Breaking News
Home / Breaking News / কলামিস্ট রিটন মোস্তফা রিটন এর “শান্তির মা কি সত্যিই মারা গেছে?”

কলামিস্ট রিটন মোস্তফা রিটন এর “শান্তির মা কি সত্যিই মারা গেছে?”

* শান্তির মা কি সত্যিই মারা গেছে? *
– রিটন মোস্তফা

কখনও কখনও ভীষণ কষ্ট বা অশান্তির মধ্যে দীর্ঘদিন কাটানোর পর একটা প্রশ্ন অধিকাংশ ব্যক্তির ভিতরে বা মগজে জন্ম নেয়, প্রশ্নটি তার কাছে আছে কিন্ত উত্তর তার ধরা ছোয়ার বাহিরে। ঐ মুহুর্তে সে জীবনের শান্তির ব্যাপারে প্রচণ্ড অশহায় এবং হতাশাগ্রস্থ। মাঝে মধ্যেই একটু শান্তির কথা ভেবে বার বার নিজেকেই প্রশ্ন করতে থাকে উত্তর নেই জেনেও, আর সেই প্রশ্নটি হলো- ” আসলে এই জগতে শান্তি বলে কি কিছু আছে ? “।

যারা এই ধরণের প্রশ্ন নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে জীবন কিটান, তাদের সংখ্যা কিন্ত কম না এবং এটা যে শুধুমাত্র গরীব, অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে থাকেন তারাই নন, অঢেল সম্পদ আছে কিন্ত তারা কখনোই মনের মধ্যে শান্তি অনুভব করেন না এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক। টেনশন, হাই প্রেশার, টাকা বা সম্পদ হারানোর আতঙ্ক এমনকি নিজ পরিবারের লোকজনের সাথেও ভালোমত কথা বলতে পারেন না, মনের মধ্যে সবসময়ই একটা সন্দেহ কাজ করে, আর সেটা হলো, আমার সম্পদের জন্য এরাও কি আমার সাথে থাকে? আমাকে তারিফ করে? আমাকে ভালোবাসে? এবং এই রকম মানসিক অবস্থার সম্পদ শালী মানুষের জীবনেও শান্তি বলে কিছুই থাকে না, থাকে শুধুমাত্র ঐ একটা প্রশ্ন, ” ” আসলে এই জগতে শান্তি বলে কি কিছু আছে ? “।

আপনার কাছে কি উত্তর আছে? যদি থাকে, তবে এই উত্তর পজেটিভ বা হ্যাঁ হয় তবে কতক্ষণ পর্যন্ত আপনি এই সন্তষ্টির মধ্যে থাকেন? এর উত্তর যদি ইতিবাচক হয় তো আপনার জন্য এই পোস্ট না।

এই লেখাটা ঐসমস্ত মানুষের জন্য, যাদের কাছে শান্তির থেকে শান্তি কোথায় আছে এর উত্তর খুঁজে বেড়ানোটাই জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। কারণ তারা শান্তির নামটা অন্যের মুখে শুনলেও নিজেরা কখনোই অনুভব করেননি। আর করলেও সেটা জীবনের এত এত ক্ষুদ্র সময়ের জন্য যে সেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুখানুভূতিগুলোও তাদের জন্য আরও অশান্তির কারণ। কেননা, তাদের কাছে ঐ বাপরটি এরকম যেন কোন চিকেন ফ্রাই তাকে খেতে দেওয়া হলো ঠিকই কিন্ত সেটা সে তৃপ্তির সাথে ভোজনের আগেই কেড়ে নেবার মতই। আসলে এদের কাছে শান্তি একটা স্বপ্ন যেটা সে দেখে আর অশান্তি হলো তার অস্তিত্ব যেটাতে সে পুড়তে থাকে। এবং অশান্তির মধ্যেই জীবন যাপন করতে করতে সে শান্তির খোঁজে অস্থির থাকে অধিকাংশ সময়। আসলে এই শান্তিটা থাকে কোথায়? একে কি সত্যিই অর্জন করা আমাদের জন্য খুবই জটিল এবং কঠিন কোন বিষয়?

এই দুটো প্রশ্নের আমার কাছে এক সাথে উত্তর হলো কখনোই অসম্ভব না। পাশাপাশি আরও স্পষ্ট করে যদি বলি, তাহলে বলতে পারি যে এই শান্তি একটা অনুভূতির বিষয় এবং সেটা অন্য দূরে কোথাও না, আপনার মগজে বসে আছে কিন্ত আপনি খুঁজছেন অন্য কোথাও। আর এটাই হলো সমস্যা।

আগেই বলেছি যে শান্তি একটি অনুভূতির ব্যাপার এবং সেটা অর্জনের জন্য আসলে তেমন কোন ঝামেলাই নেই যতটা ঝামেলা আমরা নিজেরাই না বুঝে অন্য কোথাও খুঁজে তৈরি করতে থাকি এবং অশান্তির মাত্রাটাকে বৃদ্ধি করতে থাকি।

