কবিতা
সব সুখের প্রহর
।। গণেশ পাল ।।
এখনো নিশুতি আসে —-
এখনো স্মৃতির বালুচরে উঁকি দেয়
এক একটি সুখের মৌলপ্রহর আমার
যেখানে শূন্য দাবিগুলোর জন্য
আরো রক্তহীন করে আমাকে ।
ওগো আমার সুখেরা , প্রতিটি মুখ
ধুক ধুক করা বুকের স্পন্দনে আর কত
সুন্দর আমার সত্তা ছুঁয়ে যাবে ?
আর কত প্রজ্জ্বলিত পালকে সাজাবে
নির্বাক সময়ের পাঁজরে পাঁজরে ?
: ৩০/১১/২০২২ তাং ।
——————————————-
. ঘরে ফিরে যা….
বনানী সিনহা
*************************
এ কোন্ মোহে? মেতেছিস তুই!
ওরে অবুঝ মন ঘরে ফিরে যা..।
সাঙ্গ কর; এহেন অন্যায় খেলা।
জুটবে কপালে যন্ত্রণা গঞ্জনা।
সুখ পাখি দেখ তোর উঠোনে
ডানা ঝাপটায় ছটফটিয়ে..।
সর্বনাশা কাম অনলে; জ্বলছিস?
আসে কি শান্তি ? প্রেম ঠকিয়ে!
সাময়িক ভ্রমে আছিস রে ডুবে
পরের ঘরকে ভাবছিস সুখ ?
মোহ ঘুম ভাঙলেই বুঝবি তুই
এই সুখই তোর বড়ো অসুখ।
পরের তরে পরের ঘরে..
বিভোর থাকিস রঙিন স্বপ্নে।
কাম যে জীবের বড়ো শত্রু
পরাজয় ঘটবেই মোহ ভগ্নে।
অনুচিত কামে অনুচিত প্রণয়
ক্রমশ ধাবমান তিমির পাথারে।
তৃষ্ণা মেটেনা এমন লালসার
সময় থাকতে বেঁধে নে তারে।
হীরা বেচিস না ছাইয়ের দামে
পরকীয়ার পিঙ্গলে আর পুড়িস না।
একূল হারিয়ে ওকূলেও ভরাডুবি!
যা রে তুই আপন ঘরে ফিরে যা…।
****************
রচিত-২০শে নভেম্বর ২০২২ নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্র।
——————————————–
#দুর্বলতা
আমি দুর্বল বলেই হয়তো
আমার মধ্যে কোন দুর্বলতা নেই,
বয়েসের সাথে সাথেই শেষ হচ্ছে অভিমানী দুর্বলতা,
মৃত্যুর কাছাকাছি এলে নষ্ট হয়ে যায় শাশ্বত নশ্বরতা,
দুর্বলতা শব্দও বড্ড দুর্বল সেখানে।
বিজ্ঞ লোকের মতে –
ভালোবাসা আর দুর্বলতার বয়েস হয় না।
অনিচ্ছা যন্ত্রণায় বেঁকে যাওয়া চাঁদ জানে
ভালোবাসা আর দুর্বলতা সমার্থক শব্দ নয়।
✍️ তাপস
——————————————–
কবিতা
শিরোনাম ঃ কষ্টে ভেজা অশ্রু
কলমেঃ জেবুন নাহার
তারিখঃ ৩০/১১/২২
হিমেল বাতাসে ভাঙা বেড়ার পথ দিয়ে
বস্তিতে হানা দেয় শীত নামক
আর এক কষ্ট, কুঁকড়ে যায় আছমতারা,
এপাশ ওপাশ করে আরও কুঁকড়ে শুয়ে থাকে
ছেঁড়া কম্বলে শীত মানেনা
ঠোঁট দুটো কাঁপে।
নতুন কম্বল কিনে দেবে বলে
সেই যে ছেলেটা গেলো
আর ফিরে এলো না।
কোথাও কি হারিয়ে গেল?
নাকি কেউ তাকে মেরে ফেললো?
