Breaking News
Home / Breaking News / শরণার্থী শিবিরে নেওয়া হলো ভারত থেকে আসা ৪৩২ রোহিঙ্গাকে

শরণার্থী শিবিরে নেওয়া হলো ভারত থেকে আসা ৪৩২ রোহিঙ্গাকে

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ
ভারত থেকে আসা ৭২ রোহিঙ্গা পরিবারের ৪৩২ সদস্যকে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে নেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে তাদের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং চাকমারকুল ওমান রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নেওয়া হয়। বেশ কিছু দিন ধরে তারা তমব্রু শূন্যরেখায় অবস্থান করছিল বলে জানা যায়।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাকমারকুল ওমান রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের প্রবেশমুখে সকাল থেকে অবস্থান করছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) জনা বিশেক কর্মী। তারা ভারত ফেরত রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে অপেক্ষা করছিলেন।
দুপুর ২টায় ভারত ফেরত রোহিঙ্গা নাগরিকদের বহন করা মিনিবাসগুলো ওমান রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের প্রবেশমুখে পৌঁছায়। সঙ্গে ট্রাকভর্তি মালামালও আনা হয়। বাসগুলো ক্যাম্পে পৌঁছালে ইউএনএইচসিআর কর্মীরা প্রতিটি বাসে উঠে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তালিকাভুক্ত করে নামান। কর্মীরা রোহিঙ্গাদের পৃথক কয়েকটি দলে ভাগ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে নিয়ে যান।
গাড়ি থেকে নেমে ভারত থেকে আসা রোহিঙ্গা সলিম উল্লাহ বলেন, ‘আমরা ভারতের হায়দ্রাবাদের রোহিঙ্গা শিবিরে থাকতাম। কিন্তু সেখানে মিয়ানমার সরকারের সহযোগিতায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) নিতে বাধ্য করছে। তাই আমরা এনভিসি কার্ড নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ভারত ছেড়ে পালিয়ে আসি।’
জম্মু-কাশ্মীর থেকে আসা রোহিঙ্গা নারী খুরশিদা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ আট বছর ধরে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে সেখানে রোহিঙ্গাদের মতের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক এনভিসি কার্ড নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাই আমরা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছি।’
খুরশিদা বলেন, ‘বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ঢুকে অনেক কষ্টে কক্সবাজার পর্যন্ত পৌঁছেছি। এখানে প্রথমে আমাদের ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়েছিল। তারপর আজ সেখান থেকে ক্যাম্পে আনা হয়েছে।’ ট্রানজিট পয়েন্টে ভারত থেকে আসা শতাধিক পরিবার থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
এ সময় ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে আসা ভারত ফেরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে সাংবাদিকদের বাধা দেন ইউএনএইচসিআর কর্মীরা। ওমান রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের প্রবেশমুখে অবস্থানরত ইউএনএইচসিআরের ইউনিফর্ম পরা একদল কর্মী এগিয়ে এসে কোনো সাংবাদিক রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক ওই সংস্থার ডেভিড নাম পরিচয় দেওয়া এক কর্মী সাংবাদিকদের রোহিঙ্গার ছবি না তুলতে এবং সেখানকার অবস্থান ছাড়তেও বলেন। তিনি বলেন, এখানে সাংবাদিকরা থাকতে পারবেন না, এখানে সাংবাদিকের কোনো কাজ নেই।
ভারত ফেরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইউএনএইচসিআর কর্মীদের আচরণে এবং কর্তব্যরত সাংবাদিকদের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলতে বাধা দেওয়ায় অনেকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
হোয়াইক্যং ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, ‘‘পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ভাষ্য বাদ দিয়ে, খতিয়ে দেখা দরকার ভারতে থাকা রোহিঙ্গাদের এ দেশে নিয়ে আসতে কোনো সংস্থা বা গোষ্ঠীর তৎপরতা ছিল কি না। না হয় হঠাৎ করে, ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা কেন বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।’
আবদুর রহিম বলেন, ‘পৃথিবীর সব রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে ভিড় করছে। মনে হচ্ছে রোহিঙ্গারা এখন প্রত্যাবাসনের কথাই ভুলে গেছে। রোহিঙ্গাদের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত দেশি-বিদেশি সংস্থার কার্যকলাপে ধারণা করছি, রোহিঙ্গারা এ দেশে যুগ যুগ ধরে থাকবে। এটা বাংলাদেশিদের জন্য কতটুকু নিরাপদ?’

Powered by themekiller.com