বিশেষ প্রতিনিধিঃ
তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের পদ থেকে বাদ দিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অনুপস্থিতিতে আজ দলের স্থায়ী কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসায়। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির পাঁচজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলেন একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, দলের আপাতত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রয়োজন নেই। বেগম খালেদা জিয়া জেলে থাকলেও তিনি যে দল পরিচালনা করতে পারবেন না, এরকম কোন বিধান বিএনপির গঠনতন্ত্রে নেই। কাজেই, বেগম খালেদা জিয়াই চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আপাতত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই বলে বৈঠকে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, দলের পুন:গঠন এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যদের যে শুন্য পদ রয়েছে তা পূরণ এবং নতুন মহাসচিবের ব্যাপারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলবেন। যেহেতু খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের আপাতত অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, এইজন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নাইকো দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়া হাজিরা দিতে গেলে, তখন মওদুদ দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। সেখানে বেগম খালেদা জিয়া যাকে মহাসচিব হিসেবে মনোনিত করবেন এবং যাদেরকে স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনিত করবেন, তাদেরকে স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পর্যন্ত দলের কাউন্সিল দরকার নেই এবং বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী দল চলবে। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, বেগম খালেদা জিয়ার মামলাগুলো এখন দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্য কোর্টে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ করা হবে এবং সেখানে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে যে, তারেক জিয়ার ওপর ক্ষোভ এবং অনাস্থা থেকেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পরই তারেকের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্য, দলের বিভক্তি সৃষ্টি এবং দলের মধ্যে নানা সমস্যা তৈরীর অভিযোগ উত্থাপন হয়েছিল। সম্প্রতি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে তিনি ইমেইল বার্তা পাঠান। যেখানে বলা হয়, হয় তারা কাজ করবেন নয় পথ ছেড়ে দিবেন। এই বার্তার পরে দলের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং দলের শীর্ষ নেতারা যেমন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, ড, মঈন খানরা তারেক জিয়ার নেতৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। যদিও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখনো তারেক জিয়ার পক্ষে বলে জানা গেছে। তিনি লন্ডনে গিয়েছিলেন তারেক জিয়ার সাক্ষাতের জন্য। লন্ডনে যখন তারেক জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের বৈঠক হয়েছে, সেই সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের এই বৈঠক তাৎপর্য বহন করে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপিতে বিভক্তি আরও প্রকট হয়ে উঠলো বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।
এই বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বিএনপির কোন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদ নেই। কাজেই এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বিএনপি মূলত তারেক জিয়ার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করলো। এরফলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। বিএনপিতে সিনিয়র নেতারা কেউই তারেক জিয়ার নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছিলেন না। তারা মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারের পর ঝুঁকি নিয়ে হলেও তারেক জিয়ার দেশে আসা উচিত ছিল। বিদেশে থেকে তিনি যেমন একের পর এক নির্দেশ এবং আদেশ দেন, সেগুলো দলের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠছে। তবে বিএনপিতে এখনো তারেক জিয়ার পক্ষে একটা বিরাট শক্তি রয়েছে। যারা নতুন তৃনমুল এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ। এই শক্তিটা স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত কিভাবে নিবেন, সেটাই দেখার বিষয়। এরফলে বিএনপিতে বিভক্তি আরেকধাপ এগিয়ে গেল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে।