Breaking News
Home / Breaking News / কলকাতার বিশিষ্ট কবি অনমিত্র স্যানাল এর ” কবিতা ও কৃষক “

কলকাতার বিশিষ্ট কবি অনমিত্র স্যানাল এর ” কবিতা ও কৃষক “

কবিতা ও কৃষক

অনমিত্র

০৭/০৮/২০২১

নিত‍্যকর্মে কবিতা ও কৃষক এক অবশ‍্যম্ভাবী সৃষ্টি.. পাতা ঝরে..পাথরের গা ঘেঁষে সাঁঝবিহানের উপত্যকা সেকেলে মুখশ্রী নিয়ে পড়ে থাকে শীর্ণ ভিক্ষুকের মতো,যেনো নির্যাতিত, নাব‍্যতাহীণ নদ, পালক ঝরে যাওয়া উলঙ্গ কাক কিম্বা নিসঃঙ্গ টেলিগ্রাফ খুঁটির মতো..পড়ে থাকে..
ভেতরে কুরে খায় শব্দ হীন অতলান্তিক ফাঁপা..
তুমি বর্ষামঙ্গল চেয়েছিলে এই তা থৈ আষাঢ়ে..শ্রাবন তো নিভু নিভু..অতি মন্থর
আজ কোনো স্বস্তি নেই..শত প্রচেষ্টা তেও গর্ভ-সঞ্চার হয়নি.. প্রতিটি শব্দ যদি ফ‍্যালোপিয়ান পেরিয়ে যায়..নিষিক্ত হতে চায় তবে ঝরে কেনো যায় শুকনো পাতার মতো..?
এ বৈশাখে তুমি কোনো কবিতা দাওনি..কিছু পদ‍্য গর্ভপাতে গেছে, কিছু গেছে আলস‍্য বিকেলে..আমি কাঙাল, ন-পুংসক, অকারণে খুঁজি শব্দবীর্য..
সে খানিকটা ধুমসো বুক থেকে প্রাণপণে দুগ্ধ খুঁজে মরা, কিছুতেই ক্ষুন্নিবৃত্তি হয় না পীযূষে…
অথচ দেখো কঠিন এ নাগপাশে এতো ভোগ..এতো নারী, সব শব্দের সাঁড়াশি নাগপাশ,
তোমার ভিজে শাড়ির পাড় আমার নির্যাতিত শব্দের রঙিন চলন্তিকা ,আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরা মেঘ,
তোমার হাওয়ার দেশে থামে,
তোমার দৃষ্টিখানি সোজা,
আমার সহজ গতিবেগ..

অষ্টম প্রহরে প্রথম লেখা.. দীর্ঘ অনাবিষ্কৃত ছবির মতো টলটলে জ‍্যোৎস্নার উদ্ভাসিত মুখ, কিম্বা আটপৌরে সকাল আজই ফিরেছে..
তাই বলে আমার জীবনের পূর্ব-পশ্চিম,যুগলে অবস্থান করবে বা তোমার স্পর্শে ফেরত পাবো নব‍্য বিকেলে, এমন আশা করিনি কখনো..
তোমার গর্ভে যত প্রতিষ্ঠিত শব্দ.. পূর্ণবীর্যে ধারণ করেছো..
দেখো শতাব্দীর শেষপ্রান্তে মৃত্যু নিয়ে বেশ কিছু বিষন্ন শব্দ নিভৃতে অশ্রুপাত , অজস্র শব্দের ক্ষত..
প্রতিটি ক্ষতের মুখে জিভ দিলে বেশ একটা আত্মপ্রকাশ হয়..
প্রতিটি আঘাত যদি কথা বলে…প্রগতিশীল শব্দখেকো জিভ তবে বেশ একটা আত্মসুখ পায়, ঘাসখেকো শব্দ গুলো নড়েচড়ে কথা বলে..
প্রতিটি অক্ষর ছুঁয়ে যায়..কিছু শব্দ বিশ্বাসের সমূলে আঘাত করে..বুকের পাটা আছে বলতে হবে..

