ষ্টাফ রির্পোটারঃ
বিএনপি-জামাত জোট ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করে। সেসময় এই জোটের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ লালন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের জন্য সন্ত্রাসের প্রয়োগ ইত্যাদি নানা অভিযোগ উঠেছিল। বিএনপি-জামাতের ওই অপশাসনের কারণেই ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত অনির্বাচিত একটি সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। দুই বছর ওই অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকার পর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিএনপির অনেক দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছিল। অনেককে গ্রেপ্তারও করেছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের অনেকেই সাজা ভোগ করেছেন। এদের মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে থাকা বেশ কিছু ব্যক্তিত্ব এখনো জেলে আছেন। এই ব্যক্তিরা শুধু বিএনপিকেই বিপদগ্রস্ত করেনি বরং বাংলাদেশকেও জঙ্গিবাদের রাজত্বে পরিণত করতে চেয়েছিল। বর্তমানে জেলে বন্দি এমন অনেকেই বিএনপি-জামাত নেতা ক্ষমতায় আসার প্রতীক্ষায় আছেন। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় এলেই তাঁদের মুক্তি মিলবে। এই তালিকার শীর্ষে যাঁরা আছেন তারা হলেন:
১. বেগম খালেদা জিয়া: স্বৈরাচারের পতনের পর নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হয়েছিল তাকে দূষিত করেছিলেন তারেক জিয়া। কিন্তু তারেক জিয়াকে যিনি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন এবং যার অন্ধ মাতৃস্নেহে তারেক বেড়ে উঠতে পেরেছিলেন তিনি হলেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির নেতারাও একান্ত আলাপচারিতায় স্বীকার করেন যে, বেগম জিয়ার প্রশ্রয়েই তারেক জিয়া অপকর্মের পাহাড় গড়ার সাহস পেয়েছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন তারেক জিয়া একটি সমান্তরাল সরকার গঠন করেন। ওই সরকারটি হাওয়া ভবন থেকে পরিচালিত হতো। বেগম জিয়া হাওয়া ভবনকে শুধু পৃষ্ঠপোষকতাই দেন নি, বরং ওই ভবনের সমস্ত কর্তৃত্ব তিনি মেনে নিয়েছিলেন। এ কারণে অনেকেই বেগম জিয়াকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাড় করান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুটি মামলায় তিনি দণ্ডিত হয়েছেন। এর একটি হলো জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলা। অন্যটি জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলা। দুটি মামলার বিবরণী পড়লে দেখা যায় যে, শুধুমাত্র পুত্র তারেক জিয়ার কারণেই বেগম জিয়া মামলাগুলোতে ফেঁসেছেন। তারেক জিয়ার অবৈধ কর্মকাণ্ডগুলোকে জায়েজ করার জন্য বা বৈধতা দেওয়ার জন্যই খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময় বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। বিভিন্ন মামলা থেকে এটা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয়। খালেদা জিয়া ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে বর্তমানে নাজিমুদ্দিন রোডের একটি বিশেষ কারাগারে বন্দী আছেন। বিএনপি-জামাত যদি আবার ক্ষমতায় আসে তবে বেগম খালেদা জিয়া যে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসবেন তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিএনপি প্রকাশ্যেই বলছে, তারা এবার নির্বাচন করছে বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য।
২. গিয়াস উদ্দিন আল মামুন: গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ছিলেন তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারেক জিয়ার যত অপকর্ম ও দুর্বৃত্তায়ন সবকিছুর অংশীদার ছিলেন তিনি। তারেকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং মদদেই তিনি ব্যবসায় জগতে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেসময় মামুনই সমস্ত টেন্ডার এবং সমস্ত ব্যবসায়ের কমিশন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিএনপি- জামাতের পাঁচ বছরের শাসনামলে তিনি তারেক জিয়াকে সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন। সেসময় অবৈধ সম্পদের মাধ্যমে ওয়ান স্পিনিং, ওয়ান কম্পোজিট টেক্সটাইল, চ্যানেল ওয়ানসহ রাতারাতি নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বিভিন্ন মামলায় গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ৮৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করে। অবৈধ সম্পদ অর্জন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলায় এখনো তিনি কারাগারেই আছেন। বিএনপির মনোনয়ন তালিকা পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় দলটি পুরোনোদের আঁকড়ে রাখার নীতি গ্রহণ করেছে। কাজেই দলটি যদি কোনোভাবে ক্ষমতায় আসে তবে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের মতো দুর্নীতিবাজরা আর বেশিদিন জেলে থাকবেন না, এটা অনুমান করাই যাচ্ছে।
৩. লুৎফুজ্জামান বাবর: ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামলে লুৎফুজ্জামান বাবর ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি তারেক জিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অনুচরদের একজন ছিলেন। তার মাধ্যমেই তারেক জিয়া বাংলাদেশে জঙ্গি নেটওয়ার্ক, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের অনুপ্রবেশ, এগুলোর ব্যবসা এবং যাবতীয় অপকর্মগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় লুৎফুজ্জামান বাবর অপরাধী প্রমাণিত হয়েছেন এবং তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। শুধু ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলাই নয়, ১০ ট্রাক অবৈধ অস্ত্র মামলাতেও তার ভূমিকা রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন অপরাধ, অন্যায় এবং বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের লালনের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিতর্কিত ভূমিক
৫. দেলওয়ার হোসেন সাইদী: ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়। সেই বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধী দণ্ডিত হয়েছেন। বেশ কয়েকজনকেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পিরোজপুরের যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাইদীকেও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আপিল বিভাগে এসে সেই দণ্ড হ্রাস করে আমরণ কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ কারণে তিনি এখন কারাগারেই রয়েছেন। কিন্তু বিএনপি জামাত জোট যে যুদ্ধাপরাধীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি এবারের মনোনয়নেই তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। কারণ পিরোজপুরের একটি আসন থেকে সাইদীর ছেলেকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, বিএনপি দেলোয়ার হোসেন সাইদীকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। সাইদীর যত অপকর্ম আছে তার দায় বিএনপি নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। কাজেই আসন্ন নির্বাচনে যদি বিএনপি জয়ী হয় তবে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাইদীর জেল থেকে বেরোনো হবে সময়ের ব্যাপার মাত্র।