Breaking News
Home / Breaking News / আমার না বলা আমি!

আমার না বলা আমি!

আমার না বলা আমি!
_________________________ খান জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ

একটা বোরিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি! বেঁচে থাকাটাকে পানসে লাগে! স্বাদ নেই, ঘ্রাণ নেই! একটা নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে একঘেয়ামি চলে এসেছে!
আমার জীবনে এরকম একঘেয়ামি আসলেও আমি এই একঘেয়ামিকে কাটিয়ে ফেলতে পারি!

বেঁচে থাকাটা আসলে একটা দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাস। অভ্যাস থেকে বের হওয়া সবচেয়ে কঠিন একটা কাজ। রোজ রোজ চিন্তা করি, কাল সকাল থেকে আর সিগারেট খাবোনা।
অথচ, ঘুম থেকে উঠেই বালিশের নিচ থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা খুঁজে বের করে আগুন জ্বালিয়ে টানতে শুরু করি।
সিগারেট শেষে মনে পরে, আজ তো সিগারেট খাওয়ার কথা ছিল না।
আচ্ছা, খেয়েই যখন ফেলছি, তাহলে কাল থেকে আর খাবো না।
এই আগামীকালটা আর আমাদের জীবনে আসেনা। এই ধরো, কাল থেকে পড়তে বসবো এরকম চিন্তাটা বছরের পর বছর করেও আগামিকালটাকে আর জীবনে আনতে পারিনি।
বেঁচে থাকার অভ্যাসটা এরকমই। মানুষ মরতে চায়না। এমনকি, ১০ বছর বিছানায় অসুস্থ হয়ে শুয়ে থাকলেও মরতে চায়না।
মৃত্যুকে ভয় পেয়ে যে মরতে চায়না, তা বোধয় না। মানুষ আসলে তার বেঁচে থাকার অভ্যাস থেকে বের হতে চায়না।
মৃত্যুর পর কাউকে জান্নাতে পাঠানো হবে শুনলেও মানুষ আর ক’টা দিন বাঁচার আকুলতা বুকে পুষে রাখে।

বেঁচে থাকাটা যেহেতু একটা অভ্যাস এবং অভ্যাসবসত কারনেই যেহেতু এই অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে পারিনা, তাই এই বেঁচে থাকাকালিন সময়টাকে উপভোগ করার চেষ্টা করি।

”জীবনে আনন্দ নেই” এই লাইনটার চেয়ে আমি বেশিবার বলি, আমার জীবনে প্রচুর আনন্দ আছে। আনন্দ যতটুকুই থাক, মাথায় কখনো সেট করা যাবেনা আমি আনন্দে নেই।
মানুষ যখন তার মাথায় নিরানন্দ ব্যপারটাকে প্রোগ্রামিং করে ফেলে, তখন সে ডিপ্রেশনে ভুগে, অনিদ্রায় আক্রান্ত হয়।

আমার রাতে ঘুম পায় ৩ টার দিকে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয় ৯ টায়, ১০ টায় অফিস। (নিজের অফিস বলে হাল্কা আগে পরে হয় যদিও)

ঘুমানোর সময় হলে, আমি ভাবি রাত জেগে থাকার আনন্দটা ঘুমালেই নষ্ট হয়ে যাবে।
সকালে অফিসে মেজাজ খিটখিটে না হয়ে থাকলে, আমি সারা রাত জেগে থাকতাম।
সিনেমা দেখতাম, গান শুনতাম, গল্প উপন্যাসের বই পড়তাম।
রাত ৩ টায় ঘুমানোটাও অনেকের কাছে ইনসোমেনিয়া; আমার কাছে এটা নিজেকে সময় দেওয়া।
সমস্যাটাকে সমস্যা ভাবলেই সমস্যা। তবুও, কিছু ইনসোমেনিয়াক রোগি তো আছেই।
সেটা রোগ!
রোগ আর অভ্যাসেরও একটা পার্থক্য আছে। তবুও, কথিত ইনসোমেনিয়া আজকাল একটা ফ্যাশন।
আমার ঘুমাতে লেট হয় বলার চেয়ে আমার একটু ইনসোমেনিয়ার প্রবলেম আছে, এই কথাটাতে একটা আভিজাত্য থাকে।
রাত জেগে থাকাকে ইনসোমেনিয়া বললে, নিজের স্ট্যাটাসটাই চেঞ্জ হয়ে যায়।
আমাকে যদি রাত ২ টা বাজে কেউ নক দিয়ে বলে, ঘুমান নাই?
আমি বলি না, জেগে আছি এখনো। একটু পর ঘুমাবো। আমি কখনো বলিনা, আমার রাতে ঘুম হয়না।
ঘুম আমার ৩ টার আগে এমনিতেও হয়না। তবে, এটাকে আমি একটা প্লাস পয়েন্ট হিসেবে নেই। রাত জাগতে পারি বলেই আমি নিজেকে উপলব্ধি করার সময় পাই।
এই রাত জাগাটাকে আমি যদি অসুখ হিসেবে ধরে নিতাম, তাহলেই আমার জীবনটা, বেঁচে থাকাটা একঘেয়ামি হয়ে যেত।

