Breaking News
Home / Breaking News / চূড়ান্ত শান্তি ও নিরাপত্তা আসবে কীভাবে?

চূড়ান্ত শান্তি ও নিরাপত্তা আসবে কীভাবে?

মানুষ যে সমাজ বা রাষ্ট্রে বসবাস করে সে সমাজ বা রাষ্ট্র থেকে, সে মূলত দুইটি জিনিসের প্রত্যাশা করে। একটি হচ্ছে শান্তি ও অপরটি নিরাপত্তা। যে সমাজে সে বসবাস করছে সে সমাজে যদি এই দুইটি বিষয় না থাকে তখন এই দুইটি বিষয়কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সে বিভিন্ন উপায়ে প্রচেষ্টা করতে থাকে। আমাদের বর্তমান সিস্টেম বা জীবনব্যবস্থাগুলো তৈরির পিছনে মূল কারণও এই দুটিই। এই দুইটির চাহিদা যদি না থাকতো তবে কোন ব্যবস্থা তৈরির কোন প্রয়োজনই পড়ত না।
বতর্মান পৃথিবীর দিকে যদি আমরা দৃষ্টিপাত করি তবে দেখতে পাবো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন মানুষ আজ বিভিন্ন ব্যবস্থার চর্চা করছে। কেউ গণতন্ত্রের চর্চা করছে, কেউ সমাজতন্ত্রের চর্চা করছে, কেউবা একনায়কতন্ত্র বা রাজতন্ত্রের চর্চা করছে। এ সকল তন্ত্রের (Ism) মাধ্যমে তারা নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করছে। কিন্তু কোথাও চূড়ান্ত শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ হচ্ছে না। যেদিকেই তাকানো হচ্ছে অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য দিনে দিনে এ তন্ত্রগুলোতে নতুন নতুন সংযোজন-বিয়োজন ঘটানো হচ্ছে, আইনকে কঠোর থেকে কঠোরতর করা হচ্ছে, কিন্তু কাঙ্খিত লক্ষ্য কিছুতেই অর্জন হচ্ছে না অর্থাৎ পূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা আসছে না। আমি অকপটে স্বীকার করছি যে প্রতিটি তন্ত্রই খাতা-কলমে বেশ সুন্দর ও যুক্তিযুক্ত কিন্তু যখনই এদের প্রয়োগ করা হচ্ছে তখনই শুরু হচ্ছে বিপত্তি। তাহলে এখন করণীয় কী? চূড়ান্ত শান্তি ও নিরাপত্তা পাবার জন্য আমাদের এখন কী করতে হবে?
ধরুন আপনি একটি নতুন যন্ত্র তৈরি করলেন। এখন সে যন্ত্রকে কিভাবে চালালে তা সঠিকভাবে চলবে ও বহুদিন টেকসই থাকবে সে ব্যাপারে আপনার চেয়ে ভালো কী আর কারো পক্ষে জানা সম্ভব? মোটেও না। সেই যন্ত্রের ব্যাপারে আপনিই সবচেয়ে ভালো জানবেন। এবার আপনি সেই যন্ত্র যাতে সবাই সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন তার জন্য একটি ম্যানুয়েল তৈরি করলেন। এবার আপনি ব্যতিত কেউ সেই বস্তুকে পরিচালনা করতে চাইলে তাকে সেই ম্যানুয়েলের সাহায্য নিয়ে কাজটি করতে হবে।
একই কথা বর্তমানের মানবজাতির জন্যও প্রযোজ্য। মহান আল্লাহ সৃষ্টিসমূহের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি মানুষ। আল্লাহ মানুষকে সুন্দরতম অবয়ব দান করেছেন। সেই সুন্দরতম সৃষ্টি কিভাবে চললে শান্তিতে ও নিরাপদে চলাচল করতে পারবে সে উপায় কী আল্লাহ বলে দিবেন না? অবশ্যই দিবেন এবং তিনি দিয়েছেনও। আল্লাহ যুগে যুগে প্রতিটি জনপদের জন্য তাদের নিজস্ব ভাষায় নবী-রসুল প্রেরণ করেছেন এবং সে সকল নবী রসুলের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর এই সৃষ্টিকে পরিচালনা করার জন্য ম্যানুয়েল হিসেবে আসমানী কিতাব