Breaking News
Home / Breaking News / আগামী দিনের রাজনীতি হতে হবে জ্ঞাননির্ভর: ওবায়দুল কাদের

আগামী দিনের রাজনীতি হতে হবে জ্ঞাননির্ভর: ওবায়দুল কাদের

অনলাইন নিউজঃ
আগামী দিনের রাজনীতি হতে হবে জ্ঞাননির্ভর, সেজন্য ছাত্র রাজনীতিকে জ্ঞান এবং মূল্যবোধের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আজ শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ‘শিক্ষা দিবস’ উপলক্ষে দলটির শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন কমিটি আয়োজিত ‘শিক্ষা: ২০৪১ সালের লক্ষমাত্রা অর্জনের বাস্তবিক কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তা বাস্তবায়নে কোনও ছেঁদ না ঘটলে আমাদের শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। শিক্ষা কোনও সুযোগ নয়, এটি মৌলিক অধিকার- উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা যে মু্ক্তচিন্তা এবং দেশপ্রেমের বিকাশে অপরিহার্য সেটা আমরা ভুলে গেছি। আজকে শিক্ষা আমাদের কাছে পণ্য হয়ে গেছে। শিক্ষা হয়েছে পরীক্ষাভিত্তিক। স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতে পাস করার চিন্তা। আমরাতো পরীক্ষার্থী চাই না আমরা শিক্ষার্থী চাই। শিক্ষাকে জীবিকার প্রয়োজনে চাই, নাকি জীবনের প্রয়োজনে- এটি আমাদের বুঝতে হবে। জীবিকা ভিত্তিক শিক্ষা হলে গুণগত শিক্ষা আড়াল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, শিক্ষা দিবসে আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপ-কমিটি একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে। কিন্তু এ দিনটিতে ছাত্র সংগঠনগুলো শেষ করে বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল সেই ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ কোন ছাত্র সংগঠন কর্মসূচি দিয়েছে তা চোখে পড়েনি। জানি না কোনও কর্মসূচি দিয়েছে কিনা। অথচ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম মাইলফলক ছিল ভাষা আন্দোলন এবং দ্বিতীয় মাইলফলক ছিল এই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন কেন হয়েছিল ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে প্রশ্ন করলে কয়জন তারা জবাব দিতে পারবে, তা জানি না। সেদিন একটি সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষাব্যবস্থা আইয়ুব খান আমাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। ওবায়দুল কাদের আক্ষেপ করে বলেন, বাষট্টিতে ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান শরীফ কমিশন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু আজকে ছাত্র সংগঠনগুলোর সেই গৌরবময় ইতিহাস কোথায় গেল। ঐতিহাসিক ঊনসত্তুরের ২৪ জানুয়ারিও ছাত্র সংগঠন পালন করে বলে চোখে পড়ে না। ইতিহাসের এই মাইলফলকগুলো আজ চরমভাবে উপেক্ষিত। আমরা এই দিবসগুলো পালন করি না। ছাত্রনেতারা জাতীয় রাজনীতি নিয়ে বেশি মাথা কামান। ছাত্রদের সমস্যা ক্যাম্পাসের সমস্যা নিয়ে কোনও ছাত্র সংগঠনকে কর্মসূচি দিতে খুব একটা দেখি না। ছাত্ররা সবাই জাতীয় রাজনীতি নিয়ে কথা বলে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে কথা বলে। ক্যাম্পাস বা তাদের সমস্যা নিয়ে তারা কোনো কর্মসূচি দেয় না। এইভাবে চললে ছাত্র রাজনীতির আকর্ষণ সাধারণ ছাত্রদের থেকে অনেক দূরে সরে যাবে। ছাত্র রাজনীতির সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে যদি আকর্ষণীয় না হয়- তাহলে আমি বলব সেই ছাত্র রাজনীতি মূল্যহীন। শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, একশটি তো নয়ই বিশ্বের পাঁচশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও বাংলাদেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমানের নয়, এটি খুবই দুঃখজনক। র‌্যাংকিংয়ের জন্য গবেষণা খুবই জরুরি। আগে গবেষণা খাতে বিনিয়োগ হতো না। এখন যেটা হয় সেটা অপ্রতুল। শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ দরকার। তিনি বলেন, আজকে অনেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করেন। স্বাধীনতার মহানায়ক বলে দাবি করেন। স্বাধীনতা যেন পর্বতের মূষিক প্রসবের ঘটনা। হঠাৎ করে কেউ বাঁশিতে ফুঁ দিল অমনি স্বাধীনতা এলো। এমনটা তো নয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মেধাবীদের মেধার মূল্যায়ন করতে হবে, কোনও নেতার তদবিরে নয় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন শিক্ষার মান যেমন বাড়াতে হবে তেমনি শিক্ষকতার মানও বাড়াতে হবে। করোনার এই অতিমারিতে অনেক ছাত্র-ছাত্রী ঝরে গেছে, স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে- তাদের খুঁজে বের করে আবারও শিক্ষাঙ্গনমুখী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে ভাবেন না। তিনি ভাবেন আগামী প্রজন্ম নিয়ে। আর এটাই হওয়া উচিৎ। পরবর্তী প্রজন্মের কথা মাথায় আছে বলেই তিনি আজ রাষ্ট্রনায়ক। এ মাসের শেষেই বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, হলগুলোতে জীবন যাত্রা কেমন তা দেখতে হবে। হলগুলোতে অছাত্ররা অবস্থান করে, তাদের লিখিতভাবে হলে থাকা বন্ধ করতে হবে। এ নিয়ে কে খুশি হলো, কে অখুশি হলো- তাতে কিছু যায় আসে না। শিক্ষাকে গুণগত গভীরতায় আনতে হলে এসব সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। প্রতিযোগিতাময় গ্লোবাল ভিলেজে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনা আর প্রযুক্তি মনস্কতায় গড়ে তুলতে হবে নতুন প্রজন্মকে। ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের উদ্যমি তরুণদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে সমৃদ্ধ আগামীর জন্য, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার জন্য, শেখ হাসিনার সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশের জন্য এবং সজিব ওয়াজেদ জয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য। শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন উপকমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুনাজ আহমেদ নুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর এ এস এম মাকসুদ কামাল, সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাবেক সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার রোকেয়া সুলতানা। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব শামসুন্নাহার চাঁপা।

Powered by themekiller.com