Breaking News
Home / Breaking News / কবি রিটন মোস্তফা’র 🛑 কবি হুলুস্থুল সাহা এবং সাইক্লোজি 🛑

কবি রিটন মোস্তফা’র 🛑 কবি হুলুস্থুল সাহা এবং সাইক্লোজি 🛑

🛑 কবি হুলুস্থুল সাহা এবং সাইক্লোজি 🛑
– রিটন মোস্তফা

বরাবর যা হয় তাই হলো। বাড়ি থেকে রাস্তায় উঠতেই ভো করে একটা চায়না ইঞ্জিন চালিত রিক্সা এসে পায়ের সাথে ঘেঁষে চলে গেল এবং বরাবরের মতই আবার প্যান্টের একটু ছিঁড়ে গেল। যেহেতু এটা নতুন ঘটনা না, তাই তেমন একটা মন খারাপ হলো না। এমনিতেই এই প্যান্ট তার আয়ু অতিক্রম করে আমার পরনে অতিরিক্ত দিন কাটাচ্ছে। পরের আরেকটা অটো রিক্সা ফাঁকা পেতেই ওতে উঠে বসলাম। যাব নাটোর স্টেশন মোড়, কফির খোঁজে।

দুপুরে খাবার খেয়ে কফির ভুত চেপেছে মাথায়। কিন্ত স্টকে যা ছিল গত রাত জেগে সেটা তলানিতে ঠেকিয়েছি। উপায় নেই আর বাড়িতে প্রতিদিনের মতো কফি বানিয়ে খাওয়া। এখন ঐ ভুত নামাতে গেলে আমাকে কফির খোঁজে স্টেশন মোড় পর্যন্ত যেতে হবে। জানি এই দুপুরে কফি কেন চা’ও পাওয়া যাবে না। তবুও রিক্স নিলাম ভুত নামানোর জন্য। যদি কোন কফি শোপ অথবা চা’য়ের দোকান খোলা পাই। রিক্সার গুঁতো লেগে হাঁটুর কাছে যেখানে প্যান্ট ছিঁড়ে গেছে, ওখানে একটা হাত রেখে অটোতে ছুটলাম স্টেশন মোড়।

কপাল খারাপ হলে যা হয় আমার সাথে আজও তাই হলো। স্টেশন মোড়ে অসংখ্য দোকান, কিন্ত কফি শোপ দুটোই বন্ধ। অধিকাংশ চ’য়ের দোকনও তার সাথে বন্ধ। কি করবো ভাবছি আর ঘুরছি। এমন সময় মদন কাকার চা’য়ের দোকানের কথা মনে পড়ল। ওটা কাঁচা বাজারের একটা গোলির মধ্যে। একটা কনফেকশনারীর দোকান থেকে মিক্স কফির দুটো প্যাকেট নিয়ে রওনা দিলাম গোলির ভিতর। কাকার দোকান হরতালেও খোলা থাকে। পিকেটাররা ওখানেই চা খেত আর হরতাল করত একসময়। এখন আর হরতাল হয় না এদেশে। ভাল হয়েছে।

কপাল ভাল এখানে। কাকার চা’য়ের দোকান খোলা এবং সেখানে দু চারজন লোক এখনও বসে চা খাচাছে। আমিও ঢুকে পড়লাম। ঢুকেই প্রথমে যেটা চোখে পড়লো সেটাতে একটু বিচলিত হলেও পাত্তা দিলাম না। একটা আমার বয়সী লোক বসে চা খাচ্ছে আর মোবাইল ঘাঁটছে। আমি দেখেই চিনতে পারলাম। আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন উনি। উনার আইডির নাম ” কবি হুলুস্থুল সাহা ” (আসল নাম চেপে গেলাম এখানে)। ওনার সাথে সামনা সামনি কখনও পরিচয় না হলেও, ওনার প্রতিদিনের ছবি আর কবিতা আপলোডের কারণে পরিষ্কার চিনতে পারছি। কিন্ত এখন আমার কফির নেশা, না চেনার ভাব করে মদন কাকাকে বুঝিয়ে দিলাম কফিটা গরম পানিতে ঢেলে কিভাবে ঘেঁটে দিতে হবে। মদন কাকা লেগে গেলো ঘাঁটতে, আমি একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম সেই কফি হাতে।

লোকটা, মানে কবি হুলুস্থুল সাহেব আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। ভয় পেলাম আমি। চিনে ফেলেনি তো। নিজের মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে ওদিকে নজর দেবার চেষ্টা করলাম, যাতে লোকটা আমার চেহারা ভাল মত দেখতে না পায়।

“ভাইজান কেমন আছেন?”

এখন আর উপায় নেই। লোকটা আলাপ করতে চাইছেন আমার সাথে। ” জ্বী ভাই আলহামদুলিল্লাহ, খুব ভাল আছি। ”

– ভাইজান কিছু মনে না করলে আমার একটা উপকার করবেন পরামর্শ দিয়ে?

