শাহরাস্তি প্রতিনিধি: চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় দুই সন্তানের জননীকে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। শাহরাস্তি উপজেলাধীন শাহরাস্তি পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের ভিংরা পাটওয়ারি বাড়িতে এঘটনা ঘটে।
জানাযায়, শাহরাস্তি পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাছিমা আক্তার(৩৫) পিতা – আবু তাহের পাটওয়ারির মেয়েকে বিয়েদেন পাশের বাড়ির ছেলে মৃত হাসান আলীর নিকট। বিয়ের পর তাদের ঘর-সংসার ভালোই চলছিলো। এরই মাঝে তাদের কোল জুড়ে আসে দুইটি সন্তান। কিন্ত বিধিরবাম বিয়ের ৭ বছরের মাথায় হঠাৎ স্বামীর মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েন নাছিমা আক্তার।
সংসারের আয়-রোজকার করার একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটির মৃত্যুতে দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন নাছিমা। তাই নিজে বাঁচার ও সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে গৃহকর্মীর কাজ নেন স্বামীর বাড়িতেই (পাশের ঘরে) নিকট আত্মীয় আবুল বাসার পাটওয়ারির ঘরে। গৃহকর্মীর কাজে যোগ দেয়ার পর থেকে স্বামী ও পিতৃহীন অসহায় নাছিমাকে বিভিন্ন সময় কু-প্রস্তাব দিতে থাকে গৃহকর্তা আবুল খায়ের পাটওয়ারি(বাসার)’র লম্পট ছেলে হাফেজ রাকিবুল ইসলাম।
এক পর্যায়ে লম্পট রাকিব জোর করে ধর্ষণ করে অসহায় নাছিমাকে। ধর্ষণের ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলাসহ এলাকা ছাড়ার করার হুমকী দেয় লম্পট রাকিব। জীবন বাঁচাতে ও সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে ঘটনা ফাঁস না করে চুপ থাকে নাছিমা। পরবর্তীতে ভয়-ভীতি দেখিয়ে রাকিব আরো কয়েকবার ধর্ষণ করে নাছিমাকে।
কিছুদিনের মধ্যেই নাছিমা টেরপায় তার গর্ভে সন্তান আসার। বিষয়টি চারিদিকে কানাঘুষা হতে থাকে। এনিয়ে রাকিবকে নাছিমা চাপ দেয় তাকে বিয়ে করার। এসময় রাকিবের পরিবারসহ তার নিকট আত্মীয়-স্বজনরা চেষ্টা করে নাছিমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার। এক পর্যায়ে লম্পট রাকিবের পরিবারসহ তার স্বজনদের পরামর্শে নাছিমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে গত ৫ নভেম্বর ঔষধ খাইয়ে দেয়। এতে নাছিমার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকে। পরবর্তীতে নাছিমার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে নিয়ে আসে শাহরাস্তি উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের একসময়ের স্বাস্থ্যকর্মী বিউটি আক্তারের (স্বামী মৃত শহীদ উল্লাহ) নিকট।
অবস্থা বেগতিক দেখে স্বাস্থ্যকর্মী বিউটির পরামর্শে নাছিমাকে ভর্তি করা হয় স্থানীয় ‘শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে’। ওই হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ডাঃ তানজিনা সুলতানার তত্বাবধানে নাছিমা ৭(সাত)মাস বয়সী একটি মৃত পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। অতঃপর দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার ঘন্টাপর রাত সাড়ে আটটার দিকে নাছিমা মৃত বাচ্ছাসহ হাসপাতাল ত্যাগ করাকালে বিষয়টি স্থানীয় মিড়িয়াকর্মীদের নজরে আসে।
মিড়িয়াকর্মীদের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল বিষয়টির সুষ্ঠ সমাধানে চেষ্টা করে। কিন্তু অসহায় নাছিমার পক্ষে কেউ এগিয়ে না আসায় এবং অপরাধিদের তালবাহানার কারনে কোন সমাধানে পৌঁছতে না পেরে গতকাল ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার এবিষয়টি স্থানীয় শাহরাস্তি থানা প্রশাসনের নজরে আনলে থানার ওসি(অফিসার ইনচার্জ) মোঃ শাহ আলম এলএলবি নাছিমার অভিভাবকদের দ্রুত থানায় ডেকে পাঠায়। ওসির পরামর্শ ও নির্দেশনায় নাছিমার চাচাত ভাই ইউসুফ গনি ৩জনকে আসামী করে নিজে বাদি হয়ে শাহরাস্তি থানায় ধর্ষণ এবং নারি ও শিশু নির্যাতন আইনে রাত ১১:৪৫ ঘটিকায় একটি মামলা রজ্জু করে। মামলা নম্বর- ০৭, তারিখ-০৭/১১/২০১৯ ইং।
মামলার আসামীরা হলেন :- (১) মোঃ রাকিবুল ইসলাম(২১),পিতা-আবুল খায়ের পাটওয়ারি(বাসার), গ্রাম-ভিংরা পাটওয়ারি বাড়ি,ডাকঘর-সাহেব বাজার,উপজেলা-শাহরাস্তি,জেলা-চাঁদপুর(মুল আসামী), (২) মোঃ আবুল খায়ের পাটওয়ারি(বাসার) (৫৬),পিতা মৃত-আলতাফ উদ্দিন পাটওয়ারি,গ্রাম-ভিংরা পাটওয়ারি বাড়ি,ডাকঘর-সাহেব বাজার,উপজেলা-শাহরাস্তি,জিলা-চাঁদপুর(মুল আসামীর বাবা) এবং (৩) বিউটি আক্তার(৫৫),স্বামী মৃত- শহীদ উল্লাহ,গ্রাম-শ্রীপুর,ডাকঘর+উপজেলা- শাহরাস্তি,জেলা-চাঁদপুর।