Breaking News
Home / Breaking News / দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক শব্দনগরের আজকের সেরা চার সাহিত্য

দুই বাংলার বৃহত্তম নেটওয়ার্ক শব্দনগরের আজকের সেরা চার সাহিত্য

একদিন খুৃঁজে নিও
আমায়,
বাতাসের কাছে
ঠিকানা পাবে।
একদিন খুঁজে নিও
আমায়,
যখন, ফুল গুলো
শুকিয়ে যাবে।
একদিন খুঁজে নিও
আমায়,
চৈতের ধূলিধূসর ঝরাপাতার বনে।
একদিন খুঁজে পাবে
আমায়,
ধূপের সুগন্ধি আতরে।

লেখার শিরোনাম।
একদিন খুঁজে নিও।
মানিক চক্রবর্তী।

—————————————

গৃহকর্মী ফারজানা
শেখ নাজিমউদ্দিন আহমেদ (সোহাগ)
তারিখ:২৬/০১/২০২২ খ্রিষ্টাব্দ।

গায়ের এক কোমলমতি কিশোরী
নাম তার ফারজানা।
সাহেবদের ঘরে করে কাজ
বিসর্জনে মনের সুপ্ত বাসনা!

বাবা মায়ের আদরের বারন্ত কন্যা
অন্যের গৃহকোণে রোজ দেয় ধরনা।
শোধিতে নয় বাবার পুরোনো দেনা।
প্রতিহত করতে পাষণ্ড হায়নার হানা।

ঘুম থেকে উঠে রোজ সকালে
চা-নাস্তাতে করতে হয় খুশ!
থালা বাসন মেজে ধুয়ে
রান্নার ধকলে হারায় যে হুঁশ!

দুপুরের রান্নাতে বুক ভাসে
দুচোখের করুন কান্নাতে!
মুখরোচক খাদ্যের পসরা সাজিয়ে
সন্তুষ্ট থাকে সে বাসীতে।

স্কুলের ঘন্টা কানে বাজে স্বপ্নে
দুরন্ত কৈশোর ডাকে সযত্নে।
প্রাণখোলা উচ্ছল হাসে একান্তে।
হঠাৎ ঘোর কাটে গরম খুন্তির ছ্যাঁকাতে!

ক্ষত শরীরে কাতরাতে কাতরাতে
ঘুমিয়ে পড়ে সে মেঝেতে!
রক্তটা উঠে তখন গৃহকর্তীর মাথাতে।
ক্ষতবিক্ষত করে পাশবিক আঘাতে।

এত কিছু করেও হয়না সে ক্ষান্ত।
পুঁতে ফেলতে চাই একেবারে জ্যান্ত।
কৃতকর্ম ঢাকতে টয়লেটে করে বন্দি।
ধুঁকে ধুঁকে ফারজানা করে মৃত্যুর সন্ধি।

উলচাপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

———————————-

# # ছাব্বিশের হাতছানি # #
সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়-
কাগ্রাম * মুর্শিদাবাদ

26/01/22

এক গভীর অন্ধকারে
বার বার হোঁচট খাওয়া ।
চিবুকের নীচে জমানো
বিশ্বাসে নীল আলোর হাতছানি
প্রত্নতাত্ত্বিক চোখে ।
তোমার আস্তিনে
এখন আর ঢেউ
ওঠে না বুঝি ? ?
চোঁয়া ঢেকুর গিলে
সব হজম করতে করতে
বদলে নিয়েছি স্বা- ধী – ন- তা ।
আর অসুবিধা হয় না
পতাকার মানে বুঝতে তাই ,
পতাকা হাতে ছুটি
অস্তিত্ব খুঁজতে ছা-ব্বি-শে
ছা-ব্বি-শে । । । ।

