Breaking News
Home / Breaking News / কবি রুমানা নাসরীন এর গল্প ” মেলে “

কবি রুমানা নাসরীন এর গল্প ” মেলে “

অনুগল্প ঃ মেলে
রুমানা নাসরীন
তারিখ ঃ ১০/০১/২০২২

পাড়ার ছেলেরা যেদিন প্রথম আমার প্যান্ট খুলেছিলো আমি ছেলে নাকি মেয়ে তা পরীক্ষা করার জন্য, সেদিন ঐ বাচ্চা বয়সেও কি ভীষণ কেঁদেছিলাম আমি! ওদের উদ্দেশ্য কিছুই বুঝি নি, তবে প্রচন্ড হাসাহাসির শব্দে যে অবহেলা আর তাচ্ছিল্য ছিল, সেটা সহ্য করার মতো মানসিক শক্তি আমার ছিল না। আমার অপমান আর কষ্টের জবাব দিতে আমার বাবা মা আর বড় তিন বোন উঠেপড়ে লেগেছিল। না, কাউকে মারধর বা অন্য কোন শাস্তি দিয়ে নয়। তারা আমাকে আত্মরক্ষার জন্য তৈরি করেছিলেন। তিন বোনের পর আমার আগমনের সুসংবাদে আমার ছেলেপাগল মা খুব চেয়েছিলেন এবার যেন অন্তত তাঁর পুত্রসন্তান হয়। কিন্তু বিধি বাম! দুধের সাধ ঘোলে মেটাতে আমাকে ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের পোশাক পরিয়ে রাখতেন। তাই চট করে কেউ ধরতে পারত না আমি ছেলে নাকি মেয়ে। সেদিনের সেই ঘটনার পর বাবা আমাকে ক্যারাটে শেখাতে তৎপর হন, বাইসাইকেল কিনে দেন, প্রতিদিন ভোরবেলা আমাকে সাথে নিয়ে জগিং করেন। তারপর যখন মাধ্যমিক পাশ করলাম, তখন আমাকে আরও স্বাবলম্বী করতে একটা ডিসকভার ১০০ মোটরবাইক কিনে দেন এবং নিজেই চালাতে শেখান। এতো কিছুতে অবশ্য লাভের লাভ একটাই হয়েছিল, আর কেউ কোনদিন অন্তত আমার প্যান্ট ধরে টানাটানি করার দুঃসাহস দেখাতে পারে নি। বিনিময়ে পাড়ায়, বন্ধুমহলে, পরিচিত মহলে আমার নাম হয়েছিল “মেলে, মেয়ে+ছেলে=মেলে”!

জীবনের চলার পথে অনেক ভালো বন্ধু পেয়েছি, সাথী পেয়েছি। তবে পলাশকে পেয়েছিলাম ভরা পূর্নিমার মতো! স্কুল জীবন থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তাকে পেয়েছিলাম ছায়ার মতো। চলতে- ফিরতে, হাসতে -খেলতে কখন যে তাকে হতচ্ছাড়া হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে বসে আছি বুঝতেই পারিনি। যেদিন পলাশ তার বিয়ের দিনটা আমাকে জানালো, হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। না, একদম কাঁদিনি। তবে গলার কাছের দলা পাকানো কান্নার স্তুপটা খুব কষ্ট দিচ্ছিল, ব্যথা করছিল।

পলাশের বউভাতের অনুষ্ঠানে জীবনে প্রথমবারের মতো শাড়ি পরে গিয়েছিলাম। পলাশের চোখে মুখে কোন মুগ্ধতা খুঁজে পাইনি, তবে একটা চাপা হাসি ছিল। পলাশ খুব যত্ন করে আমাকে ওর স্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছিল, ” এই হলো আমার সেই বন্ধু, মেলে।”

অবাক হইনি, তবে মনে মনে হেসেছি। “তাহলে আমি তোর কাছেও শুধুই মেলে!”

লালমনিরহাট সদর।

Powered by themekiller.com