পথে-ঘাটে কত না দুর্ঘটনা
ওঁৎ পেতে থাকে,
কত চিন্তা আনাগোনা করে
মায়ের মনে।
এভাবেই রাত পোহায়
দূরে সূর্যটা উঠতে দেখা যায়
ক্রমশ শীত কমতে থাকে,
বেড়ে যায় খিদের জ্বালা।
মোড়ের দোকান থেকে
একখানা শুকনো রুটি
কিনে খায় আর
দুচোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে
কষ্টে ভেজা অশ্রু।
রচনাকালঃ ২৯/১১/২২
——————————————
“দাদুর মুখে_শেখ মুজিবুর রহমান”
ইজি চেয়ারে পুরনো শরীরটা হেলান দিয়ে হুক্কায় তামুক টানছে দাদু ভাই,
আশির-এক বেশি বুড়ো,পাওয়ারফুল কালো চশমার ফ্রেমে কল্পনায় মগ্ন চোখদুটো তাঁর।
আদি জমানার শক্ত বলিষ্ঠ শরীর, বয়সের ভাড়ে নুয়ে পরলেও এখনও সেই শক্তপোক্ত আদিমতার ছাপ কিছুটা কুঁজে যাওয়া থকথকে মেরুদণ্ড দেখলে বুঝা যায়।
সুযোগ পেলে ছোট বড় সবাইকে শাসায়,
শেষে চশমার ভেতর কল্পনায় মগ্ন চোখের গল্প বলতে শুরু করে,
তখনই সেই গল্প শুনতে সবাই এসো জড়ো হতো।
দাদু বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন,বসার ঘর থেকে তাকালেই দেখা যায় তাঁর শয়নকক্ষে সারি সারি সাজানো অনেকগুলো বই,
ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থসহ ছোটবড় বিভিন্ন ইতিহাসভিত্তিক।
শুধু বইয়ের বিশ্লেষিত ইতিহাস বা গল্প নয়,
জীবনের পেরিয়ে আসা কঠিন বাস্তব ও স্মৃতি বিস্মৃতির জড়জড়িত সুখ দুঃখের কথাও তুলে ধরত অবিরত।
এমন কল্পনা-মগ্ন সময় একদিন দাদুর পাশে বসে আছি,
হুক্কায় তামাক সাজিয়ে দিতে দিতে মিঠাই শেষ হয়ে গেল কিনা জানতে চেয়ে দাদু’কে জিজ্ঞেস করি,
উত্তরে দাদু বললেন “ক’দিন আগের একসেড় কেনা, এখনও বাকী আছে,দু-তিন বেলা তো যাবেই”
দাদু মিঠাই খেতে খুব পছন্দ করতেন,প্রতিবার ভাত খাওয়ার শেষে মিঠাই দিয়ে ভাত মিশিয়ে খেত,
ওটা না খেলেই নাকি খাবার যথেষ্ট হয় না,খেতেই হবে।
মিঠাই শেষ হলে প্রায়ই সময় আমিই কিনে এনে দিতাম,
মিঠাই এনে দিলেই দাদুর কাছথেকে যেকোনো আবদার করতে পারি,
বিশেষ করে গল্প শুনার জন্য মনটা যখন ছটফট করতো,তখন একসেড় আখের মিঠাই কিনে এনে দাদুকে দিয়ে গল্প বলার আবদার করতাম।
তাঁর সবকটা নাতি নাতনিদের মধ্যে দাদু আমাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন,বিশ্বাস করতেন এবং শাসনও করতেন বেশি বেশি,
কারণ,দাদুর সুখ দুঃখের কথা এবং তাঁর মগ্ন কল্পনার গল্প ও জীবনের কথাগুলো একমাত্র আমিই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতাম এবং মন থেকে উপলব্ধি করতাম বলে,
তাঁর বুড়ো ছেলেমানুষীর জগতে আমিই একমাত্র তাঁর ভক্ত।
