Breaking News
Home / Breaking News / মিয়ানমারে বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধে কেন ব্যর্থ ফেসবুক

মিয়ানমারে বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধে কেন ব্যর্থ ফেসবুক

অনলাইন ডেস্ক :ছয় বছর আগেও মিয়ানমার ছিল পৃথিবীর অন্য দেশগুলো থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন। ২০১২ সালে দেশটিতে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করত, টেলিফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা। জান্তা সরকার দেশটাকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে যখন থেকে একটি আধা বেসামরিক সরকার টেলিযোগাযোগ খাতের ওপর নজর দিতে শুরু করল, তখনই সব পাল্টে গেল। রাষ্ট্রের মালিকানাধীন ফোন কোম্পানি হঠাৎ করেই নরওয়ে ও কাতার থেকে আসা দুটি ফোন কোম্পানির প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে।

যে মোবাইল সিমকার্ডের দাম ছিল ২০০ মার্কিন ডলার, তা কমে দাঁড়ায় ২ ডলারে। মোবাইল কোম্পানির বাণিজ্যিক সংস্থার গবেষণা শাখা জিএসএমএ ইন্টেলিজেন্সের হিসেবে দেখা যায়, ২০১৬ সাল নাগাদ দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষের হাতে পৌঁছে যায় মোবাইল। বেশির ভাগই স্মার্টফোন। আর ইন্টারনেটে যে অ্যাপ ভাইরাল হলো তা ফেসবুক। গ্রাহকদের টানতে মোবাইল কোম্পানিগুলো মোবাইল কিনলে ফ্রি ফেসবুকিং করার অফার দেয়।

গত জুলাই পর্যন্ত মিয়ানমারে টেলিনরের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থাকা লার্স এরিকটেলমান বলেন, ‘ফেসবুকের উচিত আমাদের ফুল দেওয়া। কারণ ফেসবুককে জনপ্রিয় করতে আমরা সিঁড়ি হিসেবে কাজ করেছি। আমরা নিজেরা এ উদ্যোগ নিয়েছি, যা খুবই সাড়া ফেলেছিল।’

শুধু যে মিয়ানমারের সাধারণ জনগণই ফেসবুক ব্যবহার করেছে, এমনটা নয়। সরকারি অনেক ঘোষণাও অনেক সময় ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম থেকে দেওয়া হয়। গত মার্চে দেশটির প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের খবরও ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। অনেকের কাছে ফেসবুক হলো একের ভেতর সব। এমনকি এটি মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের একজন সাবেক পরামর্শক কিচির সিতুন রয়টার্সকে বলেন, ‘আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট না থাকা মানে হলো আপনি সেকেলে। দাদি থেকে শুরু করে সবারই ফেসবুক রয়েছে।’

কিন্তু এই ফেসবুককে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাপকভাবে ছড়ানো হয়েছে ঘৃণ্য বক্তব্য। ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলোয় রোহিঙ্গা বা অন্য মুসলিমদের কুকুর, শূককীট, ধর্ষক, তাদের মাংস শূকরকে খাওয়ানো উচিত, দেখলেই গুলি বা হত্যা করো—এমন সব বাজে কথা ছড়ানো হয়েছে। এমনকি পর্নোগ্রাফিও ছিল সেসব বার্তায়।

একজন একটি রেস্তোরাঁয় বিজ্ঞাপনের পোস্ট দিতে গিয়ে রোহিঙ্গা স্টাইল খাবারের ছবি দিয়ে নিচে লেখেন, ‘হিটলার যেভাবে ইহুদিদের বিরুদ্ধে লড়েছিল (হত্যা করেছিল), আমাদেরও অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।’ পোস্টটি ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের।

আরেকটি পোস্টে সেনানিয়ন্ত্রিত প্রকাশনার একটি নিউজ আর্টিকেল ছিল। সেখানে লেখা ছিল, ‘এই অমানুষ কালার কুকুররা, এরা বাঙালি, এরা আমাদের হত্যা করছে, আমাদের ভূমি ও পানি ধ্বংস করছে, আদিবাসীদের হত্যা করছে, আমাদের উচিত তাদের শেষ করে দেওয়া।’