গ্রীষ্মের পাশেই দেখো বর্ষা, নিভৃতে সহবাস করে..
প্রসূতির অনুভবে ঝরে পড়ে বিপুল ঐশ্বর্য রাশি..
অথচ আমার পতনে দেখ নীরক্ত অভিব‍্যক্তি..কি ভীষণ বিষক্ষয়, দীর্ঘ চুম্বনে অথবা মেহগনি বনে,সব নারী ফুরিয়েছে..
তড়িঘড়ি নিস্ফল বেষ্টনীর অনধিকার গোলাপের পরিপাটি মঞ্জরীর স্বস্তিতে..
নির্জনে যে কবিতা গর্ভে ধরেছো..সে যদি বসন্ত সন্তান হয়..
তোমার দু-হাতে অর্কপ্রভ লাল হয়ে যাক আমার চিবুক-গাল..
আমায় জাগিও..প্রতিটি পদ‍্যে থাকে প্রসব বেদনা.. কিছু কিছু সায়াহ্নে অনেক কেচ্ছা আছে..ও বুকের সবটুকু ভার..আমার অধরে কিছু.. কিছু আছে অগ্নিছোঁয়ায়..তবুও ফুরিয়ে গেলে, কি ভীষণ আকুতিতে..বলেছিলে এ সাম্রাজ্য তোমার.. বৈরাগে বৈভবে, আস্তাকুঁড় ঘেঁটে নিভে যাওয়া সব ছাই সব অবক্ষয় এখানে এনেছি..
নব্বইয়ের বাতিল কবিতা যত অগ্নিতেই যাক , যা কিছু পাপ , সব জীর্ণদেহী সন্ন্যাসী-র মতো শীর্ণকায় একই বৃত্তে ইশারায় ঘুরতে থাকা শান্ত মেঘের মতো..
পরিশীলিত ভাবনার শতাব্দী প্রাচীন অথচ সেখানেও বিষমুক্তি হলো না এখনো.. শব্দের মুক্তি কই..চোখেই পড়ে না.. বন্ধন নেই..তাই মুক্তি ও নেই.. অথচ দেখো যৌনতা আছে সাড়ে ষোলোআনা..তাই প্রেমও কেমন অক্ষুন্ন..

আমার কবিতাগুলো বন্ধন হারিয়েছে কবেই.. যৌনতা সেদিনও ছিলো না..শুধু ছিলো ন-পুংশক প্রেম..এ বসন্তে সমস্ত বল্কল খুলে গেছে..
বার্ধক‍্য নিয়েছে বিদায়..
অনেকটা যুবক হয়ে যদি বলো..ইচ্ছামৃত‍্যু সঁপেছি তোমায়..তবে আর বাল‍্যকালে লোভ করবো না..
শব্দবীর্যৈ নিষিক্ত করবো তোমায়..কবিতা প্রসব হলে প্রেমের চাদরটুকু তুলে রেখো ..বুকের দুদিকে যে জানলা পর্দানসীন..কেউটের বিস্তির্ণ ফণায় সে জ্বলছে..যারা বিভেদকামী..
বলবে..” কারা প্রেমে শোয়..কারা শোয় পদ‍্যের পাশে..যেমন শৈশব শোয় পরিপাটি চড়ুই এর পাশে..!!

আকাশ জোড়া শব্দে আমারও প্রেম..অথচ আমার প্রেমিকা আমায় ভেবেছিলো..সকালের অর্কপ্রভ আলো..
আমিও তাকে চাঁদ ভেবে গেছি..দুজনের আকাশ এক..তবু কেনো দুজনেই একা…

পুরোনো কবিতা গুলো ভীড় করে আসে না মাথায় তবুও শব্দেরা চুরি হয়ে যায়..
সব দুঃখ আলগা হয়ে আছে
চুরি যায় স্তব্ধ বিকেল..
লোভ আর মোহ সব স্তুপিকৃত হৃদয়ের কাছে..

Powered by themekiller.com