মিঠাইয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই দাদু হঠাৎ খুব জুড়েস্বরে হেসে উঠলেন,দাদু এমনই,
কল্পনায় মগ্ন থাকতে থাকতে হঠাৎ হাস্যকর স্মৃতির কথা মনে উঠলেই হঠাৎ করে খুব জুড়ে স্বরে হেসে উঠে।
আমার দিকে দৃষ্টি ছুড়ে তাঁর সেই হেসে উঠার কারণ বলতে শুরু করলেন,
“জানিস্,,একদিন মিঠাই খেতে না পেয়ে খাবারের পর একমুঠো চিনি মুখের ভেতর পুরে দিয়েছিলাম”
তারপর কিছুটা উদাস সুরে দাদু বলতে শুরু করলেন_
সালটা ঠিক মনে নেই,দাদুর তখন মধ্য বয়স,
পুরান ঢাকায় বিশাল একটা জনসভা হবে,
তাই শেখ মুজিবের তরফ থেকে দাদুকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল,
কারণ, দাদু ছিলেন কাপ্তাইয়ের বাজ্যতলী মৌজার হেডম্যান।
উক্ত জনসভায় ম্রো’দের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে নিজ গ্রাম থেকে একটা টিম গঠন করে নিয়ে যাবার দ্বায়িত্ব দাদু ভাইয়ের,
ম্রোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, নাচ,গান এবং বাঁশি বাজানো উপভোগ করবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সবকিছুই ঠিকঠাক করার পর সমস্ত টিম নিয়ে পরেরদিন ঢাকায় রওনা দিলো ওরা,
যাবার সময় নিজের বাগান থেকে অনেকগুলো লিচু শেখ মুজিবের জন্য উপহার স্বরূপ নিয়ে গেলেন দাদু ভাই।
অনুষ্ঠান শুরুর দু’ঘন্টা আগেই পৌঁছে গিয়েছিল ওরা,
কড়া রৌদ্রময় বিশাল খোলা মাঠে জনসমুদ্র, সারি সারি ফুলের মালা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কত নির্ভেজাল ভালবাসা,
স্বয়ং বিশ্বের মহান নেতাকে এক পলক দেখার আশায়, একটু সংবর্ধনা দেবার আশায় অপেক্ষায় প্রেমাস্বক্ত চোখগুলো মিটমিট করছে অক্লান্ত।
এখানে খোলা ময়দান,কত হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষের ভীড়,তবুও যেখানে কোন প্রতিপক্ষ নেই,নেই কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা,
আছে শুধু সম্মান, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, অনিন্দ্য প্রেম আর ভালোবাসা।
একটু পরে পুলিশের সাইরেন শুনা গেলে সংবর্ধনা সারির মাঝখানে ফুলের অঝরে বৃষ্টি দেখা যায়,
সাদা পাঞ্জাবির উপর কালো হাতকাটা কোর্ট পরা স্বয়ং মহান নায়ক হেঁটে এসেছে জনতার ভালোবাসার ভীড় ঠেলে।
মানুষতো কত হয়,কত রকমের হয়,
অথচ এই প্রথম একটি মানুষ দেখেছি,যাঁর মাঝে পুরটাই একটা নেতা,
শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা,
যাঁর কণ্ঠস্বর শুনে জেগে উঠে গায়ের কাঁটা!
