Breaking News
Home / Breaking News / ফরিদগঞ্জে মৃতদেহ কবরস্থ করতে বাধা “সমাজের আসল অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে ”

ফরিদগঞ্জে মৃতদেহ কবরস্থ করতে বাধা “সমাজের আসল অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে ”

আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ফরিদগঞ্জ:
ফরিদগঞ্জে মৃতদেহ কবরস্থ করতে বাধার ঘটনা ঘটেছে। বাধাদানকারী ৮ নং পাইকপাড়া ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম এর দাবী ওই ভূমি তার। বিরোধপূর্ণ ভূমিতেই আব্বাছ আলী মারা গেছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আব্বাছ আলীর স্ত্রী ও কন্যা বসবাস করছিলেন। ছেলে পারভেজ বলেছেন ইউপি সদস্য কর্তৃক তারা নানাভাবে প্রতারণা ও হয়রানির শিকার। এ নিয়ে বিরোধের খবর পেয়ে সাবেক মেয়র মাহফুজুল হক, পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ভূমির মালিকানার বিরোধের মিমাংসায় সালিসনামা হয়েছে। পরে কবরস্থ করা হয়েছে ফরিদগঞ্জ পৌর কবরস্থানে। শনিবার সকাল ১১ ঘটিকা নাগাদ এ ঘটনা ঘটেছে ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার কাছিয়াড়া গ্রামে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারী কলেজের পশ্চিম দিকে পাকা সড়কের পাশে কয়েক যুগ বসবাস করছিলেন আব্বাছ আলী ও তার পরিবার সদস্য। কয়েক বছর যাবত তিনি অসুস্থ ছিলেন। তিনি মানসিক রোগে ভূগছিলেন ও অসুস্থ্য ছিলেন। শনিবার সকালে আব্বাছ আলী মারা যান। তাকে দাফনের জন্য তার মালিকানা ভূমিতে কবর খোড়ার কাজ চলছিলো। খবর পেয়ে ৮নং পাইকপাড়া (দক্ষিণ) ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বাধা দেন। এর ফলে, উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচন্ড বিরোধ তৈরি হয়। খবর পেয়ে সাবেক মেয়র মাহফুজুল হক, থানা পুলিশ, সংবাদ কর্মী, ডিএসবি সদস্যরা উপস্থিত হন। সাইফুল মেম্বার দাবী করেন আব্বাছ এর কাছ থেকে ওই ভূমি তিনি কিনে নিয়েছেন। কিন্তু, তার দাবী মানতে চান না আব্বাছ এর পরিবার সদস্যরা। তাদের দাবী ভূমি ক্রয় বিক্রয় সঠিক নয়।

জানতে চাইলে আব্বাছ আলীর ছেলে পারভেজ জানান, আমার বাবা ছিলেন মানসিক রোগী। কিভাবে দলিল রেজিস্ট্রি হবে। তবে, ভূমি নেয়ার জন্য সাইফুল মেম্বার আমাকে দিয়ে, “আমার সঙ্গে নানা কৌশল করেছেন ও ফাঁদ তৈরি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে ফাঁদে ফেলে ১, ২, ৩, ৫, ১০ হাজার টাকা করে আমাকে দিয়েছেন। এভাবে সর্বমোট সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়েছেন”। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মেইন সড়কের পাশে আট শতাংশ জমির মূল্য কতো। তিনি আরও বলেন, “এ ভূমি ও আমাকে নিয়ে নানা ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। আমাকে মাদক সেবন করতে টাকা দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। অনেকের চরিত্র দেখেছি। সমাজের আসল অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। আমাদের মতো নিরীহ পরিবারের ছেলেরা ধ্বংস হয় জেল খাটে”।

এলাকাবাসী বলেছেন, আব্বাছ দীর্ঘ বছর মানসিক রোগে ভূগছিলেন। অসুস্থ হয়ে তার জমির ওপর নির্মিত ঘরে পরেছিলেন। স্ত্রী ও কন্যা অন্যত্র চলে গেছে। তার ছেলে পারভেজ তাকে দেখাশোনা করতো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রতিনিধি জানান, আব্বাছ অন্তত ১২-১৪ বছর পাগল (মানসিক রোগী) ছিলো।

এ বিষয়ে সাইফুল মেম্বার বলেন, আমি আব্বাছ এর কাছ থেকে সাবরেজিস্ট্রি করে জমি ক্রয় করেছি। এতে কোন ঘাপলা নেই। তিনি অসুস্থ থাকলে সাব রেজিস্ট্রার রেজিস্ট্রি করলেন কিভাবে। আমার জমি আমার দখলেই আছে। আমি এখন ঢাকা আছি। ঢাকা থেকে ফিরে কাগজপত্র দেখাবো।

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন বলেছেন, খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। লাশ ফেলে রাখা তো যায় না। তাই সাবেক মেয়রসহ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন পৌর কবরস্থানে দাফন করতে। ওখানে (বিরোধপূর্ণ জমিতে) ওরাই (আব্বাছের পরিবার সদস্য) বসবাসরত আছে। ওদের কাছ থেকে দখল নেয় না কেনো সাইফুলই বলতে পারবে। মেয়র বলেছেন, আব্বাছ পাগল ছিল। এ রেজিস্ট্রি গ্রহণযোগ্য কি না এটা পর্যালোচনা করে দেখা হবে।

সাবেক মেয়র মাহফুজুল হক বলেন, বিরোধের খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে গেছি। সকলের মতামতের ভিত্তিতে আব্বাছ আলীকে পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তবে, জমি ক্রয় করলেও টাকা পয়সা লেনদেনে ঘাপলা আছে। আমি মেয়র থাকাকালীন সাইফুল মেম্বারকে ডেকেছি বিষয়টি মিমাংসার জন্য। তিনি আসেননি। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছে। ওই আট শতাংশ জমির মূল্য অন্তত ৪০ লাখ টাকা। ওই ছেলেকে ৫, ১০, ২০ হাজার টাকা করে দিয়েছে। সে মাদক সেবন করেছে। এ বিষয়ে একটি সালিসনামা হয়েছে। আমরা সাত দিনের মধ্যে বসবো বলে সাব্যস্ত হয়েছে।

পুলিশের এস.আই. রুবেল ফরায়জি, আনোয়ার হোসেন, আবদুল কুদ্দুছ ও সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে যান। এস.আই. আনোয়ারকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে কথা হয় আবদুল কুদ্দুছ এর সঙ্গে। তিনি জানান, আমরা শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে সহায়তা করেছি। সাত তারিখে বসার একটি সিদ্ধান্ত করেছেন এলাকাবাসী।

Powered by themekiller.com