Breaking News
Home / Breaking News / ‘গ্লোবাল রিডিং’ হল, আবার শেখ হাসিনার সরকার: পররাষ্ট্র সচিব

‘গ্লোবাল রিডিং’ হল, আবার শেখ হাসিনার সরকার: পররাষ্ট্র সচিব

অনলাইন ডেস্ক :পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন- এমন ধারণাই বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা পোষণ করছেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিদিনই বিভিন্ন দেশের সরকার বা সংস্থার প্রতিনিধিদের বৈঠক হচ্ছে। বুধবারও এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থার কর্তব্যক্তিরা তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

এসব বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করতে এসে পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, “গ্লোবাল রিডিং হল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পরে তৃতীয়বারের মত সরকার গঠন করবেন। এ জিনিসটা আমরা আলোচনার মধ্যে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি।”

বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় সংসদের অর্ধেক আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় বারের মত সরকার গঠন করে।

সে সময় ‍যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ওই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও পরের বছরগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটে ভূমিকার জন্য শেখ হাসিনার সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে। চলতি বছরের শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ।

বুধবার দিনের শুরুতেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক উচ্চ পর্যায়ের সংলাপে অংশ নেন শেখ হাসিনা।
পরে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর, ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট কের্স্টি কালিজুলেইদ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি মঘেরনিনি এবং মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিশ্চিয়ানা স্ক্র্যানার বারগেনার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এসব বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেনIপরে তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

শহীদুল হক বলেন, “বেশ কয়েকজন এজেন্সি প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সামনের বছর উনার (শেখ হাসিনা) সাথে তাদের দেখা হবে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে।”

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার কথা চিন্তা করে… উনার যে ভূমিকা রোহিঙ্গা সঙ্কটের ক্ষেত্রে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে, ইন্টিগ্রেশনের ক্ষেত্রে; এই কথা চিন্তা করে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, উনার একটা ধারাবাহিকতা থাকবে এবং তারা আশা করছেন, উনি আবার বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকবেনI

“উনারা প্রধানমন্ত্রীকে আগাম অভিনন্দন জানিয়েছেন। বলেছেন, আবার উনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ফিরে পাবেন বলেই তারা আশা করছেন।”

শহীদুল বলেন, “তারা আশা প্রকাশ করেছেন, একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে ধারাবাহিকতা আছে, এটা অব্যাহত থাকবে।”
দ্বিপক্ষীয় এসব আলোচনায় নির্বাচন ছাড়াও রোহিঙ্গা পরিস্থিত এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান পররাষ্ট্র সচিবI

তিনি বলেন, “বেশ কয়েকটা জিনিস স্পষ্ট হয়েছেIরোহিঙ্গা প্রশ্নে উনার যে উদার নীতি, মানবতা; এটা সবাই খুব প্রশংসা করেছেন। একইসাথে উনি যে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন, সেটারও প্রশংসা করেছেন।”

মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে গত বছরের ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বাংলাদেশ বহন করে চলেছে কয়েক দশক ধরে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গতবছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করলেও এখনও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “যেখানে পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ধরনের বাস্তুচ্যুত লোকজনকে গ্রহণ করা নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে…. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেছেন, এরা যেন দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন একটা চাপ সৃষ্টি করে।”

শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান যে মিয়ানমারের ভেতরেই রয়েছে, সে কথাও বৈঠকে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী।

“সবাই একমত হয়েছে, এটার সমাধান মিয়ানমারে খুঁজতে হবে। এটার সমাধান বাংলাদেশে নেই। সেজন্য তাদেরকে (রোহিঙ্গা) তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে এবং তাদেরকে তাদের দেশে ফিরে গিয়েই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবেI”

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আরও সহায়তা চেয়েছেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।

তিনি বলেন, “যতদিন না তারা ফিরে যাবে… স্বল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশ তাদের দেখাশোনা করবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায়I”

রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রসঙ্গও এসব বৈঠকে আসে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “যেহেতু, কক্সবাজার খুবই ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যাও বাড়ছে, ফলে ভাসানচরে কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা ভাবনার কথা উনি (প্রধানমন্ত্রী) তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার এই উদ্যোগে যেন সহায়তা করেI”

বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে যেসব আলোচনা হয়েছে, তার সারমর্ম তুলে ধরে শহীদুল হক বলেন, “বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, সেই বিষয়টির খুব প্রশংসা করেছেন তারা। উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে একটা অভূতপূর্ব উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, এটা সবাই বলেছ। তারা সবাই জানতে চায়- এটা কী করে সম্ভব হল।”

Powered by themekiller.com