Breaking News
Home / Breaking News / ক্রেতা সংকট ও নদী ভাঙ্গনে চাঁদপুরের বানিজ্যকেন্দ্র অচল

ক্রেতা সংকট ও নদী ভাঙ্গনে চাঁদপুরের বানিজ্যকেন্দ্র অচল

এম. আর হারুন ঃ কয়েকশ’ বছরের প্রাচীন জনপদ চাঁদপুর। যার প্রথম নাম ছিলো নরসিংহপুর। বিশিষ্ট চাঁদ ফকির, জমিদার চাঁদ রায় ও ধনাঢ্য বনিক চাঁদ সওদাগড়ের নামের ত্রয়ী যুগল বন্দীতে নামাঙ্কিত চাঁদপুর। এ যুগল বন্দীর নামের সর্বাশেষ দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালেই বানিজ্য বন্দর হিসাবে চাঁদপুরের গুরুত্বের ছবিটি আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসে। এ কথা সকলেই মানতে বাধ্য চাঁদপুর যতটা প্রাচীন ততোটাই প্রাচীন চাঁদপুরের বানিজ্য বন্দর। বৃটিশ শাসনামলেই প্রধানতঃ পাট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে চাঁদপুর বানিজ্য কেন্দ্র। অবকাঠামোগতভাবে পরিবহন সুবিধার জন্য গড়ে ওঠে নদী বন্দর। গোড়া পত্তন ঘটে বিভিন্ন কল কারখানার। প্রতিষ্ঠিত হয় রেলওয়ে ষ্টেশন, ষ্টীমার ও লঞ্চঘাট। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রমবিকাশ ঘটতে থাকে আড়ৎদারী ও পাইকারী ব্যবসা। গোটা বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলের নৌ পথের গড়ে ওঠে নীবির সম্পর্ক। চাঁদপুর হয়ে ওঠে বাংলাদেশের অন্যতম বানিজ্যকেন্দ্রিক নদী বন্দর। এক সময় মাড়োয়ারী, না খোদা, হিন্দু মুসলিম বনেদী ব্যাবসায়ীদের পদভারে মুখরিত ছিলো চাঁদপুর বানিজ্যকেন্দ্র। বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পন্য ক্রয় বিক্রয়ের জন্য এখানে এসে ভীড় করতো। চাঁদপুর ঘাটে বিশেষ করে প্রধান বানিজ্যকেন্দ্র পুরানবাজারের মেঘনা ডাকাতিয়ার ঘাটে সারি সারি বাধা থাকতো মাল বোজাই ঘাসী নৌকা,নাকাইল্যা নৌকা, গয়না নৌকাসহ বিভিন্ন ধরনের নৌকা। মাঝি মাল্লাদের হাকডাকে সরগরম থাকতো হাট বাজার। পাইকারী আড়ৎদারী অসংখ্য ব্যবসা ছাড়া পুরানবাজারে গড়ে ওঠে দুটি জুট বেলিং প্রেস, দুটি বৃহৎ জুটমিল, চল্লিশটি লবন মিল,দশটি ডাইল মিল, আঠারোটি তেল মিল, পাঁচটি চিড়া কল, রাব ও আলকাতরা তৈরীর কারখানা, হাতে তৈরী গুড়, বাতাসা, সাবান, জর্দ্দা, বিড়িসহ দুটি ফিশিং নেট ফ্যাক্টরী। পাঁচটি হিমাগার, দশটি বরফ কল, তেরটি ময়দা মিল, চব্বিশটি আটা কল,বারটি চাল কলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ঐতিহাসিক বানিজ্যকেন্দ্র পুরানবাজারের দুর্যোগের ঘনঘাটা শুরু হয় ১৯৬০ সালে ভয়ালগ্রাসী মেঘনার ভাঙ্গন শুরু হয়। ক্রমাগতভাবে অবনতি ঘটতে থাকে চাঁদপুরের ব্যবসা বানিজ্যের।এ ছাড়া আশির দশক থেকে দেশের সড়ক পথে পরিবহনের ব্যবস্থা ক্রমাগত উন্নয়নের ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠে ব্যবসা কেন্দ্র।নৌ পথের পরিবর্তে সহজে স্বল্প খরচ ও সময়ের সুবিধার কারনে চাঁদপুরের পরিবর্তে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা সরাসরি ঢাকা চট্রগ্রাম ও নারায়নগন্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পন্য আমদানী করে গড়ে ওঠে নতুন নতুন মোকাম। মেঘনা ডাকাতিয়ার মোহনাস্থল ঘিরে চাঁদপুর তথা দেশের প্রধান মাছ ঘাটটি শেষ বারের মতো ২০০১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তলিয়ে ২শ’ বছরের প্রাচীন রেলওয়ে ষ্টেশন, মাছ ঘাট। মদ্দত কথায় চাঁদপুরের সকল ধরনের ব্যাবসায়ীরা চলছে প্রচন্ড মন্দাভাবে। বিশেষ করে ক্রেতা সংকটের কারনেই চাঁদপুরের বানিজ্য অচলাবস্থা বিরাজমান।

Powered by themekiller.com