আরেক ব্যবহারকারী একটি ব্লগ আইটেম শেয়ার করে। সেখানে থাকা একটি ছবিতে দেখা যায়, রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা থেকে ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গারা নামছে। ওই ছবির নিচে লিখেছেন, ‘জ্বালানি ঢেলে আগুন ধরিয়ে দাও যাতে ওরা দ্রুত আল্লাহর কাছে যেতে পারে।’

অথচ ফেসবুকের নীতিমালা অনুযায়ী নৃতাত্ত্বিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘কোনো উগ্র বা অমানবিক বক্তব্য’ অথবা তাদের পশুর সঙ্গে তুলনা করা সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে পর্নোগ্রাফি ছবি বিষয়ে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। গত মাসে রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহেও ফেসবুকে রোহিঙ্গা বা মিয়ানমারের অন্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে এক হাজারের বেশি পোস্ট, মন্তব্য, ইমেজ ও ভিডিও দেখা গেছে। প্রায় সবই স্থানীয় ভাষায়। রয়টার্স এবং ইউসি বার্কলি স্কুল অব ল-এর হিউম্যান রাইটস সেন্টারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এর মধ্যে অনেকগুলো ছয় বছর ধরে রয়েছে।

জাতিসংঘ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, স্থানীয় গবেষক এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে ফেসবুককে অনেকবার সতর্ক করেছে। গত মার্চে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তা ইয়াংহি লি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বিদ্বেষ ছড়াতে ফেসবুকের ভূমিকার সমালোচনা করে একে ‘দানবে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি এ নেটওয়ার্ককে বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের চালিকাশক্তি বলেও উল্লেখ করেন। কিন্তু এসব কথা ফেসবুকের কর্ণকুহরে ঢুকেছে বলে মনে হয় না। কারণ তাহলে হয়তো বিদ্বেষ এতটা ছড়াত না। কিন্তু এত সতর্কতা সত্ত্বেও ফেসবুক কেন ব্যর্থ হলো, তার কয়েকটি কারণ বের করেছে রয়টার্স।

২০১৭ সালে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ডলার আয়কারী ফেসবুক এত দিনে হেট স্পিচের বিরুদ্ধ লড়াই করতে বিনিয়োগ শুরু করেছে।

মিয়ানমার হচ্ছে এমন একটি দেশ, যেখানে প্রায় সব সময়ই জাতিগত দাঙ্গা লেগেই থাকে। প্রতিনিয়ত বিদ্বেষধর্মী স্ট্যাটাস থাকে দেশটির ফেসবুক ব্যবহারকারীদের। এমনকি ফেসবুকে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের দুটি সচল অ্যাকাউন্টে ইংরেজি ও বার্মিজ ভাষায় যেসব পোস্ট দেওয়া হয়, সেখানে রোহিঙ্গাদের উল্লেখ করা হয় ‘বাঙালি’ হিসেবে। এ ছাড়া ওই সব পোস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ঘটনা বরাবরই নাকচ করা হয়। দুই অ্যাকাউন্টের একটির অনুসারী ২৮ লাখ এবং অন্যটির ১৩ লাখ। কিন্তু এসব দেখার কেউ ছিল না। কারণ দেখা যায়, ২০১৫ সালে বার্মিজ ভাষা জানে—এমন মাত্র দুজন লোক ফেসবুকে ছিলেন। তাঁরা সমস্যাযুক্ত পোস্টগুলো রিভিউ করতেন। এর আগে যাঁরা রিভিউ করতেন, তাঁরা কেউ বার্মিজ ভাষা জানতেন না।
এখনো পাঁচ কোটি জনসংখ্যার মিয়ানমারে ফেসবুক কাউকে নিয়োগ দেয়নি। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমকে রিভিউয়ের কাজটি বাইরে থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমেই করতে হয়। কুয়ালালামপুরে অ্যাকসেনচার নামের প্রতিষ্ঠানটি ‘প্রজেক্ট হানি ব্যাজার’-এর মাধ্যমে এটি করে থাকে।