পাঠিয়েছেন। যে সকল নবীর উপর আসমানী কিতাব নাযিল হয় নি তারা পূর্ববর্তী কিতাব অনুযায়ী মানুষকে পরিচালিত করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সবশেষে আল্লাহ সমগ্র মানবজাতির জন্য একজন রসুল প্রেরণ করলেন। পূর্ববর্তী সকল দীনকে বাদ দিয়ে আল্লাহ সর্বশেষ রসুলের মাধ্যমে দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলেন ও পৃথিবীর সমস্ত স্থানের মানুষ যাতে এ শেষ জীবনব্যবস্থাকে সহজেই গ্রহণ করতে পারেন সে জন্য একটি শেষ আসমানী কিতাব প্রেরণ করলেন। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল মুহাম্মদ (স.) সেই জীবনব্যবস্থাকে আরব উপদ্বীপে প্রতিষ্ঠা করলেন ও পরবর্তীতে তাঁর নিজ হাতে তৈরি করা উম্মতে মোহাম্মদী সে দীন বা জীবনব্যবস্থাকে অর্ধ দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করলেন। আল্লাহ প্রেরিত এই শেষ দীন বা জীবনব্যবস্থা অর্ধ দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কীরূপ শান্তি ও নিরাপত্তা নেমে এসেছিল তা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। মানুষ রাতে দরজা খুলে ঘুমাতো, স্বর্ণের দোকান খোলা রেখে যেখানে খুশি চলে যেত কিন্তু কোন চুরির ভয় ছিল না। বহুদিন আদালতে কোন মামলা আসত না, যদিও দুই একটা আসত সেগুলোরও খুব জলদিই নিষ্পত্তি হয়ে যেত। মানুষ যাকাত দেয়ার মত লোক খুঁজে পেত না। দরিদ্রতা যেন হারিয়ে গিয়েছিল। এক কথায় শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি, প্রগতি ইত্যদিতে গোটা অর্ধ-বিশ্ব হয়ে উঠেছিল সকল জাতির সামনে বিস্ময়ের পাত্র এবং বাকি অর্ধেক বিশ্বের কাছে এ জাতির লোকেরা শিক্ষকের আসনে আসীন হয়েছিল। কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে আকিদা বিচ্যুতির ফলে এ জাতির উপর আল্লাহর লানত নেমে আসে ও জাতি তার সকল সুখ-সমৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হয়।
অতএব আমরা যদি আজ শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করতে চাই তবে আমাদের আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী নিজেদের পরিচালিত করতে হবে। যে সকল জীবনব্যবস্থাকে (System) আমরা গ্রহণ করে আমাদের জীবন পরিচালনা করছি সে সবগুলোই মানবসৃষ্ট। মানুষ নিজেই নিজের জন্য একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা কখনই সৃষ্টি করতে পারে না কারণ আল্লাহ তাকে সে ক্ষমতা দেন নি। এর কারণেই তিনি জীবনব্যবস্থা প্রেরণ করেছেন। তাই আমরা যদি বর্তমানে সকল তন্ত্র (Ism) ভুলে আল্লাহর দেয়া শেষ পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থাকে গ্রহণ করি তবে আমরা আবার পুনরায় শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করতে পারব। আমরা পুনরায় হবো সমৃদ্ধশীল একটি জাতি। কাঙ্খিত যে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আমরা এত কষ্ট করছি তা সহজেই আমরা লাভ করতে পারব। আমরা পুনরায় আমাদের হারানো সিংহাসনে আরোহন করে গোটা পৃথিবীর আদর্শে পরিণত হতে পারব।

Powered by themekiller.com