Breaking News
Home / Breaking News / কবি সারমিন জাহান মিতুর -“প্রতারক”

কবি সারমিন জাহান মিতুর -“প্রতারক”

প্রতারক
সারমিন জাহান মিতু
২৯/৭/২০২১
———-
মেঘ এর আজ ভীষণ মন খারাপ। জীবনের প্রতি তিক্ততা ছাড়া আর কিছু নেই আজ।কখনো এমন ঘৃণা ভরা জীবন দেখতে হবে ভাবতেই গা বেয়ে ঘৃণার জল গড়িয়ে পড়ছে।হাসবে না কাঁদবে না জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ফেলবে বুঝত পারছে না। বাবা বরাবরই তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো কিন্তু মা বুঝাতেন বাবার রাগ বেশি তাই অমন। মায়ের সঙ্গেও তার তেমন মধুর সম্পর্ক কোনদিন দেখেনি মেঘ।ভাবতো বাবা-মা এর সম্পর্ক মনে হয় এমনই হয়। নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত জীবন। বাবার চাকরি সুবাদে ওরা ঢাকায় থাকে। নানা বাড়ির সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই শুনেছে মা-বাবাকে পছন্দ করে বিয়ে করছেন তাই এ পরিণতি।কিন্তু আজকে মেঘ এর সমস্ত ভুল ভেঙে গেলো হঠাৎ পরিচয় হওয়া আরশির কথা শুনে। ও যশোরই থাকে এবং ওর মামা বাড়ির খুব কাছেই। যশোর বাড়ি শুনে মেঘ এর আগ্রহটা বেড়ে যায় অজানা এক আকর্ষণে।

মেঘ এর মায়ের নাম তন্দ্রা বাবা-মা এর একমাত্র সন্তান। ক্লাস নাইনে পড়ে তখন। পাশের বাড়ির মাতুব্বর এর ছেলে দীপ্ত ওকে আগে থেকেই ভীষণ পছন্দ করতো। সাইকেল নিয়ে সারাক্ষণ তন্দ্রার পিছনে ঘুরে বেড়াত।আস্তে আস্তে তন্দ্রা এর সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা বেড়ে যায়। এভাবেই এখানে -ওখানে ঘুরতে ঘুরতে একদিন এক বন্ধুর খালি বাড়িতে নিয়ে যায়। ওদের সম্পর্ক ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। প্রথম দিকে তন্দ্রা আপত্তি করেছে বেশ কিন্তু ভালোবাসার কাছে হার মেনে যায় মন,শরীর সবকিছু। এরকম দুর্নিবার আকর্ষণে প্রায় দিন দুজনে এখানে -সেখানে দিন কাটাতে লাগলো। তখন কতো মধুর স্বপ্ন তন্দ্রাকে আচ্ছন্ন করে রাখতো।

তখন তন্দ্রার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে হঠাৎ বারবার বমি হচ্ছে ওর।বাবা-মা ভাবলেন মেয়ের টেনশনে মনে হয় এ অবস্হা।পরের দিন ও পরীক্ষা হলে পরীক্ষা দিলো কোন সমস্যা নেই। রাস্তায় ঠিক দ্বীপ্ত দাঁড়িয়ে আছে তন্দ্রা বন্ধুদের বিদায় দিয়ে ওর সঙ্গে গেলো। দড়াটনা তাজ রেস্তোরাঁয় ওরা ফালুদা আর কলিজার সিঙ্গাড়া অর্ডার দিলো।খাবার সামনে দেখে তন্দ্রার আবার বমি শুরু হয়ে গেলো।এভাবেই কয়েকটি দিন অতিবাহিত হলো এর মধ্যে তন্দ্রা খুব খুশি মনেই দ্বীপ্তকে জানালো।কিন্তু দ্বীপ্ত এটা মানতে পারছে না। তন্দ্রা ওকে বিয়ের চাপ দিতে লাগলো রাজি হলো না সে।ধীরে ধীরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলো দ্বীপ্ত।কি করবে তন্দ্রা এইটুকু একটা মেয়ে। সারাক্ষণ দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কেটে যাচ্ছে। একদিন মায়ের কাছে ধরা পড়ে গেলো তন্দ্রা। মা কি করবেন বুঝতে পারছেন। ইচ্ছে মতো তন্দ্রাকে মারপিট করলেন তিনি এবং কাঁদলেন। আর বললেন তোর বাবা জানলে তোকে মেরে ফেলে আত্মহত্যা করবেন। দিশেহারা মা সব শুনে মেয়ের লজ্জা ঢাকার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলো।কিন্তু ডাক্তার তাকে জানিয়ে দিলেন সময় পার হয়ে গেছে এখন আর কিছু করার নেই। বাবার কাছ হতে মেয়েকে আড়ালে লুকিয়ে রাখতেন তিনি।