। সম্পূর্ণ।

————————————-

আশ্রম
লেখক_মোঃ_বিনয়_আমিন
ক্লাস সিক্সের একটা ছেলেকে পড়িয়ে পায়ে হেঁটেই মেসে ফিরছিল আব্দুল সামাদ । ফকিরা পুলের গরিম পানির গলির একটি মেসেই থাকে । মেসেরও নাম আছে ” অস্থায়ী নিবাস ” । ঢাকা শহরে ধনী আত্বীয় স্বজন আছে অনেক কিন্তু তাদের কাছে যেতে লজ্জা লাগে । থাকা তো দূরে থাক । কত কষ্ট করে চলতে হয় আব্দুল সামাদকে । বাড়ির অবস্থা তেমন ভাল নয় বলে লেখা পড়ারসহ যাবতীয় খরচ কয়েকটি টিউশনি করেই কামাই করে নিতে হয় । এই অল্প আয় থেকে বাড়িতে মাঝে মাঝে কিছু টাকা পাঠায় ছোট ছোট ভাইবোনের জন্য । যাতে ওরা ভাল মন্দ কিছু কিনে খেতে পারে । মা বাবা টাকা পাঠাতে নিষেধ করেন । কিন্তু আব্দুল সামাদ তাদের নিষেধ খুব একটা মানে না । ছাত্র হিসেবে খুব ভাল ছিল বলে ঢাকা ভার্সিটির মত এতো বড় বিদ্যাপীঠে পড়াশুনা করার সৌভাগ্য হয়েছে ।
তার ফেরার পথে ফুট ওভারের নীচে এক বৃদ্ধাকে ভিক্ষা করতে দেখে । বৃদ্ধা মনে হয় ব্রিজের নীচেই থাকে । সাত কুলে কেউ আছে বলে মনে হয় না । এই বৃদ্ধাকে দেখে আব্দুল সামাদ ভাবে — এই বৃদ্ধার এখন নাত নাতনি ঘিরে থাকার কথা । নিজের সংসারে ছেলে মেয়েদের সান্নিধ্যে থাকার কথা কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস এই বয়সে তাকে একাকি জীবন ধারণ করতে হচ্ছে । কিসে খাওয়া দাওয়া , কিসে গোসল আর কিসে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেওয়া — একটু ভাবলেই মাথা গুলিয়ে যেতে চায় । এতো কষ্ট কেন এই বয়সে ? এই পথে আব্দুল সামাদকে সপ্তাহে পাঁচ দিন যাওয়া আসা করতে হয় । এই পাঁচ দিন বৃদ্ধাকে সে দেখে । দুটি টাকা হাতে ধরিয়ে দেয় । বৃদ্ধা তাকে দোয়া করে — সে একদিন বিরাট মানুষ হবে । আব্দুল সামাদ বৃদ্ধার দোয়া শুনে হাসে ।
আজও এই পথেই ফিরছে । চেয়ে দেখে বৃদ্ধা আজ নেই । ভিক্ষা করতে আসেনি ? একটু থমকে দাঁড়ায় । এদিক সেদিক তাকিয়ে বৃদ্ধাকে খুঁজে । ব্রিজের নীচের দিকে এগিয়ে যায় । দেখে একটি ছেঁড়া কাথার নীচে বৃদ্ধা গুটিয়ে আছে । বৃদ্ধার কি অসুখ করেছে ? কাছে গেল । ওর পায়ের আওয়াজে বৃদ্ধা চোখ মেলে তাকায় । ঘোর লাগা সে চাহনি । বৃদ্ধা একমনে বলে যাচ্ছে আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ । আব্দুল সামাদ জিজ্ঞেস করে ,” খালা , তোমার কি শরীর খারাপ ?” বুড়ি অস্ফুট গলায় কি যেন বলে । আব্দুল সামাদ বুঝতে পারে না । এবার সে বৃদ্ধার কপালে হাত রাখে । চমকে উঠে । বেশ তাপ – পুড়ে যাচ্ছে কপাল । ” পানি পানি ” শব্দগুলি উচ্চারণ করতে পারল বৃদ্ধা । হায়রে জীবন — কোথায় ছেলে মেয়ের সেবা পাবার দাবী রাখে , ভাগ্য তাকে কোথায় এনে ফেলেছে । কিন্তু শহরের নিষ্ঠুর মানুষ একে দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে । কাউর সময় নেই একে দেখার । আব্দুল সামাদ দৌড়ে গিয়ে একটা পানির বোতল কিনে আনে । অনেক কষ্টে বৃদ্ধা দুই এক ঢোঁক পানি খায় । বৃদ্ধা ওর দিকে তাকিয়ে হাসে । তারপরে চোখ বন্ধ করে । মারা গেল নাকি ? অল্প দুরেই দাঁড়িয়ে তার কর্ম কান্ড দেখছে উৎসুক্য তিন চার জন জনতা । কি করবে , কি করা উচিৎ ভেবে পাচ্ছিল না আব্দুল সামাদ । দুই একজন বলে – ভাই , বুড়িকে মেডিক্যালে নিয়া যান — এখানে থাকলে বুড়ি মরে যাবে ।
