Breaking News
Home / Breaking News / চাঁদপুর কচুয়ায় রহস্যজনক আগুনে এক প্রবাসীর স্ত্রীর মৃত্যু

চাঁদপুর কচুয়ায় রহস্যজনক আগুনে এক প্রবাসীর স্ত্রীর মৃত্যু

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চাঁদপুরের কচুয়ায় রহস্যজনক আগুনে ঝলসে যাওয়া প্রবাসীর স্ত্রী ১৩দিন পর ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা বার্ডেম হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বুধবার (২৫ মে) দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বিকালে এ্যাম্বুলেন্স যোগে তার লাশ একই উপজেলার আমুজান গ্রামের দর্জি বাড়ি পিত্রালয়ে আনা হলে পরিবারের স্বজন্দের মধ্যে এক হৃদয় বিধারকের দৃশ্য সৃষ্টি হয় এবং শোকের ছায়া নেমে আসে। এ দিনই বাদ-মাগরিব জানাজা শেষে পিত্রালয়ের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সরজমিনে জানা যায়, কচুয়া উপজেলার ১১নং গোহাট দক্ষিন ইউনিয়নের খাজুরিয়া লক্ষীপুর গ্রামের মাইজের বাড়ির জনৈক জামাল হোসেনের ছেলে প্রবাসী শাহাদাত হোসেনের স্ত্রী দু’সন্তানের জননী নাছিমা (৩৫) গত (১২মে) দিবাগত রাত অনুমান মধ্যরাতে শ্বশুরালয়ে তার নিজ কক্ষে রহস্যজনক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে নাছিমার শরীর ঝলসে যায়। আগুন লাগার কারন বা ঘটনা সম্পর্কে কেউ কোন তথ্য দিতে পারছেনা। বিষয়টি রহস্যজনক বিধায় এলাকায় নানান গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

নাছিমার কনিষ্ঠ কন্যা রিমু (১৪) জানায়, আমার মা ওইদিন রাতে আমাদের বসত ঘরের মেঝেতে আর আমি খাটে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ মায়ের চিৎকার শুনে জেগে উঠে দেখি মায়ের ,শরীরের পরিধেয় কামিজে আগুন। আমি তাৎক্ষণিক বাথরুমে গিয়ে পানি নিয়ে এসে দেখি মায়ের সারা শরীর ধোঁয়ায় আবৃত। তবুও গায়ে পানি ঢালি। আমার ডাক চিৎকারে লোকজন ছুটে আসে এবং তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, তাদের ডাক চিৎকার শুনে আমরা দৌঁড়ে যাই। তখন তাদের ঘরের দরজা বন্ধ ছিলো। রিমু দরজা খুলে দিলে আমরা ঢুকে দেখি সারা কক্ষে ধোঁয়া আর ধোঁয়া আগুন নেই। শাহাদাতের স্ত্রী ধোঁয়ার মাঝেখানে বসে রয়েছে এবং দেখি তার বাঁ হাত আগুনে পোড়া, কামিজের এক কোণা ও সেলোয়ারের পিছনের কিছু অংশে পোড়া রয়েছে। আমরা সিজার দিয়ে জামা কেটে নতুন জামা পড়ানোর সময় দেখি নাছিমার বুক, পিঠসহ সারা শরীরে আগুনের ফোস্কা পড়ে গেছে। শরীরে পরিধেয় বস্র আবৃত থেকে সারা শরীর কি ভাবে ঝলসে যায়? আমরা তা বুঝতে পারছিনা এবং জীবনেও আগুন ছাড়া এভাবে ঝলসে যাওয়ার দৃশ্য দেখিনি বা শুনেনি। তারা আরও জানান, শাহাদাতের স্ত্রী ও আরফিরে স্ত্রী তারা একই বোন। প্রতিনিয়ত তাদের দু’বোনের মধ্যে ঝগড়া হতো। এঘটনার পূর্বে নাছিমার কাছে কে বা কারা ২০ থেকে ২৫টি চিঠি দেয়। যাতে লিখা ছিলো “তুই এখান থেকে চলে যা, তুই এখানে থাকিস না, তোকে হত্যা করা হবে, তোর মেয়েদেরকেও হত্যা করা হবে” কে এমন লেখা যুক্ত চিঠি দিতো তা আমাদের জানা নেই। এলাকাবাসী আরও জানান, শাহাদাতের ছোট ভাই আরিফের সাথে নাছিমার পরকীয়া সম্পর্কের কথা নিয়ে এলাকায় রয়েছে যথেষ্ট গুঞ্জন। আরিফ প্রথমে কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার দীঘলিয়া গোবিন্দপুরে বিয়ে করেন। ওই স্ত্রী আরিফের সাথে নাছিমার আপত্তিকর দৃশ্য দেখে বাবার বাড়ি চলে যায় এবং আরিফের সংসার না করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে তাদের সংসার ভেঙ্গে যায়। বহু সালিশ দরবারের মাধ্যমেও ওই সংসার টিকানো সম্ভব হয়নি। এরপর আলোচনা সাপেক্ষে নাছিমা তার আপন ছোট বোন পাখিকে আরিফের কাছে বিয়ে দেয়। আরিফের দ্বিতীয় বিয়ের পরও নাছিমা-আরিফের পরকীয়া আগের মতই চলতে থাকে।

বিষয়টি নাছিমার ছোট মেয়ে রিমু জানতে পারলে মা-মেয়ের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সেদিন রাতে রহস্যজনক আগুন সম্পর্কে রিমু সব কিছুই জানে। কিন্তু সে তা প্রকাশ করছেনা। এটা কি পরিকল্পিত হত্যা নাকি আত্মহত্যা এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে আলোচনার ঝড়। মৃত্যুর পর থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে চাইলে অর্থ লোভী কিছু মানুষের কারনে এমন মৃত্যুটি রহস্যাবৃত থেকে যায়।

নাছিমার দেবর আরিফ জানান, ভাবির সাথে কারও কোনদিন কোন শত্রুতা ছিলোনা। কি ভাবে, কে বা কারা এধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে একটি চক্র আমাকে ফাঁসাতে চাইছে। যা আদৌ সঠিক নয়। আমি আগুন লাগার পরপরই ভাবীকে প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার অবস্থার অবনতি দেখে তাকে ঢাকা রেফার করে এবং ২৫ মে দুপুরে তিনি মারা যান। আরিফ হাসপাতালে মৃত্যুর পর পোস্ট মর্টেম করেছে বলে দাবী করলেও স্থানিয় সংবাদ কর্মিরা তার কাছে হাসপাতালের তথ্য চাওয়া হলে তা দিতে বাধ্য নন বলে জানান।

কচুয়া থানার এসআই নাজিম উদ্দীন জানান, ভিকটিম পরিবার থানায় একটি অভিযোগের মাধ্যমে আগুন লাগার বিষয়টি অবহিত করলে আমরা সরজমিন গিয়ে নাছিমার পরিধেয় আংশিক পুড়ে যাওয়া বস্ত্র উদ্ধার করি। নাছিমা মারা যাওয়ার বিষয়টি তারা আমাদেরকে জানিয়েছে এবং ঢাকায় পোষ্ট মর্টেম করেছে বলেও জানান। নাছিমার পরিবারের কেউ মামলা করলে আমরা সর্বাত্মক আইনী সহযোগিতা করবো।

নাছিমার মৃত্যু রহস্য উন্মোচনের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন শৃংখলা বাহিনীকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানান এলাকাবাসী।

Powered by themekiller.com