগমের (ওল কপি) কেজি ৩০ টাকা, বেগুন ও গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। সবজির দাম এখনও বেশী বলে জানিয়েছেন যুগীরঘোল এলাকার সবজি বিক্রেতা মোঃ কবির হোসেন।
বিষয়ে বাংলাদেশ কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভোলা জেলা শাখার সভাপতি মোবাশ্বির উল্যাহ চৌধুরী বলেন, অতি মুনাফা লাভের আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রতি বছর রমজান মাসের আগেই নিত্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে পণ্যের কৃত্রিম সংকট দেখা দেয়। আসলে নিত্য পণ্যের কোন সংকট নেই।
জানতে চাওয়া হলে ভোলা জেলা কাচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম শুক্রবার দুপুরে বিজয়ের আলো টিভি’কে বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা আগে ভাগেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর বর্তমানে নদীতে টানা দুই মাসের অভিযানের কারনে বাজারে মাছের দামও বেড়েছে বলেও মনে করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট আকিব ওসমান শুক্রবার সকালে ভোলার বাণী’কে জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য রোধে ভোলার জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্মকর্তা, জেলা কৃষি বিপনন কর্মকর্তা ও পুলিশ কঠোর অবস্থানে থেকে বাজার মনিটরিং করছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালায়। এ সময় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সয়াবিন তেল বোতল থেকে খুলে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার অপরাধে শহরের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী মো. জহিরুল ইসলামকে কৃষি বিপণন আইনের ২০১৮ এর ১৯ এর (১) (৬) ধারায় তাকে ১ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৪টি মামলায় ৩ জনের কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে জানানো হয়েছে যে প্রত্যেক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের কে নির্দেশ দেয়া আছে তারা বাজার মনিটরিং করবে

Powered by themekiller.com