Breaking News

অনলাইন ডেস্ক :সদ্য পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এনিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাস হওয়ার পর দিন বৃহস্পতিবার সংসদে একথা বলেন তিনি।

নতুন আইনটি বাক স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার পরিপন্থি বলে ইতোমধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। সাংবাদিকদের অন্য সংগঠনগুলোও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জানি না আমাদের সাংবাদিকেরা কেন এত বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠছে? তারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে কেন? কী কারণে? এর কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না।”

নতুন আইনের ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদ উদ্বেগ জানিয়েছে। এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের জন্য বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তারে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়া নিয়েও উদ্বিগ্ন সংবাদকর্মীরা।

আইনের ৩২ ধারায় বলা আছে, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনো ধরনের তথ্য উপাত্ত, যে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা উপনেবেশিক আমলের ‘অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট’র আওতাভুক্ত অপরাধ হবে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
এই ধারার ফলে প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হবে বলে মনে করছেন সাংবাদিকরা। সংসদীয় কমিটিতেও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন সাংবাদিকরা।

সম্পাদকদের প্রতিক্রিয়ার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা কেবল তাদের কণ্ঠরোধ হল কি না, সেটাই দেখেন। তাদের কণ্ঠ তো রোধ হয়নি। কণ্ঠ আছে বলেই তারা মতামত দিতে পারছেন। রোধ করলে তো মতামত দেওয়ার মতো ক্ষমতাও থাকত না। কণ্ঠটা রোধ কোথায়?”

সামরিক শাসনামলে এবং সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “এদেশে মার্শাল ল ছিল, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী ছিল। যারা তাদের পদলেহন করেছে, তোষামোদী করেছে, তাদের অসুবিধা হয়নি। কিন্তু যারা তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, তাদের অসুবিধা হয়েছে।”

সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা শুধু তাদের সাংবাদিকতার বিষয়টি দেখল। সাংবাদিকতা হবে গঠনমূলক। সাংবাদিকতা সমাজের জন্য, দেশের জন্য, মানুষের জন্য থাকবে দায়িত্বশীল। নিশ্চয়ই সাংবাদিকতা সংঘাত বাড়ানোর জন্য হবে না। মানুষকে বিভ্রান্ত করবে না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে উস্কে দেবে না।”

নতুন আইনে কোনো ব্যক্তি আইনগত কর্তৃত্ব ছাড়া অন্য কারও ছবি, ঠিকানার মতো পরিচিতিমূলক তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল হবে।

আইনটি পাসের সময় তার বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেছিলেন, “এটা ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করবে।”

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারীও বলেছিলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মতামত ও চিন্তার স্বাধীনতার যে কথা বলা হয়েছে, এই আইন হবে তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আইনটি করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল সবাই ভোগ করুক, কুফল থেকে দূরে থাকুক। সেই লক্ষ্য নিয়ে এই আইন পাস হয়েছে। এখানে শুধু গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখলেই হবে না।

“আমরা আইনটি করেছি দেশ ও জাতির কল্যাণে। মানুষকে নিরাপত্তা আমাকে দিতে হবে। সমাজকে রক্ষা করতে হবে। সংসারকে বাঁচাতে হবে। মানুষের চরিত্র বাঁচাতে হবে। সেই বিবেচনা করে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস করেছি। এখানে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।”

‘সমাজ ও দেশের স্বার্থে’ এই আইনটির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্মার্ট ডিভাইসে যেমন বিশ্বটা হাতের মুঠোয়, তেমনি এর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের অসামাজিক বিষয়গুলোও চলে আসে। এখানে নানা ধরনের গেমস আছে। অনেক সময় ছোট ছেলে-মেয়েরা বা যুবক শ্রেণি এমন বিষয় দেখে, যা সমাজে অশুভ বার্তা বয়ে আনে। সেটা অশ্লীল বা একেবারেই অসামাজিক, কুরুচিপূর্ণ। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী এ ধরনের নানা বিষয় চলে আসে।

“এখানে এমনভাবে অপপ্রচার হয়, যাতে পারিবারিক কোন্দলও সৃষ্টি হয়। নানা রকমের অঘটনও ঘটে। শিশু থেকে যুবক পর্যন্ত এডিকটেড হয়ে পড়ে। মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলে বিপথে চলে যায়, আত্মহত্যা করে, অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা সমাজ ও সংসারের জন্য বিরাট বোঝা হয়ে যায়।”

সংসদের এবারের ১০ দিনের অধিবেশনে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল’ ছাড়াও ‘সড়ক পরিবহন বিল’ এবং ‘কওমি মাদরাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) এর সমমান প্রদান বিল’ সহ ১৮টি বিল পাস হয়েছে।

error: Content is protected !!

Powered by themekiller.com