Breaking News
Home / Breaking News / সবাই এমপি হতে চায়! এমপি হওয়া কি এত সোজা?

সবাই এমপি হতে চায়! এমপি হওয়া কি এত সোজা?

মুক্তমত প্রকাশ:
প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “এমপি কি কাচকি মাছের ভাগা? সবাই এমপি হতে চায়। সারা দেশজুড়ে রাস্তায় রাস্তায়, নগর শহর থেকে গ্রামীণ জনপদে ডিজিটাল ব্যানার, রঙিন পোস্টারে ঝুলছে যার তার ছবি ও নাম। অমুককে সংসদে দেখতে চাই। চাওয়া দূরে থাক, এদের কাউকে মানুষ চিনে না পর্যন্ত। সংসদ সদস্য হওয়ার মতো যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা মানুষের মধ্যে দূরে থাক, অনেকের নিজ দলেও নেই।”

ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার কাউন্সিলর হওয়ার মতো জনপ্রিয়তা নেই। রাজনৈতিক অতীত নেই, গণমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। ছাত্র রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্বের গৌরব নেই, ক্যারিশমা নেই। তবু নিজে নিজে টাকার জোরে এসব ডিজিটাল ব্যানার ও পোস্টারের দৃশ্যে চারদিক এমনভাবে সাজিয়েছে যে, চোখ মেলে তাকানো যায় না। মানুষ বিরক্ত হচ্ছে, ক্ষুব্ধ হচ্ছে।
তাতে তাদের কিছুই হয় না। মূল্যবোধহীন রাজনীতির ধারাবাহিকতায় এটি চলছে। দল মনোনয়ন দেবে না নিশ্চিত হয়েও এমনটি করছে। একসময় আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক আদর্শ, চিন্তা ও চেতনায় লালন করে অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতায় যারা গণমানুষের আস্থা অর্জন করতেন তারাই দলের মনোনয়ন চাইতেন।

তাদের কোনো ডিজিটাল ব্যানার, পোস্টারের প্রয়োজন হতো না। মানুষের হৃদয়ে, দলীয় কর্মীদের মুখে মুখে তাদের নাম উচ্চারিত হতো। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে গঠিত সংসদ, শাসনব্যবস্থা ও রাজনীতির গতিপ্রবাহ আজকের এই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বীভৎস চিত্র রাজনীতির ময়দানে দেখা গেছে।
‘৯১ সালে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছিল দলের ত্যাগী নেতাদের। ভঙ্গুর বিএনপি টাকাওয়ালাদের ধরে ধরে এনে মনোনয়ন দিয়েছিল। ঠিকাদার, টেন্ডারবাজ থেকে শুরু করে সমাজকে কলুষিত করার খলনায়করা সংসদে আসতে থাকেন। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোগ দেন ব্যবসায়ীরা। সৎ, ক্লিন ইমেজের আদর্শবান রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা অসহায় হয়ে পড়েন। ছাত্র সংগঠনগুলোতে অছাত্র নেতৃত্বের আগ্রাসন রাজনীতিকে কলুষিত করে তোলে।
সংসদের কার্যপ্রণালীবিধি পাঠ করা বা তা অনুসরণ করার যোগ্যতা থাক বা না থাক, সংবিধান পড়া ও বোঝার ক্ষমতা থাক বা না থাক, এমপি তাদের হওয়া চাই।

গণতন্ত্রের অধিকারের এই সুযোগে তারাই এগিয়ে আছে। তাদের ছায়ায় ছায়ায় নষ্টদের ডিজিটাল ব্যানার, পোস্টারে ছেয়ে গেছে বাংলাদেশ। কেউ ভালোবাসুক আর নাই বাসুক, কেউ পছন্দ করুক আর নাই করুক, লাজলজ্জার অভিধান তাদের কাছে নেই।
এমপি মনোনয়ন চাইলে পাক না পাক, নির্বাচিত এমপির কাছে গুরুত্ব বাড়বে, স্থানীয় প্রশাসন পাত্তা দেবে, ঠিকাদারি, চাঁদাবাজির প্রসার ঘটবে। দলের নেতৃত্বেও অবস্থান সুদৃঢ় হবে।

কত স্বপ্ন! মানুষের কল্যাণ নয়, নিজের উন্নয়নই যাদের লক্ষ্য। এদের আস্ফালনে, কর্মকাণ্ডে মূল্যবোধ সম্পন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন, না হয় ঘরে উঠে গেছেন। প্রকৃত রাজনৈতিক নেতাকর্মী যারা আদর্শবোধ নিয়ে রাজনীতি করতেন, করছেন গণমানুষের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা থাকলেও শোডাউনের অসুস্থ রাজনীতির অর্থ খরচের দাপটের কাছে তারা কোণঠাসা। এই রাজনীতির পরিবর্তনে মনোনয়ন দানে রাজনৈতিক দলগুলো ইতিবাচক ভূমিকা নিতেই পারে। রাজনীতিবিদদের কাছেই ফিরে আসুক রাজনীতি।

লেখাটি হাজীগঞ্জ শহর ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক শাহজালাল রুবেলের ফেসবুক থেকে নেওয়া।

Powered by themekiller.com