Breaking News
Home / Breaking News / শাহরাস্তিতে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার অভিযোগে হাসপাতাল ভাংচুর

শাহরাস্তিতে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার অভিযোগে হাসপাতাল ভাংচুর

আহসান হাবিব পাটওয়ারীঃ
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে “শাহরাস্তি পপুলার হাসপাতালে” ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ। এ অভিযোগে নিহতের স্বজনরা হাসপাতালটি ভাংচুর করেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঠাকুরবাজারে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, উপজেলার টামটা উঃ ইউনিয়নের সেনগাঁও গ্রামের মো. হোসেনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস (২৬) সন্তান প্রসবের ব্যাথা অনুভব করলে তাকে ৩১ মে শুক্রবার রাতে “শাহরাস্তি নিউ পপুলার হাসপাতালে” এনে স্বজনরা ভর্তি করায়। যাবতীয় ঐ দিন রাত ১২টায় কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ আরিফ-উল হাসান ও ডাঃ নাজমুন নাহার মিতু তাকে সিজারিয়ান অপারেশন করান। এতে জান্নাতুল ফেরদাউসের কোল জুড়ে একটি কন্যা সন্তান আসে। একটি সফল অপারেশনের পরও তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকে, ফলে ধিরে ধিরে তার শারীরের অবস্থার অবনতি হতে দেখা দেয়। অবস্থার অবনতির কারণে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন তার স্বজনদের। রাতের মধ্যেই সেখানে নিয়ে ভর্তি করানের পরও তার অবস্থার কোন পরিবর্তন না ঘটলে গতকাল শনিবার বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জান্নাতুল ফেরদাউস মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তার আত্মীয়-স্বজনরা হাসপাতালের সামনে এসে বিক্ষোভ করে এক পর্যায়ে হাসপাতাল ভাংচুর করে।

নিহত ফেরদৌসের স্বামী মো. হোসেন (৩৫) বলেন, আমার স্ত্রীর প্রসব ব্যাথা শুরু হলে আমি তাকে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে আসি এবং ডা. আরিফ ও ডা. নাজমুন নাহার মিতু সিজার করান। এতে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয় তার। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে ডা. আরিফ ও ডা. নাজমুন নাহার মিতু আমাকে ডেকে বলেন, ফেরদৌসের জরায়ু অপারেশন করতে হবে, নতুবা তার রক্ত ক্ষরণ বন্ধ হবে না। এ অবস্থায় অঙ্গীকার নামা চাইলে আমি অপারগ হয়ে অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করি এবং তারা আমার স্ত্রীর জরায়ু অপারেশন করেন।

জানতে চাইলে ডা. আরিফ-উল হাসান বলেন, রোগি আসার পর প্রয়োজনীয় সকল পরিক্ষায় রোগির “প্লাসেন্টা প্রিভিয়া” রোগ ধরা পড়ে। তখন তার অভিভাকদের জানালে তারা অঙ্গিকার নামা ফরম পূরণ করে সিজার করার অনুমোতি প্রদান করেন। সফল অপারেশনের পর শুরু হয় রক্ত ক্ষরণ। রোগির অভিভাবকদের জানালে তারা রক্তের ব্যবস্থা করেন। এক পর্যায়ে রোগির অবস্থা খারাপ হলে তাদের সাথে পরামর্শ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করি। তিনি আরও বলেন, রোগির প্রসব ব্যথা শুরু হলে তারা হোম ট্রায়াল করেছেন, যে কারনে রোগির প্লাসেন্টা প্রিভিয়া রোগটি বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়। এছাড়া রোগি তার প্রথম সন্তান প্রসবকালেও বড় সিজার গ্রহন করেছিলেন।

অতঃপর সন্ধ্যায় তার মৃতদেহ ঢাকা থেকে এ্যাম্বুলেন্স যোগে “শাহরাস্তি পপুলার হাসপাতালে”র সামনে নিয়ে আসা হলে আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসি বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা দোষীদের বিচারের দাবীতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। সংবাদ পেয়ে শাহরাস্তি থানার একাধিক কর্মকর্তা সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালায়।

মৃত্যু এবং হাসপাতাল ভাংচুরের খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফরিদ উল্লাহ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান তোফায়েল আহম্মেদ ইরান ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে আসেন। এসে জনগণকে সান্ত্বনা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহআলম উত্তেজিত জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়ে দোষীদের উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ জনতা কিছুটা শান্ত হয়। পরে তারা মৃতদেহসহ একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহরাস্তি থানার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান ওসি মো. শাহ আলম।

Powered by themekiller.com