Breaking News
Home / Breaking News / কবি নির্মল দাশ ঝুঁটন এর ” অহমিকা”

কবি নির্মল দাশ ঝুঁটন এর ” অহমিকা”

অহমিকা
নির্মল দাশ ঝুঁটন
১২/১২/২০২১ইং

চল না’রে ভাই আমরা অন্য কোথাও যা-ই, এখানে আর এক মুহুর্ত মন টিকছে না- অহঃ কী যে অসহ্য তবুও তুই-!
না ভাই আমি আর পারছি না।এই জনসমুদ্রের কোলাহলে নিজেকে বেমানান এরুপ -না ভাই আমি সত্যিই যাচ্ছি -। কী আশ্চর্য -! আরে ভাই আমি তোকে কিছু বলছি-!
তুই কী শোনছিস আমাকে? দেখ, সুজন এখন কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে, কিছু তো একটা বল না’রে ভাই?
এ্যাতোটা পঁচা, দূর্গন্ধ যেন গবাদিপশুর মৃতদেহের বেশ কয়েক দিনের। দম তো প্রায় বন্ধ হয়েই আসছে, চল’না ভাই- আমরা বরং ঐ-যে -ঐ হিজল গাছটি দেখতে পাচ্ছিস ওখানেই-যাই।
আহারে, কী অপরুপ মনোরম নির্জন পরিবেশের সাথে গাছটি দাঁড়িয়ে আছে – স্নিগ্ধ ও নির্মল বাতাস বইছে পাশে একটি নদীও বোধ হয় আছে, চল না’রে ভাই ওখানেই যাই – তুই তো জানিস এসব আমার একদম ভালো লাগে না। যে যার মতো করে নাচছে, গাইছে, দুলতে দুলতে আবার কেহ মাটিতে গড়াচ্ছে। আর কি- জানি -! এক সুরে সবাই সুর মিলিয়ে অঙ্গ ভঙ্গিতে মাখামাখি কি – নাজেহাল অবস্হা রে ভাই-!
এই তোদের গ্রাম, এই তোদের ঈশ্বর-? দেখ সুজন আমি বলছি এটা অশুভনীয়, এটা না মানা আমি- কেমনডা লাগে জানি ছিঃ – একজন অন্যজনকে ধূলো ছিটাচ্ছে আবার কেহ কাদামাখা কপালে তিলক টানছে- কি আজব রে ভাই তোদের এই বন্য পরিবেশ?
জানলে হয়তো এরকম একটা জগন্য গ্রামে আমি পদার্পণ করতাম না-। কি আছে তোদের এই আদিম নগরে-! না আছে ভালো একটা মন্দির – না মসজিদ-!
আরে এখানে ঈশ্বর থাকবে তো দুরের কথা কোন ভদ্র লোক এখানে থাকবে না।যতসব ল্যাংটা ছেলেপেলে উদোম আর পাঁটা কেশি বৃদ্ধা বনিতার এলোমেলো দল ছিঃ-! এক একজনের মাথায় যেন কদম ছাঁট। কালো ঝিম তাল গাত্রে কী অদ্ভুত রে ভাই যেন ভূতের গল্পে’র ভূত -!

ব্যাস – অনেক – অনেক হয়েছে সুজয় -এবার অন্তত নিজের বাক্যের প্রতি একটু যত্নশীল হও। আরে ভাই তুই আমার বন্ধু এটা ভাবতে ঘৃণা হলেও আমি আনন্দিত।
আমি লজ্জিত না বরং গর্বিত কারণ তুই আমার চর্ম চোখ খুলে দিয়েছিস। বুঝিয়ে দিয়েছিস গ্রাম এবং শহরের বৈষম্য -শিক্ষা দীক্ষা ও নৈতিকতারও তফাৎ। নিজের পায়ের তলার মাটিকে নিজের বলে দাবি করা যায় না- এরুপ দৃষ্টান্ত মূলক জ্বলজ্বলন্ত প্রমাণ তুই নিজেই – সুজয়-! মাকালকে ফল বলা যায় তবে দেহের কার্যকরী চাহিদা এর দ্বারা পুরণ করা যায় না। কী বলে ছিলে-উদোম তরুণ তরুণী আর পাঁটাকেশি বৃদ্ধা বনিতা- তবে হে এরা মুখোশধারী কিম্বা কুৎসাকারী না – এরা উদার কোমলপ্রাণ মুক্ত মনা। এরা পোশাকে ভদ্র না হলেও রক্তচোষা দানব না, এটা নিঃসন্দেহে এরা মানুষ না হলেও দাম্ভিক না এক একজন দেব সমতুল্য মুক্ত-স্বাধীন, মানবতার ফেরিওয়ালা। ওদের বিবেকের বানী চিরন্তনীতে নিরবে কাঁদে। যা তোদের যান্ত্রিক শহরে নেই দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য।
তবে তোর ঈশ্বর হয়তো কোন্ প্রতিমায় বা মন্দিরে কিন্তু ওদের ঈশ্বর বিশ্বাসে-হৃদয় নির্গত মানুষের অদম্য আগ্রহের সেবায় নিজেকে খুঁজে তথা ঈশ্বরকে।
হয়তো-বা তোর আল্লাহ তোর মসজিদে কিন্তু ওদের আল্লাহ তোর মতো মানুষের সেবায় – মানুষের মাঝেই খুঁজে – অহিংসার কপাট খুলে অন্তর্নিহিত মানবতার মিছিলে।

এই মাটি-ই ওদের মা, ওদের প্রাণের স্পন্দন- মাটি আর মানুষের সম্পৃক্ততাই খুঁজে ওরা ওদের অমৃত শিথিল ভালোবাসা। হয়তো তোদের ইঁট পাথরেও ওদের শরীরের ঐ দূর্গন্ধটা ফুটে আছে একটু শুঁখে নিস।
কোন্ কাকতালীয় নয় ওদের মনোভাবে, অহিংসা’ই ওদের পরম পূজনীয় সংস্কৃতি।

জনসমুদ্র ওটাই হচ্ছে ওদের এক্যতান, মহাশক্তির, মহামিলন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অটুট বন্ধন।
প্রয়োজনে আগ্নেয়গিরি জ্বলন্ত শিখার এক একটা পুলকি। ভয় দেখাচ্ছি না চেষ্টা করে দেখতে পারিস,
এই মৌচাকে ঢিল ছুড়ে-৷ একটু ভালোবাসা দিস শুন্য ফিরতে হবে না পূর্ণতাই পাবে এক সিন্ধু সম-।।

Powered by themekiller.com