Breaking News
Home / Breaking News / আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার হুমকি

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার হুমকি

আফগানিস্তানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মার্কিন সেনাদের বিচারের চেষ্টা করলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন আইসিসিকে আখ্যায়িত করেছেন ‘অবৈধ’ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সব কিছুই করবে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগান যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর হাতে আটকদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তদন্ত করার একটি আবেদন আইসিসি এখন বিবেচনা করছে।

রোম সংবিধি অনুযায়ী ২০০২ সালে নেদারল্যান্ডসের হেগেতে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এই আদালতে এখনও যোদ দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।

জন বোল্টন বরাবরই কড়া ভাষায় আইসিসির ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন। তবে সোমবার ওয়াশিংটনে রক্ষণশীল গ্রুপ ফেডারেলিস্ট সোসাইটির এক অনুষ্ঠানে এ আদালত নিয়ে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন, সেখানে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর প্রথমটি গতবছর আইসিসির কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদার করা একটি আবেদন নিয়ে, যেখানে আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথাও সেখানে আছে।
আর দ্বিতীয়টি হল- গাজায় ইসরায়েলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অভিযোগের তদন্ত করতে ফিলিস্তিনিদের চেষ্টা।

প্রথমটির ক্ষেত্রে বোল্টন বলছেন, আফগানিস্তান বা আইসিসির কোনো সদস্য দেশ যেহেতু ওই অভিযোগ করেনি, সুতরাং বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার প্রশ্ন অবান্তর।

আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে তার বক্তব্য, যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিনের কূটনৈতিক মিশন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এর পেছনে তাদের আইসিসিতে যাওয়ার চেষ্টাও একটি কারণ।

বোল্টন তার বক্তৃতায় আইসিসিকে বর্ণনা করেন ‘আমেরিকার সার্বভৌমত্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি’ হিসেবে।

তার ভাষায়, আইসিসি বিভিন্ন অপরাধকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। সেসব অপরাধ বিচারের এখতিয়ার এ আদালতের আছে কি না- সে বিষয়েও প্রশ্ন আছে। সহিংস অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রেও আইসিসি ব্যর্থ হয়েছে।

আর যুক্তরাষ্ট্র যেখানে সংবিধানের উপরে আর কোনো কিছুকে স্থান দেয় না, সেখানে এই আন্তর্জাতিক আদালতকে একটি অপ্রয়োজনীয় বিষয় বলে মনে করেন ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোল্টন।
তিনি বলেন, “আইসিসিকে কোনো ধরনের সহযোগিতা আমরা করব না। তাদের কোনো সাহায্য আমরা দেব না। আমরা আইসিসিতে যোগ দেব না। আইসিসি এভাবেই মরে যাবে, আমরা সেটাই চাই। তাছাড়া আইসিসির যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য, তাতে এ আদালত এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে মৃত একটি প্রতিষ্ঠান।”
বোল্টনের ওই বক্তব্যের সমর্থন এসেছে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র সারা স্যান্ডার্সের কথায়। তিনি বলেছেন, আইসিসির যে কোনো অযৌক্তিক পদক্ষেপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আর মিত্রদের রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় সব কিছুই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করবেন।

যুক্তরাষ্ট্র কী কী করতে পারে তা বোল্টনের বক্তৃতাতেই এসেছে।

তিনি বলেছেন, যারা আইসিসিতে মার্কিন নাগরিকদের বিচারের চেষ্টা করবে, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থায় তাদের বিচার করা হবে। কোনো কোম্পানি বা দেশ যদি আইসিসির ওই তদন্তে সহযোগিতা করে, তাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইসিসির বিচারক, প্রসিকিউটরসহ সংশ্লিষ্টদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের আওতায় থাকা তাদের সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।

পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের যাতে কেউ আইসিসিতে নেওয়ার চেষ্টা না করে, সেজন্য ওয়াশিংটন আরও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করবে বলে ঘোষণা দেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকির জবাবে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বলেছে, তারা যা করছে বিশ্বের ১২৩টি দেশের সমর্থন নিয়েই তা করা হচ্ছে।

“আইসিসি একটি বিচারিক প্রতিষ্ঠান। রোম সংবিধিতে নির্ধারিত আইনি কাঠামোর ভেতরেই এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে সেই দায়িত্ব পালনে আইসিসি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

Powered by themekiller.com