এই প্রজেক্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গত জুনে প্রায় ৬০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ মিয়ানমারে ফেসবুকে সক্রিয় অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। ফেসবুক নিজেই অবশ্য গত এপ্রিলে তাদের আন্তর্জাতিক সদর দপ্তর ডাবলিনে বার্মিজভাষী তিনজনক নিয়োগ দেয়।

ফেসবুকের একজন কর্মী রয়টার্সকে বলেন, ঘৃণ্য বক্তব্য শনাক্তকরণে আউটসোর্সিংই ভালো। কারণ, তাঁরা দক্ষ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বার্মিজভাষী কতজন কাজ করছেন, তিনি তা না বললেও সংখ্যাটা যা, তা যথেষ্ট নয় বলে তিনি মনে করেন।

ফেসবুকে বিকৃত বা যৌনতার কোনো ছবি প্রকাশ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা ধরা পড়ে। কিন্তু বার্মিজ ভাষার অক্ষরের কারণে ইংরেজিতে রূপান্তর করার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মূল ভাবটি নষ্ট হয়ে যায়। অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন বার্মিজ একটা পোস্টে লেখা হয়েছিল, ‘মিয়ানমারে যত কালা দেখা যাবে, তাদের হত্যার করতে হবে, একজনও যাতে বাঁচতে না পারে।’ আর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ইংরেজি করার পর এর অর্থ দাঁড়ায় ‘মিয়ানমারে আমার কোনো রংধনু ছিল না।’ তাই এখন পর্যন্ত ফেসবুককে তার ব্যবহারকারীদের অভিযোগের ওপর বেশি নির্ভর করতে হয়।

যেমন দেশটির সরকারও ২০১৪ সালের ফেসবুককে অভিযোগ করেছিল। সে বছরের জুলাইয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয় মুসলিম এক ব্যক্তি বৌদ্ধ এক নারীকে ধর্ষণ করেছে। এ নিয়ে মান্দালয়ে দাঙ্গা বাধে। এতে একজন বৌদ্ধ ও একজন মুসলিম নিহত হন। মিয়ানমার সরকার দেলোইতি কনসালটেন্ট তুনকে ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। তুন প্রথমে ব্যর্থ হলে সরকার দেশটিতে ফেসবুককে বন্ধ করে দেয়। এরপর তুন ফেসবুকের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করতে সক্ষম হন। ফেসবুকে যখনই কোনো ফেইক নিউজ ধরা পড়বে, তখনই তাদের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করতে বলে। এরপর তারা নিজেদের মতো করে যাচাই–বাছাই করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

এরপর সরকার ফেসবুকের কাছে অভিযোগ করতে শুরু করে। কিন্তু খুব দ্রুতই বোঝা গেল কোম্পানিটি বার্মিজ ভাষাটা ভালো রপ্ত করতে পারে না। তুন বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, ফেসবুকের বার্মিজ কনটেন্ট সম্পর্কে ধারণা নেই। তারা এর জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়। এর জন্য কনটেন্ট আমাদের ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিতে হয়।’

ফেসবুক জানিয়েছে, সঠিক অনুবাদের জন্য তাদের পদ্ধতি উন্নয়নের কাজ চলছে। তারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে ঘৃণ্য বক্তব্য শনাক্ত করে থাকে।

প্রথম আলো
আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিকএশিয়া
মিয়ানমারে বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধে কেন ব্যর্থ ফেসবুক
লিপি রানী সাহা
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৩৫
আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৫০

ছয় বছর আগেও মিয়ানমার ছিল পৃথিবীর অন্য দেশগুলো থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন। ২০১২ সালে দেশটিতে মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করত, টেলিফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা। জান্তা সরকার দেশটাকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে যখন থেকে একটি আধা বেসামরিক সরকার টেলিযোগাযোগ খাতের ওপর নজর দিতে শুরু করল, তখনই সব পাল্টে গেল। রাষ্ট্রের মালিকানাধীন ফোন কোম্পানি হঠাৎ করেই নরওয়ে ও কাতার থেকে আসা দুটি ফোন কোম্পানির প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে।