আমার যে কখনো বোরিং লাগেনা, তা না।
মাঝে মাঝে লাগে।
বাসায় বসে থাকতে ইচ্ছে না হলে, টং দোকানে যেয়ে বসি।
এক কাপ রং চা খাওয়ার পর আরেক কাপ রং চা নেই। টং দোকানে বসলেই আমার বিরক্ত লাগে। ওখানে সব ধরনের লোক থাকে।
রাজনৈতিক নেতা, প্লেনের ড্রাইভার, ইনফরমেশন ইনটেলিজেন্স, ডাক্তার, গোয়েন্দা, সব লোক আছে।
এখানে বসলে অনেক গোপন গোপন তথ্য পাওয়া যায়। সাকিব আল হাসান গত ম্যাচে কি কারনে আউট হয়েছিলো, সেটা তারা চায়ের দোকানে বসে বলে দিতে পারে।
আমার বিরক্তির সময়টায় তারা আমাকে আনন্দ দেয়। একটা বিরক্তিকে কাটানোর জন্য আমি আরেকটা বিরক্তিতে মাথা রাখি।
মাইনাসে মাইনাসে প্লাস হওয়ার মতো অবস্থা!

আমার যখন খুব একঘেয়ামি লাগে! জীবনটাকে যান্ত্রিক মনে হয়, আমি তখন কন্টাক্ট লিস্টে ধুলো জমে থাকা একটা নাম্বার খুঁজে বের করি।
যেই নাম্বারে কয়েক বছর কথা হয়না। নাহ, এটা কোন প্রতারক প্রেমিকার নাম্বার না।
হয়তো অল্প পরিচিত কারো সাথে কথা বলি। এই যেমন দু বছর আগে কারো সাথে লঞ্চে পরিচয় হওয়ার পর নাম্বার নিয়েছিলাম, এমন কেউ।
ফোন দিয়ে নিজের পরিচয় বলার পরও যখন চিনতে পারছেনা, তখন তাকে গল্প বলতে বলতে পুরাতন দিনের পুরাতন সময়ের কথা মনে করিয়ে দিই।
এটাতে একটা আনন্দ আছে।
এই আনন্দটা কাছের মানুষের সাথে কথা বলে পাওয়া যায়না।

আমার জীবনে আনন্দ নেই বলার মতো ১০০ কারন থাকতেই পারে, তবে আমি তার এগেইনেস্টে ১০১টা কারন দাঁড় করাই আনন্দিত হওয়ার জন্য।
জীবনে আনন্দ নেই, এটা মিথ্যে। জীবনে প্রচুর আনন্দ আছে।

মন খারাপের দিনে, একজন বয়স্ক রিক্সাওয়ালা খুঁজে বের করে তার রিক্সায় করে ঘুরতে ঘুরতে গন্তব্যে পৌছানোর পর ঠিক করে যাওয়া ৩০ টাকা ভাড়ার পরিবর্তে ৪০ টাকা দেওয়ার পর যে হাসিটা দেখা যায়, সেই হাসিটার আনন্দ নিজের ভেতরও ছড়িয়ে পরে।
আনন্দ অনেকটা সংক্রামক! আমার কারনে কেউ আনন্দিত হলে, আমি নিজে তারচেয়ে বেশি আনন্দিত হই।

একবার এক রিক্সাওয়ালাকে নিয়ে ১ ঘন্টা ঘুরার পর বাসার সামনে যেয়ে বিরিয়ানির দোকানে ঢুকে তার সাথে বসে বিরিয়ানি খেয়েছিলাম।
আমি এক প্লেট খাওয়ার পর তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আরেক প্লেট খান, মামা?
সে বললো- না মামা, লাগবো না।
তার না এর ভেতর আত্মসম্মানের একটা স্পর্শ আছে। আমি তাকে আরেক প্লেট বিরিয়ানি খাইয়ে দোকানের বিল দিয়ে বের হওয়ার সময় ১২০ টাকার ভাড়ার জায়গায় ১১৫ টাকা হাতে দিয়ে বললাম- ৫ টাকা কম দেই মামা?
আর ভাংতি নাই।
বয়স্ক রিক্সাওয়ালা মাথায় হাত রেখে বললো- জীবনে অনেক বড় হইবেন মামা।
এই তৃপ্তির মুখখানাই আমার আনন্দ।

মন খারাপ হওয়াটা অস্বাভাবিক না। মন খারাপ করে নিজের জীবনটাকে বিরক্তিকর করে ফেলাটাই অস্বাভাবিক!
মন খারাপ হবে, মন ভালো করানোর উপায়টাও নিজের জানা থাকতে হবে।
আমার প্রেমিকার যেদিন বিয়ে হয়, আমি সেদিন রাতে চিটাগাং চলে গিয়েছিলাম।
যেয়ে উঠেছি, হোটেল চকবাজারে। তেমন কিছুই চিনি না।
যে শহরে প্রেমিকার বিয়ে হচ্ছে, সেই শহরে বসে মন খারাপ কমানো যাবেনা।
সারাদিন হোটেলে থাকার পর সন্ধ্যায় পতেঙ্গাতে গেলাম। সমুদ্রের সামনে যেয়ে মন খারাপ হয়ে গেলো। সমুদ্রের সাথে নিঃস।

পর্ব -১(ধারাবাহিক)

Powered by themekiller.com