অনলাইন ডেস্ক :যে কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৯৭৬ সালে সম্পন্ন হয়েছিলো কর্নেল আবু তাহেরের ‘প্রহসনের’ বিচার, সেখানেই এখন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচার করার জন্য অস্থায়ী আদালত বসানো হয়েছে। পুরো ঘটনাটিকে ‘আয়রনি’ হিসেবে উল্লেখ করলেন কর্নেল তাহেরের ভাই ড. আনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, এটা আসলে আয়রনি (উপহাস)। যদিও খালেদা জিয়া কর্নেল তাহেরের তথাকথিত বিচার বা কারাঅভ্যন্তরে ক্যামেরা ট্রায়ালের জন্য এবং তার ফাঁসি হওয়ার জন্য নিজে দায়ী ছিলেন না, কিন্তু তিনি বা তার দল পরে কখনো এটাকে ডিজওন করেননি। মানে তারা সবসময় জিয়ার এই অপকর্মকে সমর্থনই করেছেন। সেই খালেদা জিয়ারই আজ কারাগারের ভেতরে বিচার হচ্ছে।
তাহেরের সঙ্গে ওই মামলাতেই অভিযুক্তের তালিকায় থাকা অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ৭৬ সালে যখন এখানে বিচার হয়েছিল তখন এটা কেন্দ্রীয় কারাগার ছিল এবং তখন সেখানে কয়েক হাজার বন্দী ছিল। এখন সেটা পরিত্যক্ত আর সেই অর্থে কারাগার নয়। যদিও সেখানে তাকে রাখা হয়েছে তবে সেভাবে বলা যাবে না যে, কারাগারের ভেতরে তার বিচার হচ্ছে।
তিনি বলেন: আমি খুব খুশি হতাম যদি তার বিচার উন্মুক্ত স্থানে হতো। আমি এরকম কিছু সমর্থন করবো না যে বেগম খালেদা জিয়ার বিচার কারাগারের ভেতরে হোক। তিনি তো গত সাত মাস ধরে হাজিরাও দিচ্ছেন না। বিচার কার্যক্রমকে দীর্ঘসূত্রতায় ফেলে দিয়েছেন। সেসব বিবেচনায় রেখেই হয়তো সরকার বলছে, যেখানে তিনি আছেন সেখানেই তার বিচার হবে। সেখানে একটি কক্ষে তার বিচার হচ্ছে। তবে তার বিচার উন্মুক্ত জায়গায় হওয়া উচিত।
১৯৭৬ সালে ১৭ জুলাই’র রায়ে কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া বিচারের প্রতিবাদ করে তাহের বলেছিলেন, এই বিচার আমি মানি না। ইতিহাস বড়ই নির্মম।
‘প্রহসনের’ বিচারের তিনদিন পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেই কর্নেল তাহেরের ফাঁসি কার্যকর হয়। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিতে একই জায়গায় জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিচার বসেছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কর্নেল তাহের সম্মুখ সমরে এক পা হারান। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহিরা জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে। সে ধারাবাহিকতায় জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু, বিপ্লব সংঘটিত করার অপরাধে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের ও তার রাজনৈতিক দল জাসদ নেতৃত্বকে বিচারের মুখোমুখি করে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার।
তাহেরকে সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২২ মার্চ হাইকোর্ট সামরিক আদালতে কর্নেল তাহেরের ফাঁসির রায়কে অবৈধ ঘোষণা করেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি এতদিন চলছিল কারাগার থেকে কয়েকশ গজ দূরে বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কারা অধিদপ্তরের মাঠে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে। ৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তা পুরনো কারাগারের ভেতরে স্থানান্তর করে আইন মন্ত্রণালয়।
নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ভেতরে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে বুধবার মামলার শুনানিতে খালেদা জিয়া বলেন, এই আদালতের উপরে তার কোনো আস্থা নেই। আদালত যা ইচ্ছা রায় দিক, যত দিন ইচ্ছা সাজা দিক।