Breaking News
Home / Breaking News / রমজানের আগেই “অস্থির বাজার”

রমজানের আগেই “অস্থির বাজার”

মো কামরুল হোসেন সুমন,ভোলা প্রতিনিধিঃ

রমজান এলেই পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ‘সংস্কৃতি’ বহুদিনের। এবার এ কৌশল একটু পরিবর্তন হয়েছে। রমজানের এখনো দেড় মাস বাকি রয়েছে। এরই মধ্যে ১১টি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, যাতে রমজানে নতুন করে বাড়ানোর প্রয়োজন না পড়ে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ সময় ভোক্তার পকেট কেটে অতিরিক্ত মুনাফা করা যায়। দাম বেড়ে যাওয়া পণ্যগুলো হচ্ছে- চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, হলুদ, চিনি, ডিম, জিরা, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম। এ নিয়ে তাই ভোক্তারা শঙ্কায় রয়েছেন- এ বছর রমজানেও অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি দরে খাদ্যপণ্য কিনতে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করবেন। এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে শীতকালীন শাক-সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রভাব ফেলছে দরিদ্র মানুষের জীবনে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে জানা যায়, সয়াবিন তেল (লুজ) বাজারে লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১৪৬ থেকে ১৫৩ টাকা। আর এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ১১৬ থেকে ১২০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৬ টাকা। একই অবস্থা বোতলজাত সয়াবিন তেলের। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২২ টাকা। বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, যা এক বছর ব্যবধানে বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা।
নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের খাবারের অন্যতম অনুষঙ্গ ডিম। এই খাদ্যপণ্যটি এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৮ শতাংশ। গতকাল ব্রয়লার মুরগির এক হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায়, যা এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৩ টাকা। একই অবস্থা মসলা জাতীয় পণ্য জিরার। বাজারে কেজিপ্রতি ৩২০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এক মাসের ব্যবধানে এ পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ।
বাজারে গত এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ময়দা প্যাকেট জাত বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬০ টাকা, যা সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আটা প্যাকেট কেজিপ্রতি ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ (দেশি) কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, যা এক সপ্তাহে আগে বিক্রি হয়েছিল ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে মাংসেরও দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির মাংস কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। একই সঙ্গে গরুর মাংসের দামও বেড়েছে। এক সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা।
এই প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি একেবারেই অযৌক্তিক। করোনাকালে সব শ্রেণির মানুষের আয় কমেছে। তবে ব্যয় বেড়েছে অনেক। আর এ ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি। তাই বাজারে অসাধুদের রোধে কঠোর মনিটরিং করতে হবে। প্রয়োজন হলে নতুন বছর থেকে ভোক্তার স্বার্থে বাজার ব্যবস্থাপনা নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।
বাজারে প্রতিনিয়ত ডিমসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে কিন্তু জনগণ নিশ্চুপ। পণ্যের দামের লাগাম টানতে হলে জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। জনগণ সোচ্চার না হলে আগামীতে পণ্যের দাম আরো বাড়বে বলে মনে করেন গোলাম রহমান। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ থেকে ঢাকার বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২৮টি মনিটরিং টিম রয়েছে। একজন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, অর্থ, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন করে কর্মকর্তা এবং আনসার, পুলিশ ও র‌্যাবের সমন্বয়ে গঠিত এসব টিম সারা বছর মাঠে থাকার কথা থাকলেও মূলত রমজানকে কেন্দ্র করে মাঠে কার্যকর ভূমিকা পালনে সচেষ্ট হয়। রমজানের বাজার নিয়ন্ত্রণে যা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। এসব টিম নিয়মিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও অনিয়মের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টিম ছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন, র‌্যাব এবং জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম বাজার মনিটরিংয়ে কাজ করে। যে কোনো পণ্য আমদানি থেকে শুরু করে উৎপাদনসহ পাইকারি ও খুচরা মূল্য মনিটরিং করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই, রমজানে মানুষ যেন ভালো থাকে। সাধারণ মানুষের জন্য এটা সরকারের একটা প্রতিশ্রুতি।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে তদারকি জোরদার করতে সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকেও একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছেও সহযোগিতা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এ প্রসঙ্গে গত বুধবার গণমাধ্যমকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, রোজার সময় অনৈতিক কিছু হতে দেওয়া যাবে না। কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং চলবে। কোথাও অসামঞ্জস্য কিছু দেখলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শবেবরাতের পর থেকেই বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই।

Powered by themekiller.com