★ ঝুমকো জবার গাছ এবং তুমি
সুজিত কুমার দাস
০৫/০১/২০২২
আজ তোমাকে আবার মনে পড়ে গেল
আর মনে পড়ে গেল সেই ছোট্ট ঝুমকো জবার গাছটাকে।
গাছটাকে পিছনে রেখে তোমরা পাশাপাশি বসতে ঘাসের উপর,
তুমি চুল খুলে দিতে,
চুলগুলো তোমার পিঠ বেয়ে ঘাসের উপর পড়তো।
তোমার প্রিয় বান্ধবীরা তা দেখে ঈর্ষায় জ্বলে যেত আর তোমার পাশে বসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে নীরবে উপহাস করতো।
তুমি কিছুই বুঝতে পারতে না কারণ আনমনে কি যে তুমি ভাবতে তা তুমিই জানো।
আর এভাবেই তোমাকে একদিন দেখেছিল আমার বন্ধু রমাকান্ত
মানে আমাদের রমাকান্ত ঘোষ
দরিদ্র সুদর্শন, লাজুক,গরীবের নামকরা প্রাইভেট টিউটর।
টাকা না দেওয়া বা কম টাকা দেওয়া অভিভাবকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলো সে।
আনমনা তোমাকে দেখেই ভালো লেগেছিল তার।
সারাদিন টিউশনি করা আর তা থেকে রোজগার করা টাকা বাড়িতে পাঠানোই ছিলো তার জীবনের ছন্দ।
তোমাকে দেখার পর থেকে জীবনের ছন্দ বদল হলো তার।
কিছু টিউশনি ছেড়ে দিয়ে তোমার আনমনা বদন দর্শন লোভে প্রতিদিন ঝুমকো জবা গাছটির আশপাশে অবস্থান করতো সে।
কতদিন ভেবেছে তোমাকে ভালোলাগার কথাটা বলবে কিন্তু পারেনি।
তারপর কতদিন ঐ জবা ফুলের গাছ থেকে দু’টি ফুল তুলে তোমাকে দেবার জন্য ঘুরে বেড়িয়েছে কিন্তু পারেনি।
তারপর কতদিন দুটি করে ফুল তুলে তোমার বসবার জায়গার সামনে ফুল দু’টিকে রেখে দিয়েছে
তোমার নজরে আসবে বলে কিন্তু আসেনি।
তুমি ছিলে তার জীবনের ছন্দ বদলের ছন্দ, প্রথম ভালোলাগা কোনো নারী।
কিন্তু সে কথাটি তোমাকে বলতে না পারার যন্ত্রনায় নিদারুণ অস্থিরতা পেয়ে বসেছিল তাকে।
তারপর একদিন দুটি জবাফুল তোমার সম্মুখে তুলে ধরে বলেছিলো,
“স্বাক্ষী এই জবা ফুল আর স্বাক্ষী ঐ জবাগাছ তোমাকে ভালোবাসি আমি। ”
তুমি কথাগুলো শুনলে আর মুচকি হেসে চলে গেলে।
সেই যে গেলে আর এলেনা।
অথচ রমাকান্ত প্রতিদিন আসে।
গাছটি নেই তবুও রমাকান্ত ঝাপসা চোখে এখনও গাছটিকে দেখতে পায়।