Breaking News
Home / Breaking News / কবি শিবাজী বসু এর গল্প “মানুষ দের নিয়ে”

কবি শিবাজী বসু এর গল্প “মানুষ দের নিয়ে”

আজ একটা গল্পঃ মানুষ দের নিয়ে।
শিবাজী বসু/১৩/১২/২১

জীপ গাড়িটা আমাকে নামিয়ে নিমেষে পাহাড়ের বাঁকে উধাও হোলো।

স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছি এক মোহনায়,যেখানে আমাকে প্রমাণ করতে হবে আমি আর সেই ছোটো নেই।তাই এলাম একা এই পাহাড়ে বেড়াতে। থাকবার ঠিকানা বলতে আমার স্কুলের হরি বাহাদুর কাকুর গ্রামের বাড়ী।
ওদের ভাষাতে একটা চিঠি আর কিছু টাকা ওর বউকে দেবার জন্য আমার কাছে।

পাহাড়ে সকাল যেমন তাড়াতাড়ি আবার অন্ধকার ও নেমে আসে ঝুপ করে।

কোনদিকে যে যাবো বুঝতে পারছিনা।মাঝে মধ্যে একটা গাড়ি যাচ্ছে হুস করে।একটা লোকও নেই যাকে জিজ্ঞেস করবো….আস্তে আস্তে দিনের আলো কমছে।

একজনের দেখা পেলাম পিঠে একটা বিরাট ঝুড়ি নিয়ে আসছে আমার দিকে। কিছু জিজ্ঞেস করতেই প্রথমে হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়াল। বললাম,হরি বাহাদুর এর বাড়িটা কোন দিকে,আবার হেসে আমাকে ওর পিছে পিছে আস্তে বললো।রাস্তা থেকে নেমে গেলো, সরু পাহাড়ি রাস্তা ,ওই রাস্তা দিয়ে এসে একটা ছোটো কাঠের একতলা বাড়ীর সামনের দিকে এসে দাড়ালাম। বাড়ী র ভিতর থেকে একটা ছোটো সাদা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে এলো আর তার পিছনে তিন জন মহিলা।
বললাম আমি কলকাতা থেকে এসেছি।চিঠি আর টাকা টা হাতে দিলাম। ওদের মুখে যে হাসি আনন্দ দেখেছিলাম
আজও ভুলিনি। ভুলবোনা কোনোদিন।
আমার পরিচয় মহিলার কাছে,আমি ওনার স্বামীর কাছ থেকে এসেছি,আর দুটো মেয়ের কাছে ,ওদের বাবাকে আমি অনেক দিন থেকে চিনি।
সাত টা দিন কেটেছিল একটা নামহীন,ছোটো একটা পাহাড়ী গ্রামে। এতো আদর, যত্ন,ভালোবাসা,আর শান্তি পায়নি জীবনে।

জানতে ইচ্ছে হয়নি ওদের কি জাত,ওরা কি খায়,কোনটা উচিত আর অনুচিত।শুধু জেনেছি ওরাই আসল মানুষ।

রোজ হেঁটে হেঁটে আসে পাশে ঘুড়তে যেতাম।সাথী ছিল হরি কাকুর দুই মেয়ে আর সেই সাদা কুকুর,যে একমিনিটের জন্য ও আমাকে ছাড়েনি।

কাকিমা খেতে দিতেন আর তাদের মেয়েরা দরজার দুদিকে দাড়িয়ে থাকতো আমার কাছে কলকাতার গল্পঃ,স্কুলের গল্পঃ,ওদের বাবার গল্পঃ আরো কত কি।
ওরা বাংলা হিন্দী মিশিয়ে কথা বলতো,আর যেখানে বুঝাতে পারতো না,হাসি দিয়ে মেক আপ করতো।
হাসি টা ওদের পাহাড়ী ঝরনা র চেয়ে ও অবিরাম ধারায় ঝরে পড়তো।

যেদিন চলে আসি..সবার মুখটা কেমন যেনো বিষাদময়। কথা,হাসি হোলো না অন্য দিনের মতন।আমারও একদম ভালো লাগছিলো না।কলকাতা তে গিয়ে আবার পড়াশুনা,একঘেঁয়ে বন্দী জীবন।
গাছের কিছু ফল,সবজি,আর হাতে তৈরী কিছু একটা মিষ্টি, থোলে তে দিয়ে আমাকে
বললো ,তুমি বাড়ীতে নিয়ে যেও আর অল্প কিছু হরি কাকু কে দিও।আবার এসো ।
কোনো কথা বের হলো না মুখ দিয়ে।জল এসে চোখে আটকে গেলো।

এতো বড়ো আকাশ,প্রান্তর,নির্জনতা, পাখীর ডাক আর সমুদ্র সমান ভালোবাসা পিছনে রেখে বাস রাস্তায় হাটতে হাটতে এলাম।সঙ্গে এলো সেই সাদা ছোটো সাথী পথ চিনিয়ে।
আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে
তবে ওর ছুটি।

Powered by themekiller.com