জেলা প্রতিনিধি :
মানুষকে কাছে পেলে আরো নিঃসঙ্গ করে দিতে চায়।
সন্ধ্যায় নেভালে (নাভাল) যেয়ে বসলাম। অন্ধকার হয়ে আসছে।
দূরে নোঙর ফেলে দাঁড়িয়ে আছে বড় বড় জাহাজ। আমি পাশের দোকানে ৫০ টাকা প্লেট গরম পিয়াজু আর কাচা পেয়াজ নিয়ে সমুদ্র দেখছি।
এই দৃশ্যটা আমার মন ভালো করে দিয়েছিলো! এর অনেকদিন পর মন খারাপের এক বিকেলে ব্যাগ ট্যাগ গুছিয়ে আবার নেভালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলাম।
আমি জানতাম, সমুদ্র পারে বসে গরম পিয়াজু খাওয়ার আনন্দ প্রেমিকার চলে যাওয়ার কষ্টকে ভুলিয়ে দিতে পারে।
মাঝে মাঝে দুঃখ কষ্টের মাঝখানে শুয়ে নিজে একটু জায়গা বেশি পেলেও বলতে হয় “আহা, জীবন কি সুন্দর!”
একদিন এক বিকেলে কাজ শেষে রেলস্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনে করে চলে গেলাম লাকসাম রেলস্টেশনে চা খেতে। যেয়ে পৌছালাম সন্ধ্যা ৬.৩০ এর দিকে।
রেল স্টেশনে একটা চায়ের দোকান আছে। দোকানদারের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। লোকটা একসময় জাপান না গিয়ে সেই টাকা দিয়ে ৩ টা গরু কিনেছিলো।
সেই গরু থেকে এখন প্রতিদিন সংসার চালিয়েও সে ব্যংকে ২০০০ টাকা রাখতে পারে।
এই গল্প আমি তার মুখে শুনেছিলাম তারও ২ বছর আগে।
কথার এক ফাঁকে মামা বললো-
এবার কি কাজে এসেছেন?
আমি বললাম-
আপনার দোকানের চা খেতে! একটু পর চলে যাবো!
সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো! হয়তো ভাবতেছে “মানুষ এতটা পাগলও হয়!”
রাতে মামার সাথে ঘন্টাখানেক কথা বলে ফিরতি ট্রেনে হাজিগঞ্জ এসে নামলাম সকালে।
সেখান থেকে আবার বন্ধুবান্ধব। জীবন মাঝে মাঝে হুটহাট সুন্দর হয়ে যায়।
আমার জীবনে আনন্দের কোন শেষ নাই।
প্রতি রাতে কাজ শেষে ঘরে ফেরার পর জীবনটাকে সুন্দর লাগে।
জীবনটাকে সুন্দর লাগে, কবিতার বইয়ে! উপন্যাসের পাতায়!মন খারাপের গানে! পুরাতন মানুষের টানে!
আমার জীবনে আনন্দ না থাকলেও প্রচুর আনন্দ থাকে।
আনন্দ না থাকলে, আনন্দ খুঁজি! আনন্দ বানাই। আনন্দ সৃষ্টি করি।
জীবনের কোন খারাপ সময়েই আমার ভয় লাগেনা। কারন আমি জানি, এই সিচুয়েশনটা ক’দিন পর আর থাকবেনা।
খারাপ সময় একদিন শেষ হবেই। হতে বাধ্য।
সময় কখনো বেঈমানি করেনা।
আমি সবচেয়ে বেশি অসুখি মানুষদের অসুখি হওয়ার কারন হিসেবে দেখেছি “একজন মানুষের চলে যাওয়া!”
জীবন এত তুচ্ছ?
একটা নির্দিষ্ট মানুষের শূন্যতায় জীবন থেমে থাকবে?
কারো চলে যাওয়া কষ্টের, তবে কারো চলে যাওয়াই নিজের আনন্দকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক না।
জীবনে মানুষের আসা যাওয়া চলমান ট্রেনের মতো। প্ল্যাটফর্মে বেশিক্ষন থাকেনা।
এসে থামে কিছুক্ষন, তারপর আবার চলতে শুরু করে।
আমার জীবনে আনন্দ নেই মানে, আনন্দ নেই; এমনটা মিথ্যা।
আমার জীবনে আনন্দ নেই মানে, আমি আনন্দ খুঁজতে পারিনা।
এটা আমার ব্যর্থতা।
জীবনে আনন্দিত হওয়ার মতো কত হাজার হাজার ক্ষুদ্র জিনিস আছে, সেসব খুঁজে বের করতে হয়।
আনন্দ আমার নানা বাড়ির মোয়া না যে নাতির হাতে ধরিয়ে দিবে!
এটা সৃষ্টি করতে হয়! আবিস্কার করতে হয়!
আমার জীবনে প্রচুর আনন্দ আছে।
আনন্দ আছে অর্ধেক ডিমে! হেটে চলা রাস্তায়! মায়ের মুখে! প্রেমিকার যত্নে! ঘরে ফেরার গাড়িতে!
রিক্সাওয়ালার হাসিতে! টং দোকানে! টংয়ের চায়ে!
আমার দুঃখ কষ্টের যেমন শেষ নেই,আমার আনন্দেরও কোন শেষ নেই।
আমি আনন্দটাকে হিসেব করে রাখি।
দুঃখ কষ্ট তো প্রথম প্রেমিকার মতো! সুসময়ে এসে অসময়ে চলে যায়!
তুমুল আনন্দে যে বাঁচতে পারেনা, তুমুল আনন্দ যে খুঁজতে পারেনা, তার জন্ম নেওয়াটা কেবল শুক্রানুর অপচয়!
আমার না বলা আমি (পর্ব ২)
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