যে মোবাইল সিমকার্ডের দাম ছিল ২০০ মার্কিন ডলার, তা কমে দাঁড়ায় ২ ডলারে। মোবাইল কোম্পানির বাণিজ্যিক সংস্থার গবেষণা শাখা জিএসএমএ ইন্টেলিজেন্সের হিসেবে দেখা যায়, ২০১৬ সাল নাগাদ দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষের হাতে পৌঁছে যায় মোবাইল। বেশির ভাগই স্মার্টফোন। আর ইন্টারনেটে যে অ্যাপ ভাইরাল হলো তা ফেসবুক। গ্রাহকদের টানতে মোবাইল কোম্পানিগুলো মোবাইল কিনলে ফ্রি ফেসবুকিং করার অফার দেয়।

গত জুলাই পর্যন্ত মিয়ানমারে টেলিনরের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থাকা লার্স এরিকটেলমান বলেন, ‘ফেসবুকের উচিত আমাদের ফুল দেওয়া। কারণ ফেসবুককে জনপ্রিয় করতে আমরা সিঁড়ি হিসেবে কাজ করেছি। আমরা নিজেরা এ উদ্যোগ নিয়েছি, যা খুবই সাড়া ফেলেছিল।’

জাতিসংঘ বলছে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের উদ্দেশ্যই ছিল গণহত্যা। এ জন্য মিয়ানমারের সেনারা সেখানে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা ও ধর্ষণ করেছে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স
শুধু যে মিয়ানমারের সাধারণ জনগণই ফেসবুক ব্যবহার করেছে, এমনটা নয়। সরকারি অনেক ঘোষণাও অনেক সময় ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম থেকে দেওয়া হয়। গত মার্চে দেশটির প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের খবরও ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। অনেকের কাছে ফেসবুক হলো একের ভেতর সব। এমনকি এটি মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের একজন সাবেক পরামর্শক কিচির সিতুন রয়টার্সকে বলেন, ‘আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট না থাকা মানে হলো আপনি সেকেলে। দাদি থেকে শুরু করে সবারই ফেসবুক রয়েছে।’

কিন্তু এই ফেসবুককে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাপকভাবে ছড়ানো হয়েছে ঘৃণ্য বক্তব্য। ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলোয় রোহিঙ্গা বা অন্য মুসলিমদের কুকুর, শূককীট, ধর্ষক, তাদের মাংস শূকরকে খাওয়ানো উচিত, দেখলেই গুলি বা হত্যা করো—এমন সব বাজে কথা ছড়ানো হয়েছে। এমনকি পর্নোগ্রাফিও ছিল সেসব বার্তায়।

একজন একটি রেস্তোরাঁয় বিজ্ঞাপনের পোস্ট দিতে গিয়ে রোহিঙ্গা স্টাইল খাবারের ছবি দিয়ে নিচে লেখেন, ‘হিটলার যেভাবে ইহুদিদের বিরুদ্ধে লড়েছিল (হত্যা করেছিল), আমাদেরও অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে।’ পোস্টটি ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের।

ফেসবুকে বর্মিজ ভাষায় ছড়ানো হয় বিভিন্ন ঘৃণ্য বক্তব্য। এরই মধ্যে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইংসহ ২০ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ফেসবুকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
আরেকটি পোস্টে সেনানিয়ন্ত্রিত প্রকাশনার একটি নিউজ আর্টিকেল ছিল। সেখানে লেখা ছিল, ‘এই অমানুষ কালার কুকুররা, এরা বাঙালি, এরা আমাদের হত্যা করছে, আমাদের ভূমি ও পানি ধ্বংস করছে, আদিবাসীদের হত্যা করছে, আমাদের উচিত তাদের শেষ করে দেওয়া।’

আরেক ব্যবহারকারী একটি ব্লগ আইটেম শেয়ার করে। সেখানে থাকা একটি ছবিতে দেখা যায়, রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা থেকে ইন্দোনেশিয়ায় রোহিঙ্গারা নামছে। ওই ছবির নিচে লিখেছেন, ‘জ্বালানি ঢেলে আগুন ধরিয়ে দাও যাতে ওরা দ্রুত আল্লাহর কাছে যেতে পারে।’

