Breaking News
Home / Breaking News / কবি মোঃ বিনয় আমিন এর গল্পের শেষ পর্ব “নৈস্বরগিক নিবেদন “

কবি মোঃ বিনয় আমিন এর গল্পের শেষ পর্ব “নৈস্বরগিক নিবেদন “

” নৈস্বরগিক নিবেদন ” ৩য় খন্ড ( সমাপনি খন্ড )
লেখকঃ মোঃ বিনয় আমিন ।
—- সত্যি ! বই মেলায় চার জন বান্ধবীকে সাথে নিয়ে হাজির হয়েছিল ইভা । দূর থেকে আমাকে দেখে মিষ্টি হাসি উপহার দিয়েছিল । মেয়েদের হাসি যে এতো সুন্দর তা আমি কোন দিন খেয়াল করিনি । কিন্তু আমার গল্পে এই হাসির কত বর্ননা আছে ! হায়রে কপাল ! ওরা সবাই আমার বই কিনেছিল তাতে মন্তব্যসহ আমার সই দিতে হয়েছিল । বই মেলার বাহানা ধরে ইভা প্রায় আসতে থাকে । কখনো একা বা কখনো বান্ধবী থাকে । কখন যে আপনি থেকে তুমিতে এসে দাঁড়িয়েছে টের পেলাম না । বই মেলা ছাড়াও বাইরে যেতে হচ্ছে । সহরাওয়ার্দি উদ্যানে গিয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ চলতে থাকে । বেশীর ভাগ সময় সে বলে আমি শুনি । ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করি , কখনো চটপটি – ফুচকা , কখনো ঝাল – মুড়ি , কখনো বাদাম -বুট খাই , আবার চা – বিস্কিট খাওয়া হয় । দুজনের মধ্যে ভাব – ভালবাসা বিনিময় হয় । তারপর দুজনেই স্থির করি আমরা বিয়ে করবো । কিন্তু ইভার আব্বা , বিশেষত আম্মা রাজি নন । তারমতে লেখা লেখি করা কোন স্থায়ি পেশা হতে পারে না , শখ – টখ হতে পারে , আমার মত ভবঘুরে লোকের সাথে ইভার মত শিক্ষিতা সুন্দরী মেয়ের বিয়ে হতে পারে না । যেখানে তাঁর বড় দুবোনের বিয়ে হয়েছে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে । সুতরাং আমার মত অতি সাধারণ লোকের সাথে ইভার বিয়ে দিতে তিনি রাজি না । আমরা শেষে বাধ্য হয়ে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়েটা সারি । দোয়ার জন্যে ইভাদের বাসায় যাই , আম্মা ছাড়া সবাই মেনে নেন । আমাদের সাত বছর বিবাহিত জীবনে একটি মাত্র মেয়ে সন্তান শ্রেয়াকে নিয়ে আমরা সুখী শ্রেয়া হবার পর শাশুড়ি আমাদের বিয়ে মেনে নেন ।
বাসা থেকে বেড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে সহরাওয়ার্দী উদ্যানের টি এস সি দিকে মুখ করে বসে থাকি । এই বেঞ্চে আমি আর ইভা কতদিন বসেছি । কখনো বৃষ্টিতে ভিজেছি । কখনো সে ‘ বাদাম ওয়ালা , এদিকে আসো” বলে ডেকেছে । আজ আমি একা , ভীষণ মন খারাপ করে বসে আছি । আমার লেখা বের হচ্ছে না । লেখক হিসেবে আমার আবেদন ফুরিয়ে যাচ্ছে ? নাকি গেছে ? অদ্ভুত তো ! আমি জানি বড় বড় লেখকরা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লিখে গেছেন । আমার তো এখনো অনেক সময় আছে । আমিতো এখনো ততো বুড়িয়ে যাই নি । তা হলে এমনটা হচ্ছে কেন ?
এর মধ্যে বাদাম বুট ওয়ালা দুইবার বিরক্ত করে গেছে । , চা- কফি ওয়ালা একবার , ঝাল মুড়ি ওয়ালা একবার , ভিক্ষুক তিনবার , পান সিগারেট ওয়ালা দুই বার , চটপটি ওয়ালা একবার । অন্যমনস্কভাবে ওদেরকে দেখতে থাকি । হঠাৎ আমার মনের ভেতর কিসের জানি ঝলকানি দিয়ে উঠে । আরে একি ! আমার সামনেই তো আমার গল্পের প্লট ঘোরা ফেরা করছে । আজ এদেরকে নিয়ে লেখলে কেমন হয় ? ওরা একটু পর পর আবার আসবে । ওদের নিয়ে তো কেউ লিখে নি । আজ আমি লিখবো ওদের হাসি কান্না , সুখ দুঃখ — এই পার্কে অনেক আজে বাজে মেয়ে সন্ধার পর ঘোরা ফেরা করে তাদের নিয়েও লিখবো । যদিও ওদের কে নিয়ে অনেকে অনেক কিছু লিখেছে কিন্ত বাদাম বুট ওয়ালা জসিম মিয়া , চা বিক্রেতা মুবারক , চটপটি ওয়ালা ইদ্দ্রিস আলী , ঝাল মুড়ি ওয়ালা আজাদ , পান সিগারেট বিক্রেতা জব্বর আলী , একজন বৃদ্ধ ভিক্ষুক হেমায়েত মিয়া । গল্পের প্রয়োজনে বার বার এনেছি কিন্তু স্ববিস্তারে লিখিনি কখনো — আজ লিখবো ।
টি এস সি মোড়ে গিয়ে তিন চার দিস্তা সাদা কাগজ আর এক ডজন বলপেন কিনে আনি । সাথে একটা রাইটিং বোর্ড ও কিনি । প্রথমে বাদম – বুট ওয়ালা জসিমকে দিয়ে শুরু করি । ওদের জীবন কাহিনী অল্প পরিসরে বল পেনের ডগায় চিকন দাগে লেখা বের হতে থাকে ! কে বলেছে আমি শেষ হয়ে গেছি ? এই তো লেখা বের হচ্ছে । সাবলীল গতিতে আমার লেখা এগিয়ে চলছে । এর মধ্যে ওরা এসে বিরক্ত করেছিল , একটু হেসেও ওদের বিদায় করে দিয়েছি । কেউ আবার ঘ্যনের ঘ্যানের করেছে । কেউ আবার কিছুক্ষণ বসে থেকেছে । তাতে আমার লেখায় বিন্দু মাত্র ব্যাঘাত ঘটেনি বরং ওদের আচরণ কাছে থেকে উপলব্দি করেছি । দশটি বড় গল্প শেষ করে যখন উঠে দাঁড়াই তখন চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে । মাথা উচু করে পাণ্ডুলিপি গুলো সুতায় বেঁধে , বগলে চেপে বাসার দিকে এগুতে থাকি । আর ভাবতে থাকি এই পৃথিবী চেয়ে দেখো আমি এখনো ফুরিয়ে যাই নি । শেষ ঃ মোঃ বিনয় আমিন

Powered by themekiller.com