নেমে এলো সেই অন্ধকার রাত যেদিন তন্দ্রার কোল জুড়ে ভূমিষ্ট হলো ফুটফুটে এক মেয়ে সন্তান। তন্দ্রার মুখটা দেখে বেশ মায়া হলো। মাকে বললো মা ওকে মেরোনা তুমি ওকে নিয়ে আমি অনেক দূরে চলো যাবো। কিন্তু মা শুনলো না, তন্দ্রার কথা তন্দ্রাকে বললো ঐ নর্দমায় ফেলে দিয়ে আসো এটাকে তোমার নিজের হাতে। এ কলঙ্কের হাত হতে মুক্তি দাও বাবা-মাকে।মায়ের পিরা পিরীতে বাধ্য হলো তন্দ্রা ওকে বাড়ির পিছনে বাগানে রেখে আসতে। দু একবার মেয়ের মুখের দিকে তাকালো তন্দ্রা। তারপর ধীর পায়ে বাড়ি ফিরতে যাবে তখন ওকে দেখে ফেলে পাশের বাড়ির মিনতি মাসি।এতো রাতে বাগানে কেনো তন্দ্রা জানতে চাইলেন তিনি। তন্দ্রা সামনে এগুবে বলে পা বাড়াতেই বাচ্চার চিৎকার শুনতে পেলেন ওরা।মিনতি মাসি চিৎকার করে লোক জড়ো করে ফেলেন।

সে রাতে তন্দ্রাদের বাড়িতে লোকজন এর ভিড়ে কতো নোংরা ভাষায় উপহাস করলো সবাই। একজন শুধু বলে উঠলো মেয়েটির দোষ কি।ওকে না সেই লম্পট ছেলেটাকে ধরে আনো সবাই। এর ভেতর জানা গেলো ছেলেটা মাতবরের ছেলে দ্বীপ্ত।তন্দ্রার বাবা লজ্জা আর অপমানে স্তব্ধ হয়ে গেলো।সবাই দ্বীপ্তকে ধরে এনে জোর করে তন্দ্রার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলেন। এবং লিখিত রাখলেন কোন দিন তন্দ্রাকে ডিভোর্স যাতে না দিতে পারে সে কথা। রাতে তন্দ্রার বাবা আত্মহত্যা করলো এ লজ্জা সইতে না পেরে। তন্দ্রাকে মা ওদের বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। ওরা ফুটফুটে মেঘকে নিয়ে বাড়ি ছাড়লো। কিন্তু মেঘ এর বাবা কোনদিন ওদের মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী ওদের ছেড়ে যেতেও পারেনি।

এসব কথা সব মেঘ আরশির কাছে হতে জানলো।কিন্তু মা-বাবার কাছে কোন প্রশ্ন করতে চাইনি ঘৃণায়।এখন ও কি করবে আত্মহত্যা নাকি বাড়ি ছেড়ে যাবে জানেনা।কিন্তু যে মা-বাবার কাছে ও শুধু সময়ের আনন্দ এবং অভিশাপ তাদের সঙ্গে আর নয়।সারারাত কেঁদে কেটে খুব সকালে যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে একবার মায়ের ঘরে গেলো মাকে দেখার জন্য। অসহায় মা কেমন ঘুমিয়ে আছে দেখে খুব কষ্ট হলো ওর।মায়ের নির্দোষ নির্মম জীবনের পরিস্থিতি মনে করে ব্যাগটা হাত হতে ফেলে দিয়ে কাঁদতে লাগলো। তারপর আর বাড়ি ছেড়ে যাওয়া হলো না ওর।এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে রয়ে গেলো মায়ের পাশে। প্রতারক বাবার জন্য ঘৃণা ছাড়া আর কিছু নেই যেনো আজ।

Powered by themekiller.com