দাদুর চশমার গ্লাসে স্পষ্ট ভেসে উঠেছে জীবন্ত একটা মহান নেতার ছবি,
দাদু কল্পনা রিলিজ করছে একে একে,আর আমি তার নীরব মগ্ন দর্শক।
নতুন করে আবার হুক্কার তামুকটা সাজিয়ে দিয়ে দাদুর দিকে এগিয়ে দিয়ে দাদুকে আবারও নিয়ে গেলাম সেই স্মৃতির ময়দানে,
যেখানে স্বয়ং মহান নেতা বসে আছেন।
তামুকের ফিল্টারটা মুখে দিয়ে দাদু আবারও বলতে শুরু করলেন_
বক্তৃতার পর্ব শেষ হয়ে গেলে সাংস্কৃতিকের পর্ব শুরু হবার আগে খাবারের জন্য বিরতি দেয়া হয়,সেইদিন প্রথম খাবারের পর মিঠাই গুলিয়ে খেতে পারেনি দাদু,তাই পাশের দোকান থেকে চিনি কিনে নিয়ে একমুঠ চিনি মুখে পুরে নিয়েছিল দাদুভাই।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবার আগে দাদু তাঁর আনা লিচুর উপহারটি বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেন,এবং দাদুর কাছথেকে উপহারটি পেয়ে বঙ্গবন্ধু খুব খুশি হয়েছিলেন।
তারপর শুরু হয় দাদুর টিমের ম্রোদের বাঁশির সাথে সাথে তালে তালে ঐতিহ্যবাহী নাচ, গান।
এখানে যত সংস্কৃতির টিম এসেছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা টিম হিসেবে দাদুর টিমটাই প্রাধান্য পেয়েছিল,
শেখ মুজিব নিজ হাতেই প্রতিযোগির একে একে সবাইকে পুরস্কার তুলে দিলেন,
সবশেষে আবেগে আপ্লুত হয়ে দাদুকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
চিরুনী দিয়ে যত্ন করে আঁচড়ানো চুল,
চোখে দাদুরটার মতো কালো ফ্রেমওয়ালা পাওয়ারী চশমা,
মাঝে মাঝে হুক্কায় তামুকের চুমুক,
দেখেই মনে হবে খুব সাধারণ সাদাসিধে একটা বিশাল আকৃতির মানুষ,
তিনি যেমনটা বিশাল, তারচেয়েও বিশাল তাঁর চিন্তা চেতনা আর ভালোবাসার আত্মত্যাগী হৃদয়।
তাঁর সরল চোখের দৃষ্টিজুড়ে জমা হয়েছিল আদিবাসীদের জন্য এক করুন অনুপ্রেরণা,
যেখানে স্বপ্নদেখা শুরু হয়,সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের বাস্তবতায় যে ভূমে অঙ্কুর উৎপন্ন হয়েছিল বা!।
দাদুর কণ্ঠস্বর ভাড়ী হয়ে আসে!
চোখ থেকে চশমাটা খুলে ভিজে যাওয়া পাপড়ি মুছে নেয় হাতের কবজিতে।
এভাবে কতক্ষণ নীরব ছিলাম মনে নেই,অনুভবে বুঝেছি ভেতর থেকে কিছু একটা ডুগরে উঠেছিল গলা অব্দি!।
কলমেঃ বিজয় ম্রো ___
——————————————–
(গরিবের দাম নাই,)
লেখকঃআবু ছায়েদ (মেম্বার)
০১/১২/২০২২ংই
ঘুরেফিরে দেখলাম কত,
বুঝলাম আমি অবিরত,
এই পৃথিবীতে আছে সবই,
শুধু গরিবের দাম নাই।।
বিটে বাড়ি নাই যাদের,
মানুষ বলে মূল্যায়ন হয় কি তাদের,
এই সমাজে হয়নি কখন ও
গরিবের মূল্যায়ন,হয় শুধু নির্যাতন।
আছে যাদের এই দেশে বাড়ি গাড়ি,
তাদেরই হয় এখন সমাজ দাড়ি,
ঘুরে গরীব প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি,
নিজের সংসারের মূল চাহিদায়।
মসজিদ মন্দির মাদ্রাসা যাই বল,
গর্তে হয় যে গরিবের দরকার,
সঠিক ভাবে পাইনি তাহারা,
তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন।
যতই তাকে ধন আর দৌলত,
সবাই যাইবে একই ঠিকানায়,
ধনবান ভাই আছেন যারা,
সুন্দর পৃথিবীতে থাকবেন না তারা।
এই দুনিয়া ছাড়বেন সবাই ভাই,
নিজের বিচার সঠিক করাটা চাই,
নইলে পড়বা রোজা আসরে ধরা,
করবেন না মাপ মালিক সাই।
দেখলাম গুরে গরীবের দাম নাই।