Breaking News
Home / Breaking News / ঝরে যাওয়া নক্ষত্র..”ইকরাম চৌধুরী”

ঝরে যাওয়া নক্ষত্র..”ইকরাম চৌধুরী”

ঝরে যাওয়া নক্ষত্র..”ইকরাম চৌধুরী”
এম. আর হারুন
…………………………………
মুঠোফোনের স্ক্রিনে এখন আর ভেসে ওঠেনা ইকরাম চৌধুরীর নাম। আমার আপাদমস্তক ভরে শ্রদ্ধাসারে যাকে লালন করেছি, যার হাত ধরে আমার সংবাদ লেখার কৌশল, যার প্রেরনায় আমি আজ “সাংবাদিক” বনেছি, সেই ইকরাম চৌধুরী গত এক বছর হলো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে, আমাদের অশ্রুজলে ভাসিয়ে আপন ঠিকানায় বসত করছে। একদিন সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে জানি, কিন্তু আমার বুকের পাঁজর ভেঙ্গে শ্রদ্ধাভাজন এ মানুষটি চলে যাবে, কে জানে। চাঁদপুরে সাংবাদিক গড়ার শিক্ষক ছিলেন তিনি। জীবনের সব গুলো দিন মানুষ ও মানবতার কল্যানে নিয়োজিত রেখে লিখে গেছেন পত্রিকার পাতা জুড়ে। তার লেখনির মাঝে পত্রিকার গ্রাহকরা মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠতেন। তিনি সামাজিকতা বজায় রেখেই লিখতেন। ৮ আগস্ট সাংবাদিক গুরু ইকরাম চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। মনে হয়না তিনি আমাদের মাঝে নেই, মাঝে মাঝে মুঠোফোনের স্ক্রীনটা চেক করি, যদিও তার নাম্বার থেকে আর কখনও আমার কাছে রিং আসবে না, তারপরও নিজেকে আড়াল করতে পারছি না। এই বুজি গুরু আমাকে ফোন দিয়ে চাঁদপুরের ইতিহাস জানতে চাইবে, এই বুজি আমাকে ধমক দিয়ে বলবে নিউজ কম আসছে কেনো, তুই এখন কি করিস, চোখ কান খোলা রাখিস। সেই ইকরাম চৌধুরী আজ ঝরে পড়া নক্ষত্র। আমাকে খুবই ভালোবাসতেন ছোট ভাই কিংবা সন্তানের মত। আমিও কখনও তার কথার অবাধ্য হইনি, আমাকে সব সময় তার কাছে রাখতো। দুজনে মিলে সংবাদ সংগ্রহের কাজ মিলেমিশেই করতাম। পত্রিকার নিউজের কোনো কমতি ছিলোনা, হঠাৎ করেই নিউজের থিম তার মাথায় চলে আসতো, হাস্যোজ্জল এ মানুষটি পৃথিবী থেকে অনেক দুরে অবস্থান করছে।
১৯৯৯ সালের জুন মাসে ইকরাম চৌধুরীর সাথে আমার পরিচয়। চাঁদপুর থেকে সরাসরি “দৈনিক চাঁদপুর দর্পন” নামে একটি ছোট পত্রিকা বের হবে। সংবাদকর্মী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আবেদনপত্রটি নিজ হস্তে লিখে শহরের কুমিল্লা রোডের মিনি সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় গেলাম, সালাম দিতেই বললো, বসো, বেশ আমি বসে রইলাম, তখন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সাংবাদিক জালাল চৌধুরী, বার্তা সম্পাদক ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সার্কুলেশন ম্যানেজার লক্ষনচন্দ্র সূত্রধরসহ, শেখ মহিউদ্দিন রাসেল, সোহেল রূশদী এবং লিটন ভুইয়া বসে আলোচনা করছিলেন পত্রিকা নিয়ে। হঠাৎ আমাকে বললেন, কিছু বলবেন, আমি দাড়িয়ে বললাম