অথচ ফেসবুকের নীতিমালা অনুযায়ী নৃতাত্ত্বিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘কোনো উগ্র বা অমানবিক বক্তব্য’ অথবা তাদের পশুর সঙ্গে তুলনা করা সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে পর্নোগ্রাফি ছবি বিষয়ে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। গত মাসে রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহেও ফেসবুকে রোহিঙ্গা বা মিয়ানমারের অন্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে এক হাজারের বেশি পোস্ট, মন্তব্য, ইমেজ ও ভিডিও দেখা গেছে। প্রায় সবই স্থানীয় ভাষায়। রয়টার্স এবং ইউসি বার্কলি স্কুল অব ল-এর হিউম্যান রাইটস সেন্টারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এর মধ্যে অনেকগুলো ছয় বছর ধরে রয়েছে।

কথিত বিদ্রোহী দমনের নামে গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নৃশংস অভিযান শুরু করে মিয়ানমার। ফাইল ছবি: রয়টার্স
জাতিসংঘ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, স্থানীয় গবেষক এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে ফেসবুককে অনেকবার সতর্ক করেছে। গত মার্চে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তা ইয়াংহি লি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বিদ্বেষ ছড়াতে ফেসবুকের ভূমিকার সমালোচনা করে একে ‘দানবে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি এ নেটওয়ার্ককে বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের চালিকাশক্তি বলেও উল্লেখ করেন। কিন্তু এসব কথা ফেসবুকের কর্ণকুহরে ঢুকেছে বলে মনে হয় না। কারণ তাহলে হয়তো বিদ্বেষ এতটা ছড়াত না। কিন্তু এত সতর্কতা সত্ত্বেও ফেসবুক কেন ব্যর্থ হলো, তার কয়েকটি কারণ বের করেছে রয়টার্স।

২০১৭ সালে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ডলার আয়কারী ফেসবুক এত দিনে হেট স্পিচের বিরুদ্ধ লড়াই করতে বিনিয়োগ শুরু করেছে।

মিয়ানমার হচ্ছে এমন একটি দেশ, যেখানে প্রায় সব সময়ই জাতিগত দাঙ্গা লেগেই থাকে। প্রতিনিয়ত বিদ্বেষধর্মী স্ট্যাটাস থাকে দেশটির ফেসবুক ব্যবহারকারীদের। এমনকি ফেসবুকে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের দুটি সচল অ্যাকাউন্টে ইংরেজি ও বার্মিজ ভাষায় যেসব পোস্ট দেওয়া হয়, সেখানে রোহিঙ্গাদের উল্লেখ করা হয় ‘বাঙালি’ হিসেবে। এ ছাড়া ওই সব পোস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ঘটনা বরাবরই নাকচ করা হয়। দুই অ্যাকাউন্টের একটির অনুসারী ২৮ লাখ এবং অন্যটির ১৩ লাখ। কিন্তু এসব দেখার কেউ ছিল না। কারণ দেখা যায়, ২০১৫ সালে বার্মিজ ভাষা জানে—এমন মাত্র দুজন লোক ফেসবুকে ছিলেন। তাঁরা সমস্যাযুক্ত পোস্টগুলো রিভিউ করতেন। এর আগে যাঁরা রিভিউ করতেন, তাঁরা কেউ বার্মিজ ভাষা জানতেন না।

গত এক বছরে মিয়ানমার থেকে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স
গত এক বছরে মিয়ানমার থেকে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স
এখনো পাঁচ কোটি জনসংখ্যার মিয়ানমারে ফেসবুক কাউকে নিয়োগ দেয়নি। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমকে রিভিউয়ের কাজটি বাইরে থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমেই করতে হয়। কুয়ালালামপুরে অ্যাকসেনচার নামের প্রতিষ্ঠানটি ‘প্রজেক্ট হানি ব্যাজার’-এর মাধ্যমে এটি করে থাকে।

এই প্রজেক্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গত জুনে প্রায় ৬০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ মিয়ানমারে ফেসবুকে সক্রিয় অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। ফেসবুক নিজেই অবশ্য গত এপ্রিলে তাদের আন্তর্জাতিক সদর দপ্তর ডাবলিনে বার্মিজভাষী তিনজনক নিয়োগ দেয়।

