Breaking News
Home / Breaking News / ফরিদগঞ্জে জঙ্গী সন্দেহে আটককৃতদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

ফরিদগঞ্জে জঙ্গী সন্দেহে আটককৃতদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

আবু হেনা মোস্তফা কামাল: ফরিদগঞ্জে জঙ্গী সন্দেহে কওমী মাদরাসার ৭ ছাত্র-শিক্ষককে চাঁদপুর উপকারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে ওই ৭ জনের জামিন আবেদন না মজ্ঞুর করা হয়। রোববার তাদের আদালতে হাজির করলে ৫ দিনের রিমান্ড মজ্ঞুর করেন বিজ্ঞ আদালত। ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গাজীপুর গ্রামের নির্মান শ্রমিক আবু তাহের মিজি। বাড়িতে তার জীর্ণ দুটি টিনের ঘর রয়েছে। তার মেজো ছেলে কাওসার হামিদ (১৯) স্থানীয় ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর সিনিয়র মারাসার ফাজিল শ্রেণির ছাত্র। পাশাপাশি তিনি গত প্রায় পাঁচ বছর মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার বাউশিয়া এলাকার কলিম উল্লাহ শেখ শিক্ষা কমপ্লেক্সের ‘কলিম উল্লাহ শেখ কওমী মাদরাসা’য় পড়াশোনা করেন।

কাওসার হামিদ এর বড় ভাই দর্জি শ্রমিক আহসান হাবিব (২৪) জানান, তার ছোট ভাই শুক্রবার সকালে বাড়ি আসে। রাত ৯ টায় ওই মাদরাসার শিক্ষক কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার নেয়ামত উল্লা (২৬), টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার মো: হাবিবুর রহমান (৩০) ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার মো: ফজলুল করিম (৩০) ও সহপাঠি শিক্ষার্থী কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার মাহমুদুর রহমান (২৪), নারায়ণগঞ্জ সদর থানার মো: রাশেদুল ইসলাম (২৫) ও ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার কামরুল হাসান (২৭) তাদের বাড়ি বেড়াতে আসে। রাতের খাবার শেষে কাওসার হামিদ সহপাঠি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে রাত যাপনের জন্য পার্শ্ববর্তী উত্তর কেরোয়া গ্রামে বোনের বাড়িতে যান। বোন নিঃসন্তান, ভগ্নিপতি আবু রায়হান প্রবাসে থাকেন। তাই ওই বাড়িতে নিয়মিত কেউ থাকেন না। বাড়িটির চতুর্দিকে পাকা দেয়াল দ্বারা ঘেরা। এক প্রশ্নের উত্তরে কাওসার হামিদ এর মা বলেন, ছয়জন মেহমান আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসবেন তা আগে হতে আমরা জানতাম না।
এদিকে ঘটনাস্থলের প্রতিবেশী আরিফ হোসেন জানান, শনিবার দুপুর ১২ টায় তিনি তার মাছের খামারে যাওয়ার সময় নির্জন ঘরের ভেতর থেকে লোক জনের উপস্থিতি টের পান। এতে তিনি পাশ্ববর্তী লোকজন ডেকে নেন। তারা ভেতর থেকে লোক জনের ফিসফিস আওয়াজ শুনতে পান। এতে সন্দেহ হলে তারা ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে এএসআই মঞ্জুর আলম, এএসআই রুবেল হোসেন ও এএসআই মনির হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যান।
এদিকে, পুলিশ দাবী করেছে আটককৃতরা কোনো গোপন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা নিজেদের কখনও আনসার উল্লা বাংলা টিম, কখনও আল কায়েদা (ভারতীয় উপমহাদেশ) এর বাংলাদেশ শাখার সদস্য বলে দাবী করেছেন।

এদিকে, শনিবার দুপুরে তাদের আটক করা হলেও সংবাদকর্মীদের কাছে খবর পৌঁছে রাতে। ফলে, তারা পুলিশ হেফাজতে থাকায় এ ব্যপারে আটককৃতদের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য জানা যায়নি। তারা কতো দিনের জন্য বেড়াতে এসেছিলো, সঙ্গে দু’টি ল্যাপটপ কেনো – এ সব প্রশ্নের উত্তরও জানা যায়নি।
তবে নানা জনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও সংশ্লিষ্ট মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তারা ফোনে কথা বলতে রাজি হননি। জানা গেছে, কলিম উল্লাহ শেখ শিক্ষা কমপ্লেক্সে একটি এতিমখানা, একটি বৃদ্ধাশ্রম, কলেজ, একটি কওমী মাদরাসা ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
এদিকে, আটককৃত কাওসার হামিদ এর মা দাবী করেছেন তাদের সন্তান জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নয়। বোন আসমা বেগম দাবী করেছেন, তাদের সঙ্গে শত্রুতা করে তার ভাইসহ অন্যান্যদের ফাঁসানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার আরিফ হোসেন (৩৪) দাবী করেছেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো প্রকার শত্রুতা নেই।
আটককালে তাদের কাছ থেকে ২ টি ল্যাপটপ, ২টি পেইনড্রাইভ ও ৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। আটককৃত ৭ জনের বাড়ি ৭ জেলায়। তাদের নামে রোববার সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হোসেন জানান, এ ব্যপারে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে। ঘটনার বিস্তারিত জানতে আটককৃতদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে, বিজ্ঞ আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তারা কোন উদ্দেশ্যে সেখানে জড়ো হয়েছিল তা জানা যায়নি। ফলে, ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো: জিহাদুল করিম পিপিএম বলেন, আটককৃতরা গোপনে তাদের সদস্য সংগ্রহ করছিলো বলে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি।

Powered by themekiller.com