– জ্বী অবশ্যই ভাই। বলুন কি সমস্যা, আমি চেষ্টা করবো।

কবি হুলুস্থুল সাহা এগিয়ে এসে বসলেন আমার পাশে। তার মোবাইলটাতে ফেসবুক অন করা। সেখানে তার একটা কবিতার নীচের কমেন্ট বক্সের একটি কমেন্ট দিখিয়ে বললেনঃ

– ” দেখুন দুনিয়া আজ কোথায় গেছে আর আমরা কোন দিকে দৌড়াচ্ছি…”

– বুঝতে পারলাম না ভাই। খুলে বলেন, কি সমস্যা?”

– এই যে এই কমেন্টটা দেখুন, আর যে এই কমেন্ট করছে তার নামটা দেখুন। ইনিও আমার মতই অনেক অনেক ভাল লেখেন। হয়ত আমার থেকে সে আরও বেশি ভাল লেখেন। কিন্ত ভাই দেখেন, এই লোকের প্রতিটি কবিতায় আমি যথেষ্ট প্রশংসা করে তার কবিতার বিশ্লেষণ করে মন্তব্য করি বহুদিন থেকে। কিন্ত এই লোকটা আমার বানান ভুল হলে ধরে দেয় ঠিকই, কিন্ত যেই কবিতায় বানানের সমস্যা থাকে না, সেখানে শুধুমাত্র ” দারুণ ” “চমৎকার ” “ভাল” এরকম ছোট ছোট মন্তব্য করে। লোকটা ভাবে কি নিজেকে? বলেন তো ভাই, আমি এত প্রশংসা করে খুঁটিনাটি সহ তাকে মন্তব্য করি অথচ তার মন্তব্য গুলো কেমন যেন ইদানীং আমার কাছে দায় সারা মনে হচ্ছে। এর কারণটা কী বলতে পারবেন ভাই? আমি সেই সকাল থেকে আজ এটাই ভাবছি। কিন্ত উত্তর পাচ্ছি না। উনি কি এই ছোট ছৌট মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে তাচ্ছিল্য করেন? বলেন ভাই….?”

উল্লেখ্য, আপাত দৃষ্টিতে অন্যদের কাছে তার এই হুদাই ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে টেনশনটাকে অনেকেই হয়ত বা পাগলামি ভাববেন। কিন্ত আমি নিজেই এক ফেসবুক পাগল হয়ে ব্যপারটিকে ঠিক তার দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখার চেষ্টা করলাম এবং তার অভিযোগের যথেষ্ট যৌক্তিকতা দেখতে পেলাম। আরেকটা কথা উল্লেখ্য করি এখানে। ঐ লোকের কমেন্ট বক্সে আমার নামটাও ঐ আসামীর নামের উপরেই শো করছে।

মানুষটির মানসিক কষ্টের বিষয়টা অনুভব করতে পারছি আমি, ফেসবুকের অটো কমেন্টের মতই ” l feel your pain……… ”

আমার কফি খাওয়া শেষ। আমি উঠতে উঠতে কবি হুলুস্থুল ভাই এর পিঠে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে বললাম ” প্রিয় কবি, আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে ধরেছেন। যেটা আমরা হয়ত অনেকেই এড়িয়ে যাই। আপনি এই ধরণের আচরণে কষ্ট পাবেন না। বরং অহঙ্কার করুন নিজের জন্যই। ঐ লোকটির এই তাচ্ছিল্য মার্কা মন্তব্যই বলে দিচ্ছে যে ‘ সে নিজেই হিংসা করে আপনাকে।’ “। আপনি যে অসাধারণ লেখেন এটা তার সহ্য হয় না বলেই তিনি এমনটা করেন। পাশাপাশি তিনি যে আপনার প্রতিটি লেখাই খুব মনোযোগের সাথে পড়েন তার প্রমাণ সে আপনার বানান ভুলটা এজন্যই দেখতে পায় এবং উল্লেখ্য করে। যদিও এটা তার অবশ্যই একটি ভাল গুণ। বাকিটা আপনার আন্তরিকতার বিনিময়ে তার তাচ্ছিল্য মার্কা মন্তব্য আপনাকে তাচ্ছিল্য না বরং আপনার লেখার গুণগত মানের প্রতিই তার হিংসা অথবা ঈর্ষার প্রতিফলন। কষ্ট পাবার কিছু নেই কবি। লেখা চালিয়ে যান। আপনার লেখা আমি পড়ি। সত্যিই অসাধারণ লেখেন আপনি।”

মদন কাকাকে কফি বানানোর খরচ দিয়ে যখন দোকান থেকে বের হব তখন লোকটা আমার হাত চেপে ধরলো। ” ভাই আমার পক্ষ থেকে একটা চা খান”। বোধহয় হুলুস্থুল ভাই আমার পরামর্শে শান্তি পেয়েছেন।

আমি মানুষ পটানোর এক গাল হাসি দিয়ে বললাম ” অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই, এই মাত্র খেলাম। কফির ভুত চেপেছিল, ওটা নেমে গেছে। আরেকদিন খাব, ওকে।”

গোলির মুখে যেতেই অটো পেয়ে গেলাম, ওটাতে উঠবো যখন তখন কবি হুলুস্থুল ভাই এর চিৎকার শুনতে পেলাম। ভাই,,,,,,, আপনি রিটন মোস্তফা না…..?

অটো ছুটছে, প্যান্টের ছেঁড়া অংশে হাত দিয়ঃ ওটা আড়াল করে বাড়ির দিকে রওনা হলাম।

Powered by themekiller.com