Breaking News
Home / Breaking News / শিক্ষার্থীদের উচ্ছৃঙ্খলতা কাম্য নয়: প্রধানমন্ত্রী

শিক্ষার্থীদের উচ্ছৃঙ্খলতা কাম্য নয়: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের বিষয়ে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ভাংচুরের প্রেক্ষাপটে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে নতুন ৭ মার্চ ভবন উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এই সতর্কবার্তা দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উচ্ছৃঙ্খলতা কখনও গ্রহণযোগ্য না। সবাইকে একটা নিয়ম মেনে চলতে হবে।

“শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে হলে; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে সেরকম আচরণ করতে হবে। সেটাই আমরা আশা করি, জাতি আশা করে।”

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত এপ্রিল মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়ি ভাংচুর হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এতে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

গত অগাস্ট মাসে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে যারা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সরকার প্রধান।

শনিবারের অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষায় অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম খরচের কথা শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “শিক্ষায় আমরা যা খরচ করি; এটাকে কখনও আমরা খরচ হিসাবে মনে করি না। আমি মনে করি, এটা আমরা বিনিয়োগ করছি, যা আমাদের দেশ গঠনে কাজে লাগবে, আমাদের দেশের মানুষ উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অটোনমি আছে। সাধারণ ক্ষেত্রে বলা যায় যে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের উপার্জনে চলবে। আমাদের এখানে যারা শিক্ষার্থী, তাদের ভাবা উচিৎ যে পৃথিবীর মধ্যে মনে হয়, সব থেকে কম খরচে উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশে দেওয়া হয়ে থাকে। শত ভাগ খরচ কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে, এটা কিন্তু পৃথিবীর কোনো দেশে আছে বলে আমি জানি না।
“আমরা অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তো খোঁজ খবর রাখি। কিন্তু, আমরা বাংলাদেশে সেটা করি না। এটার মর্যাদাটাও তাদেরকে দিতে হবে।”

শিক্ষকদেরও শিক্ষাদানের বিষয়ে আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তার ধারণের আহ্বান জানান শিক্ষার্থীদের।

“শিক্ষার্থী যারা, তাদেরকেও উপযুক্তভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সেই শিক্ষাটা শুধু কেতাবী শিক্ষা না, জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে সর্বক্ষেত্রে শিক্ষা নিতে হবে।”

রোকেয়া হলের নতুন ভবনে এক হাজার ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা হবে। প্রধানমন্ত্রী ভবনটি উদ্বোধন করে এই ভবনে স্থাপিত ‘৭ মার্চ জাদুঘর’ ঘুরে দেখেন।

এই ভবন ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছাত্রীদের যত্নবান হওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই ভবনটা যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে; অবশ্যই তাদের এই নজরটা দিতে হবে।

“আমাদের বাঙালিদের একটা বদভ্যাস হচ্ছে; খেয়ে টেয়ে নিয়ে টাস করে ছুড়ে ফেলে দেওয়া। এই বদভ্যাসগুলো পরিহার করতে হবে। আজকে বিদ্যুৎ আছে বলে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা, এটা যাতে না হয়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা রোকেয়া হলের ছাত্রী ছিলেন।

তিনি বলেন, “রোকেয়া হল তো আমরাই হল। সেই হলেই এই ভবনটি নির্মিত হল। আমি সত্যিই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে গর্ববোধ করি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে কর্মচারীদের আন্দোলনে যোগ দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বহিষ্কৃত হওয়ার বিষয়টিও স্মরণ করেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “একটু দুঃখ আছে মনে। আমার বাবা পড়াশোনা শেষ করতে পারে নাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।”

“আর, আমার ভাগ্যেও জুটেছিল এটা; ৭৫’এ যখন র্জামানিতে চলে যাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে। মতিন সাহেব ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। আমি মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছিলাম; তা আর সমাপ্ত করতে পারি নাই। আমার সেই শিক্ষা অধরাই থেকে গেল। এই দুঃখটা সব সময় আমার মনে আছে, আমার মনে থাকবে।”

তবে সম্মানসূচক ‘অনারারি ডিগ্রি’ দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পিতার বিশ্ববিদ্যালয়। আমার ভাই শেখ কামাল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। এভাবে আমাদের পরিবারের প্রায় সকল সদস্যই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। শেখ ফজলুল হক মনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। শেখ সেলিম (শেখ ফজলুল করিম সেলিম) সেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমরা সবাই প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য নাসরিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সামাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এবং রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা বক্তব্য রাখেন।

Powered by themekiller.com