আব্দুল সামাদের ভেতরের একটি মানবতা জেগে উঠে , না বাঁচাতে হবেই একে । তারপর দুই একজনের সহায়তায় বৃদ্ধাকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে গেল । সেখানে নিয়ে গেলেই যে ভর্তি করবে তেমনটা না । তারপর একজন ইন্টার্র্নি ডাক্তারকে বলে কয়ে বারেন্দায় একটা সিট পেল । বৃদ্ধার চিকিৎসা শুরু হল স্যালাইন দিয়ে । সারা রাত বৃদ্ধার পাশে জেগে থাকল । ভোরবেলা বৃদ্ধার জ্বর ছাড়ল । ওর দিকে তাকিয়ে হাসল । আর বিড়বিড় করে কি যেন বলে ।
ইন্টার্র্নি ডাক্তার জিজ্ঞেস করেছিল বৃদ্ধা তার কি লাগে , সে বলেছিল – খালা লাগে । ডাক্তার আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি । নাম – বয়স – ঠিকানা লিখতে হয় । লিখেছে নিজের সব কিছু । যাতে মনে থাকে । বৃদ্ধা ওকে কাছে ডাকে – সারা রাইত জাগা ছিলা ? তুমারে আল্লায় অনেক বড় করব – যাও বাসায় যাও – তুমার আম্মায় চিন্তা করব , আমি বালা অইয়া গেছি ।
আব্দুল সামাদ আর বসে থাকতে পারছিল না । ঘুম আর ক্লান্তিতে দেহ ভেঙ্গে পড়ছিল । পাশের সিটের দুই একজনকে একটু দেখতে বলে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসে । কিভাবে যে মেসে আসল বলতেও পারবে না । কাপড় না বদল করেই বিছানায় এলিয়ে পড়ে । এক ঘুমে বিকেল । ঘুম ভাঙ্গে রুমমেট অভি হাসানের ডাকে । গোসল সারল । ওর জন্য মেসের খাবার মতি মিয়া ভাল করেই ঢেকে রেখে গেছে । তা খেয়ে নিল । খেতে খেতেই বৃদ্ধার কথা মন হল । দ্রুত খেয়ে নিল । বৃদ্ধাকে দেখতে যেতে হবে । আজ টিউশনি নেই বলে রক্ষা ।
গিয়ে দেখে বৃদ্ধা সিটের মাথায় হেলান দিয়ে বসে আছে । ওকে দেখেই হাসল ।
” খালা কেমন আছ ?”
” বালা আছি গো আব্বা – তুমি খাইছ নি ?”
আব্দুল সামাদ জিজ্ঞেস করেই বৃদ্ধার কপালে হাত রাখে – জ্বর নেই । নার্স জানালো আগামীকাল ছেড়ে দিবে । ইন্টার্র্নি ডাক্তার বলেছে আজ দেখবেন । জ্বর আবার আসে কিনা । পাশের রুগীর লোকজন বুড়িকে বেশ সেবা করেছে । বৃদ্ধাকে বাথরুমে নিয়ে গেছে । হাত মুখ ধুইয়ে দিয়েছে । নাস্তা খেতে সাহায্য করেছে । একেই বলে মানবতা । একজন অসহায় মানুষের জন্য চরম ত্যাগ স্বীকার । তা না হলে কে কার দিকে ফিরে তাকায় ? সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত । আব্দুল সামাদ ভাবল – বৃদ্ধাকে হাসপাতাল রিলিজ দিয়ে দিলে আবার সেই ব্রিজের নীচে , খোলা আকাশের নীচে আসতে হবে । তারপর ? আর কি করতে পারে এই বৃদ্ধা মানুষটির জন্য ? সে মেসে থাকে । আচ্ছা একে কোন বৃদ্ধ আশ্রমে রেখে আসলে কেমন হয় ? অনেকে তো নিজের মা বাবাকে রেখে আসে । সেটা হচ্ছে এক রকমের নিষ্ঠুরতা কিন্তু এই অসহায় বৃদ্ধার জন্য হবে মানবতা । কিন্তু তার তো এই বিষয়ে জানা নেই । কি ভাবে কি করতে হবে ? কেমন জানি অসহায় আর বিপন্ন বোধ করতে থাকে আব্দুল সামাদ ।
হঠাৎ মনে হল এই বিষয়ে ইন্টারনেট তাকে সাহায্য করতে পারে । তবে কোন সাইবার কাফে গিয়ে সার্চ দিতে হবে । নিজের স্মার্ট ফোন নেই । পয়সার অভাবে কিনতে পারেনি । সে মান্ধাতার আমলের টিপাটিপা ফোন দিয়ে কাজ চালাতে হয় । এর জন্য আব্দুল সামাদের কোন আফসোস নেই । একদিন নিজের স্মার্ট ফোন হবে, হয়তো বা ।
যাহোক বেশ কয়েকটি বৃদ্ধা আশ্রমের ঠিকানাসহ বিস্তারিত বিবারণ পেল । বৃদ্ধা খালাকে রিলিজ দেবার আগেই তাকে যে কোন আশ্রমে পৌঁছে দিতে হবে । প্রথমে একটি প্রতিষ্ঠানে গেল তাদের অনেক নিয়ক কানুন শুনতে হল । এরপর এভাবে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানে গেল সেখানেও একটু জটিলতা পেল । কারণ এখানে মাসিক কিছু টাকা পয়সা দিতে হবে খরচ হিসেবে কিন্তু তা দেবার ক্ষমতা আব্দুল সামাদের নেই । শেষে বিদেশী অর্থপুষ্ট একটি বড় প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেল । এরা মূলত গরিব এবং নাম গোত্রহীন বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের দেখাশুনা করে থাকে । যারা দিয়ে যাবে তাদের কোন দায়ীত্ব থাকে না । সমস্ত দায়ীত্ব এরাই পালন করে । তবে যারা দিয়ে যায় তাদের নাম ঠিকানা রেখে দেয় যদি কেউ মারা যায় । তার জানাজায় অংশ নিতে পারে ।
আব্দুল সামাদ এই পথের খালার জন্য সব ব্যবস্থা করে এল । ওরা জানতে চেয়েছে কবে নাগাদ বৃদ্ধাকে নিয়ে আসতে পারবে । দুই দিন সময় নিল । সাথে কিছুই আনতে হবে না জানিয়ে দিল ।
দুইদিন পর বৃদ্ধাকে রিলিজ দিয়ে দিল হাসপাতাল । গিয়ে দেখে বৃদ্ধা পাশের বেডের আরেক বৃদ্ধার সাথে গল্প করছে । তাকে দেখে খুব খুশি হয়েছে ।
” দেখছ , আমার আব্বা আমারে নিতে আইছে — যাই গো বইন , আমার আব্বার লাইগা খাছ দিলে দোয়া কইও । আব্বা যদি আমারে হাসপাতালে না আনত তয় ব্রিজের নীচে মইরা পইরা থাকতাম — যাই গো বইন ।” মহিলাকে জড়িয়ে ধরে একটু কান্নাকাটি করে । তা দেখে আব্দুল সামাদের কেমন জানি লেগে । এই মায়া , এই মায়ার জন্য একজন অচেনা বৃদ্ধার জন্য সামান্য একটু আত্বত্যাগ করেছে ।
বৃদ্ধাকে একটি সি এন জি করে সেই বৃদ্ধা আশ্রমে নিয়ে আসল । বৃদ্ধা বড় বড় চোখ করে — এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে , ” আব্বা এইডা তো ব্রিজের যায়গা না — এতো সুন্দর বাড়ি , এইডা আমারে কই নিয়া আইলা ? এইডা কি তুমার বাড়ি ?”
” খালা এখন থেকে তুমি এখানেই থাকবে । না খালা এটা আমার বাড়ি না । এটা সরকারের বাড়ি , তোমার মত মানুষ , যাদের দেখার কেউ নেই তাদেরকে এরাই দেখে ।”
” খুব বালা আব্বা খুব বালা — যাগর কেউ নাই তাগর আল্লাহ আছে ।”
অফিসে গেল । বৃদ্ধার নাম বের করে । সব কিছু ঠিক আছে । একজন নার্স এসে বৃদ্ধাকে নিয়ে গেল একটি রুমে । সেখানে তার মত আরও তিন জন ছিল । রুম নাম্বার ০৫ । বিদায়ের সময় বৃদ্ধা তাকে ধরে সে কি কান্না । সেই কান্না থামতেই চায় না । আব্দুল সামাদের চোখ ভিজে উঠে । কথা দিল প্রতি সপ্তাহে একবার এসে খালাকে দেখে যাবে ।

———————————

Powered by themekiller.com