ফেসবুকের একজন কর্মী রয়টার্সকে বলেন, ঘৃণ্য বক্তব্য শনাক্তকরণে আউটসোর্সিংই ভালো। কারণ, তাঁরা দক্ষ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বার্মিজভাষী কতজন কাজ করছেন, তিনি তা না বললেও সংখ্যাটা যা, তা যথেষ্ট নয় বলে তিনি মনে করেন।

ফেসবুকে বিকৃত বা যৌনতার কোনো ছবি প্রকাশ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা ধরা পড়ে। কিন্তু বার্মিজ ভাষার অক্ষরের কারণে ইংরেজিতে রূপান্তর করার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মূল ভাবটি নষ্ট হয়ে যায়। অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন বার্মিজ একটা পোস্টে লেখা হয়েছিল, ‘মিয়ানমারে যত কালা দেখা যাবে, তাদের হত্যার করতে হবে, একজনও যাতে বাঁচতে না পারে।’ আর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ইংরেজি করার পর এর অর্থ দাঁড়ায় ‘মিয়ানমারে আমার কোনো রংধনু ছিল না।’ তাই এখন পর্যন্ত ফেসবুককে তার ব্যবহারকারীদের অভিযোগের ওপর বেশি নির্ভর করতে হয়।

যেমন দেশটির সরকারও ২০১৪ সালের ফেসবুককে অভিযোগ করেছিল। সে বছরের জুলাইয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয় মুসলিম এক ব্যক্তি বৌদ্ধ এক নারীকে ধর্ষণ করেছে। এ নিয়ে মান্দালয়ে দাঙ্গা বাধে। এতে একজন বৌদ্ধ ও একজন মুসলিম নিহত হন। মিয়ানমার সরকার দেলোইতি কনসালটেন্ট তুনকে ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। তুন প্রথমে ব্যর্থ হলে সরকার দেশটিতে ফেসবুককে বন্ধ করে দেয়। এরপর তুন ফেসবুকের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করতে সক্ষম হন। ফেসবুকে যখনই কোনো ফেইক নিউজ ধরা পড়বে, তখনই তাদের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করতে বলে। এরপর তারা নিজেদের মতো করে যাচাই–বাছাই করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

এরপর সরকার ফেসবুকের কাছে অভিযোগ করতে শুরু করে। কিন্তু খুব দ্রুতই বোঝা গেল কোম্পানিটি বার্মিজ ভাষাটা ভালো রপ্ত করতে পারে না। তুন বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, ফেসবুকের বার্মিজ কনটেন্ট সম্পর্কে ধারণা নেই। তারা এর জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়। এর জন্য কনটেন্ট আমাদের ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিতে হয়।’

ফেসবুক জানিয়েছে, সঠিক অনুবাদের জন্য তাদের পদ্ধতি উন্নয়নের কাজ চলছে। তারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে ঘৃণ্য বক্তব্য শনাক্ত করে থাকে।

নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ১২ নভেম্বর, ২০১৭। ছবি: রয়টার্স
নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ১২ নভেম্বর, ২০১৭। ছবি: রয়টার্স
মিয়ানমারে অনেকের কাছে ফেসবুকই হলো ইন্টারনেট। তারা অনলাইনে শুধু এই সাইটটি ব্যবহার করে। কিন্তু এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে যখন সাম্প্রদায়িকতা ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছিল, তখন এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি।

মিয়ানমারে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ডেভিড মাডেন বলেন, ২০১৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যানলো পার্কে ফেসবুকের সদর দপ্তরে তিনি এ নিয়ে কথা বলেছিলেন। এক ডজন লোক সশরীরে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ভিডিওতে অনেকে যোগ দেন। কিন্তু তারা প্রয়োজনীয় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

ম্যাট শিসলার মিসিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁরও একই ধরনের অভিযোগ। ২০১৪ সালের মার্চ ও ডিসেম্বরে তিনি ফেসবুকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনে, ই-মেইলে অনেকবার যোগাযোগ করেছেন। ভুয়া অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্নভাবে মিয়ানমারে কীভাবে ঘৃণ্য বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ছে, তা তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। পেশ করেছেন সুনির্দিষ্ট উদাহরণ। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

