স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে কর্মস্থল ফাঁকি দেওয়া কোটিপতি এক স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ। এজন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা সিভিল সার্জন।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সময় সংবাদকে এ তথ্য জানান চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ।
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের লবাইকান্দি গ্রামের মৃত গোলাম মাওলা প্রকাশ মালুম মোল্লার ছেলে মো. শাহজালাল। ১২ বছর আগে স্বাস্থ্য সহকারী পদে যোগ দেন। তার বর্তমান কর্মস্থল পাশের বড় মরাদোন কমিউনিটি ক্লিনিকে। পেশায় স্বাস্থ্য সহকারী হলেও সহকর্মীদের অনেকেই তাকে চেনেন না। কারণ কর্মস্থলে গড় হাজির থাকেন। আর এসময় তার মূল কাজ হচ্ছে ঠিকাদারী।
স্ত্রী গৃহবধূ সুমি আক্তারের নামে রিজভিআপ নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স আছে। তবে কৌশল করে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ঠিকাদারদের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাজ করাচ্ছেন তিনি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তর এসব সরকারি দপ্তরের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার মো. শাহজালাল। একযুগে ৩০ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বাগিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী মো. শাহজালাল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে এলাকায় নানান অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী পদে এই চাকরির একদশক আগে এলাকার সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী পদে দায়িত্ব পালন করেন। তখন কাউকেই পাত্তা দিতেন না তিনি। এই নিয়ে ওই সময় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী সংবাদ প্রকাশ করলে তাদেরকে চরমভাবে হয়রানি করেন মো. শাহজালাল।
এদিকে, তার অনিয়ম নিয়ে লেখালেখি করায় স্হানীয় সাংবাদিকের হুমকি ও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান মো. শাহজালাল।
তার কর্মস্থল বড় মরাদোন কমিউনিটি ক্লিনিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে এই পর্যন্ত হাজিরা খাতায় কোনো স্বাক্ষর নেই তার। নাম প্রকাশে গোপনীয়তা শর্তে তার এক সহকর্মী জানান, চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই বেশ বেপরোয়া মো. শাহজালাল। পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে তার ভয়ে মুখ বুজে থাকেন স্থানীয় ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা। তাছাড়া তদবিরবাজ হিসেবেও বেশ পারঙ্গম মো. শাহজালাল।
মতলব উত্তর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মো. শাহজালালের তদারকিতে দুটি কাজ চলমান রয়েছে। একটি হলো কালিপুর বাজারে অন্যটি দাসের বাজারে। এই দুটি কাজের প্রাক্কলিত মূল্য তিন কোটি টাকা।
এই বিষয় মো. শাহজালালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিন কোটি টাকার কাজের কথা স্বীকার করলেও কর্মস্থলে তার অনুপস্থিত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তা এড়িয়ে যান তিনি।
সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, মো. শাহজালালের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই বিষয় মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।