অনুভূতির তৈরি হয় আপনার চেন্তা, ভাবনা, ইমোশনাল নিয়ন্ত্রণ বা নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং আপনার আমার মেনে নেওয়ার উপরেই। এই পুরো কর্মটাই লুকিয়ে আছে আমাদের নিজস্ব আত্ম নিয়ন্ত্রণ বা নিজেকে আশ্বস্ত করার উপরেই। অর্থাৎ অনুভূতির জন্ম আমাদের অভন্তরীণ একটি বিষয় যা আমাদের ইমোশনাল এবং এর সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য বিষয় গুলোর নিয়ন্ত্রণ বা ইতিবাচক ব্যবহার।

ইমোশনাল বিষয়গূলোর কিছু নমুনা দেবার পর বললে বুঝতে পারবেন শান্তি আপনার হাতের তালুর অপজিটেই আছে শুধুমাত্র অন্য হাতটি ব্যবহার করে সেটাকে হাতের তালুতে আনার মত একটি সহজ ব্যাপার মাত্র।

রাগ+জিদ+হিংসা+মানা না মানা+ ইত্যাদির = ইমোশন বা আবেগ।

এখানে শান্তি অর্জনের আলোচনা যেহেতু করছি সেজন্য অন্য বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে মাঝ খানে দেখুন একটি শব্দ রেখেছি সেটাকে সিরিয়াসলি নিন ” মানা বা না মানা অর্থাৎ মেনে নেবার ক্ষমতা। এই মেনে নেবার ক্ষমতা অর্জনের জন্য নিজেকে নিয়ে কিছুদিন কাজ করুন, দেখবেন জীবনের শান্তির জন্য যে হাহাকার যে দৌড় ঝাপ কপাল চাপড়ানো সেটার আর দরকার পড়বে না। আপনি জীবনের সবগুলো ক্ষেত্রেই শান্তি অনুভব করবেন। অর্থৎ আপনার ভিতরে অশান্তির অনুভূতির স্থানটাকে শান্তির অনুভূতি আস্তে আস্তে দখলে নিয়ে নিবে। ছোট থেকে বড় যে কোন বিষয়ে আপনি অবশ্যই শান্তি অনুভব করতে পারবেন এর নিশ্চয়তা আমি দিলাম।

কি কি করবেন এই ক্ষেত্রে? না আপনাকে এই শান্তি অর্জনের জন্য আমি আপনাকে অসংখ্য কাজের ফীডব্যাক দেব না, একটি মাত্র ফীডব্যাক আপনার জন্য আমার থাকবে। আর সেটা হলো জীবনের সব কিছুতেই ইতিবাচক হতে শিখুন এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো, যে কোন বিষয়ের ব্যাপারে অতিরিক্ত চাহিদাকে গলা টিপে হত্যা করুন, মেনে নিতে শিখুন। অল্পতেই যারা সন্তষ্ট হতে শিখেছে শুধুমাত্র তারাই এই পৃথিবীর বুকে অঢেল কিছু না থাকা স্বত্তেও অত্যন্ত সুখের সাথে, শান্তির সাথে জীবন যাপন করছে। লেখাটি আর বড় করবো না। শেষ করার আগে একটি ছোট্ট উদাহরণ দিয়েই ইতি টানবো, এতে আপনি নিজেই বিষয়টিকে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।

প্রচন্ড রোদে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রিক্সা চালিয়ে কখনও কোন রিক্সা চালকে দুপুরের আলু ভর্তা ভাত খেয়ে গাছের নীচে ছায়ায় একটা ইট রেখে এবং গামছা বিছিয়ে গভীর নিদ্রার দৃশ্য হয়ত কখনও দেখে থাকবেন। পাশাপাশি এটাও দেখে থাকবেন, দশ তলা রাজ প্রাসাদের মত বাড়িতে বাড়ির কোটিপতি মালিক প্রায় রাতে তার ব্যক্তিগত ডাক্তারকে কল করে বলছে: বুঝতে পারছিনা ডাক্তার, তোমার দেওয়া প্রেশারের ঔষধ আর হাই পাওয়ার ঘুমের ঔষধেও কেন যেন কাজ করছে না। আজকেও দেখ ঘুমাতে পারছি না। অস্থির অশান্তি লাগছে। কি করি বলতো ডাক্তার….?”

ইতিবাচক হতে শিখুন।
অল্পতেই তৃপ্ত হতে শিখুন।
অশান্তির অনুভূতির মৃত্যু ঘটে আপনার জীবনে শান্তির সোনালী সূর্য অবশ্যই উদয় হবে। আর এটা অবশ্যই আপনি খুব সহজেই অর্জন করতে পারবেন।

Powered by themekiller.com