স্যার আমার আবেদন পত্রটি জমা দিতে আসলাম, তিনি আমার আবেদন পত্রটিতে একবার চোখ বুলিয়ে ড্রয়ারে রেখে দিলেন, আমাকে পরে আসতে বললেন। তার কয়েকদিন পরই আমি আবার অফিসে গেলাম, নির্বাহী সম্পাদক জালাল চৌধুরী বললেন, এটা কি আপনার হাতের লেখা, আমি বললাম জ্বী স্যার, তিনি আমাকে আবার বললেন, আপনি আমাদের সামনে আবেদনটি আবার লিখুন, আমাকে সাদা কাগজ কলম দেয়া হলো, আমি তাদের সামনেই আবেদনটি লিখলাম, জালাল চৌধুরী আগের লেখা আর বর্তমান লেখা মিলালেন। তিনি চমৎকার হাতের লেখা বলে আমাকে স্নেহের সাথে ধন্যবাদ দিলেন। তারপর বললেন, আপনাকে পরে জানানো হবে। আমি সেখান থেকে চলে আসি। আবার কয়েকদিন পর অফিসে গেলাম, ইকরাম চৌধুরী বললেন, আপনাকে নিয়োগ দেয়া হবে। আপনি নিয়মিত কাজ করবেন, নিজের আত্মসন্মান রক্ষা করে চলবেন পত্রিকার কাটতি উঠাতে হবে। আমিও তার কথায় রাজি হয়ে গেলাম, তিনি যে একটি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক তা আমার মনে হয়নি, তিনি সবার সাথে নম্রভদ্র বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করে যাচ্ছেন। পত্রিকা বের হলো, এখন পাঠকের হাতে তুলে দিতে হবে, সম্পাদক হয়ে গেলেন পত্রিকা বিলিকারক সেই সাথে আমিও। কত রাত তার সাথে রং চা আর টোস্ট বিস্কুট খেয়ে কেটেছে তা আর বলার কি থাকে। এক সময় আমি তার খুব কাছের একজন সংবাদকর্মী হয়ে গেলাম। দুজনে মিলে সংবাদ লেখা আর নতুন নতুন কৌশল বের করতে লাগলাম, বছর না ঘুরতেই ইকরাম চৌধুরীর সাধনায় দৈনিক চাঁদপুর দর্পন জেলায় প্রচুর সুনাম সুখ্যাতি অর্জন করতে লাগলো। একজন নিষ্ঠাবান সৎ সাংবাদিক হিসাবে ইকরাম চৌধুরীর নাম ছড়িয়ে পড়লো চাঁদপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা গুলোতে। তিনি ছিলেন মহৎ একজন মানুষ, তিনি ছিলেন চাঁদপুরের অধিকাংশ সাংবাদিকদের শিক্ষাগুরু। প্রায় ১১টি বছর তার খুব কাছে থেকে সাংবাদিকতার কাজ করেছি। আমি তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, আমি তার মনের ভাবও বুজতে পারতাম, তবে তিনি ছিলেন চাঁদপুরে সাংবাদিক জগতের একটি নক্ষত্র। তিনি নিজে কখনও অন্যায় করতেন না, এমনকি কাউকে অন্যায় করার জন্য প্রশ্রয়ও দিতেন না, এ বৈশিষ্ট্য গুলো আমাকে অনুপ্রানিত করে তুলেছে। ২০০৯ সালে চাঁদপুর দর্পন থেকে বের হয়ে আসি, ইচ্ছা ছিলো সাংবাদিকতা আর করবো না, কিন্তু তিনি আমাকে ছাড়েননি, বলেছিলেন সাংবাদিকতা না করলে কোনো কথা নয়, তবে কেনো পদত্যাগ করবি, আমি তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চলে আসি, আমি তার পত্রিকা ছেড়েছি কিন্তু তাঁকে ছাড়িনি। ২০১০ সালে ইকবাল পাটোয়ারী “চাঁদপুর প্রতিদিন” নামে একটি দৈনিক পত্রিকা বের করবে, তিনি আমাকে ফোন করে বললো দেখা করার জন্য, আ

Powered by themekiller.com