Breaking News
Home / Breaking News / উন্নয়নের মহাযাত্রায় চ্যালেঞ্জ : ভাবতে হবে এক্ষুনি ——– ড. শামসুল আলম

উন্নয়নের মহাযাত্রায় চ্যালেঞ্জ : ভাবতে হবে এক্ষুনি ——– ড. শামসুল আলম

উন্নয়নে বিশ্বে চমক সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নয়ন, অগ্রযাএা আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে আমাদের আজকের বাংলাদেশ। গত এক দশকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নের যে কোনো সূচকের বিচারে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বর্তমান সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় যেমন মোট দেশজ আয়, প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়, কর্মসংস্থান, প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং সামাজিক খাতে দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু নিরাপত্তায় অগ্রগতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সরকারের সাফল্য আজ অভূতপূর্ব। তারই ধারাবাহিকতায় ১ জুলাই, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিু-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৭ মার্চ ২০১৮, বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার প্রাথমিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন ও স্বীকৃতি এটি।

বর্তমান সরকার পরিকল্পিত ও সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘রূপকল্প : ২০২১’ ঘোষণা করে। এ ‘রূপকল্প : ২০২১’ সামনে রেখে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২১)’ প্রণয়ন করা হয়। এই ‘রূপকল্প : ২০২১’-এর উল্লেখযোগ্য লক্ষ্যগুলো হল- বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা এবং দারিদ্র্যের হার ১৩.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে মাথাপছিু আয় ২০০০ ডলারে উন্নীত করা; ২০২১ সালের মধ্যে বাণিজ্য অনুপাত (আমদানি ও রফতানি) জিডিপির ৬০% এ উন্নীত করা। আর এই ‘রূপকল্প : ২০২১’-এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে আজকের এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা।

বাংলাদেশ ১৯৯০-এর পর সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধিতে উন্নয়নশীল দেশের গড় হারের তুলনায় অনেক এগিয়েছে। সরকারের দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ২০০৯-২০১৮ সময়কালে গড়ে ৬.৪৫ শতাংশ হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮৬%। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের বর্তমান মাথাপিছু আয় বেড়ে ১,৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৪৩ ডলার অর্থাৎ এ সময়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে তিনগুণের বেশি। দারিদ্র্যের হার অর্ধেক হয়ে গেছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২১.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ৫.৫৬ ও২০.৫৮ শতাংশ, সেটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৭.৯৭ ও ২৩.২৬ শতাংশে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে জিডিপির ৩১.২৩ শতাংশ। মোট রাজস্ব আয় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৪৪.২ হাজার কোটি টাকা হতে প্রায় ৫.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৪১.৭৬ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩.৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেষে ৯.৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩.০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৫.৭৮ শতাংশে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও খাদ্য মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাতে ২০১০-১১ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ১০.৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। কার্যকর সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরবর্তী অর্থবছরগুলোতে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়নবান্ধব ও দারিদ্র্যবিমোচনে সহায়ক বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে দারিদ্র্য দিন দিন কমে আসছে। এডিপি বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ প্রয়াস নেয়া হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের আর্থিক অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ।

মানবসম্পদ উন্নয়নে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ১৮৯টি দেশের মধ্যে লাভ করেছে ১৩৬তম স্থান। ২০১৭ সালের সূচকে ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৯তম। অর্থাৎ এক বছরেই তিন ধাপে এগিয়েছে। মাথা পিছু আয়, গড় আয়ুসহ বিভিন্ন মাপকাঠিতে উন্নতির কারণে এ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সূচক অনুযায়ী স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বৈষম্য ও দারিদ্র্যদূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ উন্নতি করেছে।

উন্নয়

Powered by themekiller.com