শিসলার ঘৃণ্য বক্তব্য ও অন্যান্য বিষয়ের বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই ঠেকানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলেন। সেখানে মানবাধিকারকর্মী, গবেষক ও এশিয়া প্যাসিফিক পলিসির প্রধানসহ বিভিন্ন কোম্পানির কর্মীরা যোগ দেন। তাঁরা একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, মিয়ানমারে একজন সহায়তাকর্মীর ছবি পোস্ট করে নিচে লেখা হয় ‘জাতির বিশ্বাসঘাতক’। এটি শেয়ার হয় ২২৯ বার।

এ নিয়ে ফেসবুকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। ফেসবুক জবাবে বলে, এই ছবি তাদের কমিউনিটি স্টান্ডার্ড লঙ্ঘন করেনি। এরপর ছয় সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় আবার অভিযোগ করা হয়। ফেসবুক অবশেষে ছবিটি তুলে নিলেও ক্যাপশনটি সরিয়ে নেয়নি। ফেসবুক জানায়, অভিযোগ ছবিটি নিয়ে ছিল, ক্যাপশন নিয়ে নয়। পরে অবশ্য ক্যাপশনটিও সরানো হয়।

এর দুই মাস পরে এক উদাহরণ টেনে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ম্যাডেন বলেন, ফেসবুকে সু চি মাথায় স্কার্ফ পরে আছেন, এমন একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। সেই ছবিটি ছিল ফটোশপ করা। ওই ছবিতে মনে হয়েছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী এই নারী মুসলিমদের প্রতি সমব্যথী, যা মিয়ানমারে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফেসবুকের প্রধান সমস্যা হলো সময়মতো এই ঘৃণ্য বক্তব্য সরাতে না পারা।

ফেসবুক মিয়ানমার থেকে ঠিক কতটা ঘৃণ্য বক্তব্য পেয়েছ, তা প্রকাশ করেনি। বিশ্বজুড়ে তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২২০ কোটি। প্রত্যেক সপ্তাহে তারা লাখ লাখ অভিযোগ পেয়ে থাকে। সাবেক কয়েকজন পর্যবেক্ষণকারী জানিয়েছেন, কনটেন্টে ভুল থাকলেও ব্যবহারকারীদের ছাড় দিতে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বলা হয়, সন্দেহ থাকলেও ব্যবহারকারীকে বেশির ভাগ সময় ছাড় দিতে হবে।

একজন বলেছেন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগ সামাল দিতেই তারা নাজেহাল অবস্থায় পড়েন। অনেক সময় একটা পোস্ট রাখা–না রাখার সিদ্ধান্ত নিতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় পান। সেখানে খুঁজে খুঁজে ঘৃণ্য বক্তব্য বের করার সুযোগ থাকে না।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুক রয়টার্সকে বলে, ‘আমরা মূল্যায়নকারীদের কখনো বলি না যে তাদের একতা পোস্ট পরখ করে দেখতে হবে…আমরা যতটা সম্ভব সময় দিয়ে মূল্যায়ন করতে উৎসাহিত করি।’ তবে এ মুহূর্তে মিয়ানমারে তাদের কোনো কর্মী নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা নেই।

ফেসবুকের এশিয়া-প্যাসিফিক পলিসির পরিচালক মিয়া গার্লিক এক বিবৃতিতে রয়টার্সকে বলেছেন, ‘সুশীল সমাজ, একাডেমিকস এবং বিভিন্ন গ্রুপ যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে পদক্ষেপ নিতে আমরা খুব বেশি সময় নিয়েছি। আমরা চাই না ফেসবুক কোনোভাবেই ঘৃণা বা সহিংসতা ছড়ানোর মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হোক। এটা সত্য যে পুরো বিশ্বে বিশেষ করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো বা বাড়িয়ে তুলতে আমাদের সার্ভিস ব্যবহৃত হয়েছে।’

Powered by themekiller.com