দেরি কেন
সেখ মনিরুদ্দিন
বহুদিন হোলো নদী তোমার কাছে যাওয়া হয়নি।
তোমার মনে অবগাহন করে সুখ দুঃখের গল্প করা হয়নি।
তোমার জলে আঙ্গুল ডুবিয়ে আঁকিবুকি কাটা হয়নি।
তোমার সজল টলটলে চোখে আমার মুখের ছবি দেখা হয়নি।
তোমার স্বচ্ছ জলে আকাশের নীল প্রতিবিম্ব দেখা হয়নি।
তোমার বুকে ভেসে যাওয়া খড়কুটো দেখা হয়নি।
গোধূলির সূর্যাস্তের কমলা আভা গায়ে মেখে তোমার তীরের সৌন্দর্য দেখা হয়নি।
তোমার জলে সূর্য ওঠার ঝিকিমিকি আলো দেখা হয়নি।
তোমার বুকে খেলা করা বক, মাছরাঙাদের দেখা হয়নি।
তোমার জলে মাছেদের ভেসে উঠে অক্ষম আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টা দেখা হয়নি।
তোমার তীর ধরে হেঁটে ছবির মতো প্রকৃতি দেখা হয়নি।
তোমার বুকে ভেসে চলা পানসি, ছিপ নৌকাদের দৌরাত্ম্য দেখা হয়নি।
তোমার উদ্ভিন্নযৌবনা রূপ যা আমাকে আকৃষ্ট করতো তাও দেখা হয়নি।
বহুদিন, বহুদিন—–
আজ এতদিন পর,
যখন আমি অবসরে আছি,
যখন আমি বয়সের ভারে কাহিল,
যখন আমার মনের ভালোবাসায় ঘুন ধরেছে,
যখন হাঁটতে চলতে কষ্ট হচ্ছে,
যখন আমার মাথার চুলে টাক পড়েছে,
যখন মুখের বেশিরভাগ দাঁত পড়ে গেছে,
যখন জীবন থেকে ফিরবার সময় হয়ে গেছে,
ঠিক তখন হ্যাঁ ঠিক তখনই এলাম তোমার কাছে।
তোমায় দেখে আশাভঙ্গের বেদনায় ব্যথিত হয়ে গেলাম।
তুমি বয়সের কারণে নূবজো হয়ে পড়েছো।
তোমার বুকে পলি পড়ে চর জেগে উঠেছে নানান জায়গায়।
পৃথিবীর পাপ ধুয়ে ধুয়ে তুমি ক্লান্ত অবসন্ন।
তুমি বিষ পান করে নীলকন্ঠ হয়ে গেছো।
তুমি মৃত্যপ্রায় এক বৃদ্ধার মত পড়ে আছো।
আমায় দেখে তোমার উচ্ছলতা প্রকাশ পেলো না।
বুঝলাম তা বয়সের সাথে হারিয়ে গেছে।
তোমার চোখের নিচে কালি পড়েছে।
তুমি অভিমান ভরা মড়া চোখের ছল ছল করা চাহনি নিয়ে আমার দিকে তাকালে।
যেন জিজ্ঞাসা করলে, এতো দেরিতে এলে কেন? কেন?
আমি উত্তর দিতে পারলাম না।
চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
লেখক এর কথা—-আমরা যখন কর্ম ব্যস্ততার মধ্য গগনে বিরাজ করি তখন নিজের মনের মধ্যে অনেক কিছু চাইলেও সেটা করতে পারি না সময়ের অভাবে। কিন্তু যখন অবসরের বেলায় এসে মনের জিনিসগুলোকে ফিরে পেতে চাই তখন উপলব্ধি করি যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সেগুলো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এই ধরনের ভাবনা থেকেই এই লেখাটা লিখেছি।
০৬/০১/২০২২
বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।